কৌশলে কক্সবাজারে এনে হত্যা: মিয়ানমারের অস্ত্র ব্যবহার
খুলনার সাবেক সিটি কর্পোরেশন কাউন্সিলর এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা গোলাম রব্বানি টিপুকে (৫৪) পরিকল্পিতভাবে কক্সবাজারে এনে হত্যা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে সমুদ্র সৈকতের সিগাল হোটেলের সামনে কাঠের সেতুর ওপর মাথায় গুলি করে তাকে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ৯ এমএম পিস্তলটি মিয়ানমারে তৈরি।
গোলাম রব্বানির বাড়ি খুলনা সিটির দৌলতপুর এলাকায়। তিনি সদ্য অপসারিত ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ছিলেন। হত্যার ঘটনায় র্যাব ও পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এটি একটি টার্গেট কিলিং।
র্যাব ও পুলিশের প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, হত্যাকাণ্ডটি অত্যন্ত পরিকল্পিত। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক যুবতীর সঙ্গে তাকে কক্সবাজারের একটি হোটেল থেকে বের হতে দেখা যায়। পরে রাত সাড়ে ৮টার দিকে সিগাল হোটেলের পাশে কাঠের সেতুর ওপর গুলি করে হত্যা করা হয়।
কক্সবাজার সদর থানার ওসি মো. ইলিয়াস খান জানান, হত্যায় জড়িত সন্দেহে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলেন খুলনার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদ্য অপসারিত কাউন্সিলর শেখ হাসান ইফতেখার (চালু) এবং কক্সবাজার শহরের টেকপাড়ার বাসিন্দা মেজবাউল হক (ভুট্রো)। পুলিশের মতে, গোলাম রব্বানির সঙ্গে ভুট্রোর পূর্বপরিচয় ছিল।
গ্রেফতারকৃতদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের আবেদন করা হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হাসান ও ভুট্রো ভিন্ন ভিন্ন তথ্য দিচ্ছেন, যা সন্দেহ বাড়াচ্ছে।
তদন্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হত্যার পেছনে রাজনৈতিক বিরোধ, ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব, ব্যক্তিগত শত্রুতা এবং চরমপন্থী নেতাদের সঙ্গে গোলাম রব্বানির দ্বন্দ্ব থাকতে পারে। এ ছাড়া, তার নামে পূর্বে খুলনা দৌলতপুর থানায় দুটি মামলা ছিল। যদিও বর্তমানে তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই, সাম্প্রতিক সময়ে তার বিরুদ্ধে একটি নতুন মামলা দায়ের হয়েছে।
র্যাব সূত্র জানায়, গোলাম রব্বানির মাথায় নিখুঁতভাবে গুলি করা হয়, যা প্রশিক্ষিত শুটারের কাজ হতে পারে। এমনকি হত্যার জন্য মিয়ানমারের কোনো সশস্ত্র গোষ্ঠীর ভাড়াটে খুনিকে ব্যবহার করা হয়েছে কিনা, সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
গোলাম রব্বানির বড় ভাই গোলাম রসুল বাদশা অভিযোগ করেছেন, খুলনার দৌলতপুর এলাকার সন্ত্রাসীরা কৌশলে রব্বানিকে কক্সবাজারে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছে। তার দাবি, হত্যার নেপথ্যে সন্ত্রাসীদের দীর্ঘদিনের শত্রুতা কাজ করেছে।
তদন্তে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সূত্র উঠে এসেছে, যেখানে গোলাম রব্বানির নাম হোটেলের রেজিস্ট্রার খাতায় এক যুবতীর সঙ্গে উল্লেখ ছিল। ওই যুবতীকে গ্রেফতার করা গেলে হত্যার মূল রহস্য উদঘাটন হতে পারে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।
গোলাম রব্বানির পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে র্যাব ও পুলিশ তৎপর রয়েছে। তারা গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়ে যাচ্ছে এবং হত্যা পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছে।