আবারো বিচারক সংকটে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালত
আবারো চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে বিচারক সংকটের কারণে দীর্ঘদিন ধরে মামলার কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ির দুর্নীতির মামলার বিচার কার্যক্রম পরিচালিত হয় এই আদালতে। তবে বিচারক না থাকায় বিচারপ্রার্থীদের হতাশার পাশাপাশি দুর্নীতিবাজদের জন্য সৃষ্টি হয়েছে সুবিধার পরিবেশ।
প্রসঙ্গত গেল ৬ বছরে এই আদালত ২৮ মাস বিচারকশূন্য ছিল। সর্বশেষ ৬ মাস বিচারক ছাড়াই চলেছে আদালত, যা বিচারকাজের গতিকে শিথিল করেছে। সর্বশেষ বিচারক কবির উদ্দীন প্রামাণিক দায়িত্ব নেওয়ার পাঁচ মাসের মধ্যেই বদলি হয়েছেন, ফলে ফের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। বর্তমানে চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ মো. সাইফুল ইসলাম ভারপ্রাপ্ত বিচারকের দায়িত্ব পালন করলেও নিয়মিত বিচারক না থাকায় মামলার কার্যক্রমে গতি আসছে না।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে বর্তমানে ৬০৮টি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে দুর্নীতি ও অর্থপাচারের মামলা রয়েছে ৩৪৬টি, আর ২৬২টি বিভিন্ন আইনে দায়ের হওয়া দায়রা ও সিভিল মামলা।
এ বিষয়ে আদালতের সরকারি কৌঁসুলি কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাভলু বলেন, “বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দুর্নীতির মামলা বিচারাধীন। বিচারক বদলির ফলে বিচারকাজের গতি কমে গেছে। দ্রুত বিচারকের শূন্য পদ পূরণ না হলে বিচারপ্রার্থীদের হতাশা আরও বাড়বে।”
নির্ভরযোগ্য তথ্য অনুযায়ী বহুল আলোচিত রেলওয়ের ‘কালো বিড়াল’ কাণ্ডের মূলহোতা সাবেক মহাব্যবস্থাপক ইউসুফ আলী মৃধাসহ তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির ১১টি মামলা এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। এগুলোর মধ্যে ২০১২ সালে দায়ের হওয়া টিকেট ইস্যুয়ার এবং টুল কীপার নিয়োগ সংক্রান্ত অনিয়মের মামলা রয়েছে। এছাড়াও টেকনাফের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির বিরুদ্ধে ৪৩ লাখ ৪৩ হাজার ৯৯৪ টাকার সম্পদ গোপন ও ৬৬ লাখ ৭০ হাজার টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০০৭ সালে দায়ের হওয়া মামলাটিও এখনো চলছে। ২০২০ সালে অভিযোগ গঠনের পর ২০২২ সালে হাইকোর্ট তার আপিল খারিজ করে দেয় এবং সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। তবে পুলিশের নিরাপত্তার অভাবে কাশিমপুর কারাগার থেকে আসামিকে আদালতে হাজির করা সম্ভব হয়নি, ফলে সাক্ষ্যগ্রহণ পিছিয়ে যায়। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমসের নানা দুর্নীতির মামলা এই আদালতে বিচারাধীন। তবে দীর্ঘসূত্রতা এবং বিচারক সংকটের কারণে মামলাগুলো ঝুলে আছে, যা দুর্নীতিবাজদের জন্য সুবিধাজনক পরিস্থিতি তৈরি করছে।
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক বলেন, “বিচারকদের বদলির পর দ্রুত নিয়োগের ব্যবস্থা না নিলে আদালতের কার্যক্রম অচল হয়ে পড়বে। আমরা এ বিষয়ে বারবার সচিব মহোদয়ের কাছে আবেদন করেছি।”