কাহারোলে ১১৫টি হাসকিং মিল বন্ধ, ৩ হাজার শ্রমিক বেকার
দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলায় ১১৫টি হাসকিং মিল বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে প্রায় ৩ হাজার শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছে। মিল মালিকেরা মূলধনের অভাব এবং অটো রাইস মিলের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পারায় ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছেন।
কাহারোল উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের তথ্যমতে, উপজেলায় এক সময় ১৩৯টি হাসকিং মিল চালু ছিল। এ বছর মাত্র ২৪টি হাসকিং মিল খাদ্যগুদামে চাল সরবরাহের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছে।
ভাই ভাই হাসকিং মিলের প্রোপ্রাইটর মো. নাইমুল ইসলাম জানান, অটো রাইস মিলে উন্নত প্রযুক্তিতে দ্রুত চাল উৎপাদনের ফলে হাসকিং মিল প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না। সেই সঙ্গে মূলধনের অভাব তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, “আমি ৪ বছর ধরে হাসকিং মিলের ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছি।”
মুটুনি হাটের শামসুল ইসলাম জানান, বাজারে হাসকিং মিলের চালের চাহিদা এখন কম। তাই অনেক মালিক ব্যবসা গুটিয়ে অন্য পেশায় যুক্ত হচ্ছেন। ১৩ মাইল গড়েয়া হাটের শমশের আলী জানান, “আগে অল্প পুঁজি বিনিয়োগ করে লাভবান হওয়া যেত। কিন্তু এখন ধানের দাম বেশি হওয়ায় এবং চালের বাজারে সঠিক সামঞ্জস্য না থাকায় ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে গেছে।”
হাসকিং মিলে কাজ করা শ্রমিকদের অনেকেই এখন অন্য পেশায় যুক্ত হয়েছেন। ১০ মাইল এলাকার রহিমা খাতুন বলেন, “১৯৯৬ সাল থেকে হাসকিং মিলে কাজ করতাম। মিল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন মাঠে কৃষি শ্রমিকের কাজ করছি।” একই এলাকার জরিনা খাতুন জানান, মিলে কাজ না থাকায় কৃষি শ্রমিকের কাজ করতে হচ্ছে, তবে আগের মতো শারীরিকভাবে তিনি কাজ করতে সক্ষম নন।
কাহারোল উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা মো. শাহীন রানা বলেন, “অটো রাইস মিলে উৎপাদিত চালের মান ভালো হওয়ায় হাসকিং মিলের চাল প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়েছে। ফলে হাসকিং মিল মালিকেরা চাল সরবরাহের চুক্তি করছেন না।”
তিনি আরও জানান, সরকারি খাদ্যগুদামে ধান সরবরাহের ক্ষেত্রে কৃষকদের অনাগ্রহও একটি বড় সমস্যা।
দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলায় হাসকিং মিল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শ্রমিকদের জীবিকা এবং স্থানীয় অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। অটো রাইস মিলের আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পারার কারণে ঐতিহ্যবাহী এই শিল্পটি অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। উদ্যোগ নেওয়া না হলে এলাকার শ্রমিক ও মিল মালিকদের আর্থিক সংকট আরও গভীর হতে পারে।