"টাকা দিয়ে উপরে সব ম্যানেজ রাখতে হয়" বলছেন মাদ্রাসার ওই সুপার
মাধবপুরে মাদ্রাসা সুপারের বিরুদ্ধে অনিয়মও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ!
হবিগঞ্জের মাধবপুরে দরগাবাড়ি পৌর দাখিল মাদ্রাসা নামে একটি এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুপার সিদ্দিকুর রহমানের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, পরীক্ষার হলে নকল সরবরাহ, সাংবাদিকদের হয়রানি ও অর্থ আত্মসাৎসহ একাধিক অভিযোগ তুলেছেন এলাকাবাসী।
এ নিয়ে এলাকাবাসী,মাদ্রাসা শিক্ষক ও অভিভাবকগন মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্থানীয় ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে।অনেক শিক্ষক ফেইসবুক লাইভে এসে এসবের দ্রুত তদন্তের দাবি করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও প্রশাসনের কাছে।
সরেজমিনে জানা যায়,বিগত ৩ বছর ধরে ভুয়া বিলও ভাউচারে মাদ্রাসা ফান্ডের অর্থ হরিলুট করছেন সিদ্দিকুর রহমান নামে ওই মাদ্রাসার সুপার।হিসাব চাইলে দেওয়া হয় না হিসাব। ৪ জন কর্মচারী নিয়োগ বানিজ্যে করে নিজের আত্মীয়স্বজনকে বিধি বহির্ভূতভাবে নিয়োগ দেন। এলাকাবাসী এ নিয়ে মানববন্ধনও করেছেন।
উপজেলার এসএসসি সমমান দাখিল পরীক্ষা কেন্দ্রের কেন্দ্র সচিবের দায়িত্ব পাওয়া ওই সুপার দাখিল পরীক্ষায় ৫ মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জনপ্রতি ৭৫০ টাকা করে চাঁদা উঠালেও পরীক্ষার হলে দায়িত্বশিক্ষকদের ১০০ টাকারও কম সম্মানী প্রদান করেন।প্রতি বছর প্রায় লক্ষাধিক আত্মসাৎ করছেন তিনি ।বিগত ৩ বছর ধরে চলা এই অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলার কেউ সাহস পায় না । এ নিয়ে স্থানীয় কমলপুর শাহজালাল আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আনিসুর রহমান মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এর কাছে লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছেন।
সম্প্রতি আবারো দাখিল পরীক্ষার কেন্দ্র সচিবের দায়িত্ব পালন করা সিদ্দিকুর রহমান পরীক্ষার হলে উন্মুক্ত নকল সরবরাহ করেছেন।তার লোকেরা মাইক দিয়ে তার মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের এমসিকিউ প্রশ্নের উত্তর বলে দিতেন।সকল রুমে একই সেটকোড পূরণ করার আশ্চর্যজনক ঘটনাও ঘটেছে । বিষয়টি স্থানীয় কালবেলার উপজেলা প্রতিনিধি মুজাহিদ মসি স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিকসহ অনুমতি নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে নকলের তথ্য ও ভিডিও হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে প্রেরণ করলে তাৎক্ষণিক মোবাইল কোর্ট তার মাদ্রাসার সেলিম মিয়া নামে এক শিক্ষককে গ্রেফতার করে। গঠিত হয় তদন্ত কমিটিও।কিন্তু সিদ্দিকুর রহমান ঘুষ দিয়ে তদন্ত কমিটি থেকে তার নাম কাটিয়ে নেন নেয়।
কিন্তু রহস্যজনকভাবে ওই সম্প্রতি দাখিল পরীক্ষার ফলাফল দেওয়ার পর অর্থাৎ ঘটনার ৪ মাস পর সিদ্দিকুর রহমান বাদী হয়ে সাংবাদিক মুজাহিদ মসিসহ নকলের প্রতিবাদকারী এক মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল ও ডিউটিরত দুইজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করলে এলাকায় নিন্দার ঝড় বইতে থাকে তার বিরুদ্ধে।
অবশ্য মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মিজানুর রহমান বলছেন,প্রাথমিকভাবে বুঝা যাচ্ছে বোঝা মামলাটা কিছুটা প্রতিহিংসামূলক।চার্জশীটে প্রদানে সত্যতা বেরিয়ে আসবে।
এসব বিষয়ে সিদ্দিকুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,কিছু অনিয়ম-দূর্নীতি পরিস্থিতির কারনে ম্যানেজিং কমিটির কেউ কেউ করলেও করতে পারে । আর আমি সবকিছু একা করি না।পরীক্ষার কেদ্রের বিষয়টি উপরে টাকা দিয়ে ম্যানেজ রাখতে হয়। সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়টি মীমাংসার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। দ্রুত এটি মীমাংসা হয়ে যাবে। এর বেশি কিছু বলতে আমি রাজি নই।
ঘটনার ৪ মাস পর রহস্যজনকভাবে সাংবাদিককে মামলার আসামি করার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোন জবাব দেননি।
স্থানীয় সালেহাবাদ এমএস দাখিল মাদ্রাসার সুপার আবুল কালাম জানান,সিদ্দিকুর রহমান শুধু দুর্নীতিবাজই নয় তিনি পরীক্ষা কেন্দ্রকে নকলের স্বর্গরাজ্য বানিয়েছেন। সেজন্য আমিসহ অনেক শিক্ষক পরীক্ষা কেন্দ্রে ডিউটি নিতে যাই না।নকল শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করছে। দ্রুত এ বিষয়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সময়ের দাবি।
হবিগঞ্জের জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ রুহুল্লাহ বলেন,সিদ্দিকুর রহমানের অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়টি আমাদের অফিসেও অবগত।
এ বিষয়ে মাধবপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তদন্ত করছেন। নতুন ম্যানিজিং কমিটি পুন:গঠিত হয়েছে। দ্রুতই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে মাধবপুরের ইউএনও একেএম ফয়সালকে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও ফোন রিসিভ হয়নি। তবে উপজেলা প্রশাসনের ভিন্ন সূত্র বলছে, তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।