ভ্যাপিং ডিভাইস: স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর
সাধারণ সিগারেটের কুফল সম্পর্কে অনেকেই ওয়াকিবহাল, তবু ধূমপানের আসক্তি ছাড়তে পারেন না অনেকেই। মানসিক চাপ, উদ্বেগ, কর্মক্ষেত্রের চাপ কিংবা পারিবারিক টানাপড়েন এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করে।
বাংলাদেশে সিগারেটের সহজলভ্যতাই ধূমপানের প্রসারে প্রধান ভূমিকা রাখছে। জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় দেখা যায়, ২০১৬ সালে ঢাকার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০০ মিটারের মধ্যে ৫৯১টি তামাকজাত পণ্যের দোকান ছিল। পাঁচ বছরের মধ্যে এই সংখ্যা আরও বেড়েছে। অলিতে-গলিতে থাকা দোকানে সিগারেট না থাকলে দোকানের বিক্রি কমে যায় বলে মনে করেন দোকানদাররা।
শিশু-কিশোরদের তামাকজাত দ্রব্যের প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার একটি বড় কারণ তাদের সিগারেট বহনে অভ্যস্ত করা। কৌতূহলবশত তারা ধীরে ধীরে সিগারেটের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে।
ই-সিগারেটকে সিগারেটের নিরাপদ বিকল্প হিসেবে প্রচলন করা হলেও এটি সাধারণ সিগারেটের চেয়ে কম ক্ষতিকর নয়। ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে সিগারেট বাজারের তিন-চতুর্থাংশ দখল করে নেয় ই-সিগারেট। যদিও এটি প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য বাজারজাত করা হয়েছিল, কিশোর-কিশোরীরা এতে বেশি আকৃষ্ট হয়।
বিভিন্ন ফ্লেভার ও মিষ্টি উপাদান মিশ্রিত এই ডিভাইস দ্রুত আসক্তি সৃষ্টি করে। ২০১৯ সালের অক্টোবর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ই-সিগারেটের কারণে ১৮ জনের মৃত্যু এবং ১,০০০ জনের বেশি মানুষ ফুসফুসের মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হন।
আইএআরসির (ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার) গবেষণা মতে, জর্দা দিয়ে পান খাওয়া মুখের ক্যানসারের ঝুঁকি প্রায় পাঁচ গুণ বাড়ায়। জর্দা বা স্লো পয়জনিং ধীরে ধীরে শরীরের ক্ষতি করে, যার পরিণতি ভয়াবহ।
দুই জাপানি ব্যক্তি, যারা প্রতিদিন ৫০-৬০টি সিগারেট পান করতেন, দীর্ঘ ২৫ বছর পর হঠাৎ সিদ্ধান্তে সিগারেট ছেড়েছেন। এরকম কঠিন মনোবল এবং হঠাৎ পদক্ষেপই সিগারেট ছাড়ার জন্য কার্যকর হতে পারে।
সম্প্রতি সিগারেটের দাম বৃদ্ধির পর মিছিল ও স্লোগানের খবর প্রকাশ পেয়েছে। তবে অনেকে এটিকে মজার বিষয় হিসেবে দেখছেন। অথচ এটি জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে।
তামাকজাত পণ্য ও ই-সিগারেট উভয়ের কুফল সম্পর্কে আরও সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। সমাজে শিশু ও কিশোরদের সঠিকভাবে গাইড করার পাশাপাশি সহজলভ্য তামাকজাত পণ্যের বিপণন কমানোর দিকে জোর দেওয়া প্রয়োজন।