ঢাকা ০৩:৫১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গাজীপুরের নাগরী গির্জা উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন গির্জা

শহীদুল ইসলাম শরীফ, স্টাফ রিপোর্টার::

নাগরী গির্জা

বাংলাদেশের গাজীপুর জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার নাগরী গ্রামে অবস্থিত সাধু নিকোলাস গির্জা, যা নাগরী গির্জা নামেও পরিচিত, একটি ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থান। এটি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রাচীন খ্রিষ্টান গির্জা, যা পর্তুগিজদের সহায়তায় নির্মিত হয়।

নাগরী গির্জার ইতিহাস বেশ পুরনো এবং তা বাংলাদেশের খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। গির্জাটির প্রতিষ্ঠা ১৬৬৩ সালে টলেন্টিনির সাধু নিকোলাস দ্বারা হয়, তবে তার আগেও এখানে একটি গির্জা ছিল যা ১৬১২ সালে অগাস্টিয়ানদের দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। তবে সেদিনের গির্জার অবস্থান বা কাঠামো সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায় না।

বর্তমানে যে ভবনটি নাগরী গির্জা হিসেবে পরিচিত, তা ১৮০০ সালের মাঝামাঝি সময়ে নির্মিত হয়। তবে সবচেয়ে প্রচলিত মতানুসারে, পূর্বে এখানে একটি কাঠ-খড় দিয়ে নির্মিত গির্জা ছিল, যা একসময় আগুনে পুড়ে যায়। পরে, পুড়ে যাওয়া গির্জার স্থানে বর্তমান পাকা গির্জাটি নির্মিত হয়। এই গির্জার পাশে আধুনিক স্থাপত্যে একটি নতুন ভবনও নির্মিত হয়েছে, যা বর্তমানে আরও অনেক পর্যটকের আগমন ঘটায়।

গির্জাটি স্থানীয়দের সহযোগিতা ও পর্তুগিজ ব্যবসায়ীদের আর্থিক সহায়তায় নির্মাণ করা হয়েছিল। পর্তুগিজরা বাংলাদেশে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য নিয়ে এলেও, তারা প্রথমে ধর্ম প্রচারে ঝুঁকে পড়েছিল। বাংলাদেশের প্রথম বাংলা ব্যাকরণ রচয়িতা পাদ্রী ম্যানুয়াল দ্যা অ্যাসুম্পসাও এই গির্জারই পাদ্রী ছিলেন এবং এই গির্জাতেই তিনি তাঁর গ্রন্থ রচনার কাজ শুরু করেছিলেন।

নাগরী গির্জার কাছেই পানজোড়া গির্জা বা সাধু এন্টোনিস গির্জা অবস্থিত, যা ১৯০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে প্রতি বছর সাধু আন্তুনির তীর্থোৎসব অনুষ্ঠিত হয়, যা স্থানীয় খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের কাছে একটি বড় ধর্মীয় উৎসব।

নাগরী গির্জা ছাড়াও বাংলাদেশের প্রাচীন গির্জাগুলোর মধ্যে অন্যতম তেজগাঁও গির্জা, যা ১৬৭৭ সালে নির্মিত হয়। এই গির্জাও পর্তুগিজদের দ্বারা নির্মিত হয়েছিল এবং এটি দেশের খ্রিষ্টান ধর্মীয় স্থাপনার ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

নাগরী গির্জা শুধু একটি ধর্মীয় স্থান নয়, এটি বাংলাদেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতির একটি অমূল্য অংশ। এর প্রাচীনত্ব, স্থাপত্যশৈলী এবং ধর্মীয় গুরুত্ব দেশের পর্যটকদের জন্য একটি অমূল্য সম্পদ হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। খ্রিষ্টান ধর্মীয় স্থাপনার ইতিহাস এবং বাংলাদেশে পর্তুগিজদের ভূমিকা বোঝার জন্য নাগরী গির্জা একটি অমূল্য জায়গা।

ট্যাগস :

নিউজটি টাইম লাইনে শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

চেকপোস্ট

Checkpost is one of the most popular Bengali news portal and print newspaper in Bangladesh. The print and online news portal started its operations with a commitment to fearless, investigative, informative and unbiased journalism.
আপডেট সময় ১১:৩৮:৫৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ৮ জানুয়ারী ২০২৫
৬১৬ বার পড়া হয়েছে

গাজীপুরের নাগরী গির্জা উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন গির্জা

আপডেট সময় ১১:৩৮:৫৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ৮ জানুয়ারী ২০২৫

বাংলাদেশের গাজীপুর জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার নাগরী গ্রামে অবস্থিত সাধু নিকোলাস গির্জা, যা নাগরী গির্জা নামেও পরিচিত, একটি ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থান। এটি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রাচীন খ্রিষ্টান গির্জা, যা পর্তুগিজদের সহায়তায় নির্মিত হয়।

নাগরী গির্জার ইতিহাস বেশ পুরনো এবং তা বাংলাদেশের খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। গির্জাটির প্রতিষ্ঠা ১৬৬৩ সালে টলেন্টিনির সাধু নিকোলাস দ্বারা হয়, তবে তার আগেও এখানে একটি গির্জা ছিল যা ১৬১২ সালে অগাস্টিয়ানদের দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। তবে সেদিনের গির্জার অবস্থান বা কাঠামো সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায় না।

বর্তমানে যে ভবনটি নাগরী গির্জা হিসেবে পরিচিত, তা ১৮০০ সালের মাঝামাঝি সময়ে নির্মিত হয়। তবে সবচেয়ে প্রচলিত মতানুসারে, পূর্বে এখানে একটি কাঠ-খড় দিয়ে নির্মিত গির্জা ছিল, যা একসময় আগুনে পুড়ে যায়। পরে, পুড়ে যাওয়া গির্জার স্থানে বর্তমান পাকা গির্জাটি নির্মিত হয়। এই গির্জার পাশে আধুনিক স্থাপত্যে একটি নতুন ভবনও নির্মিত হয়েছে, যা বর্তমানে আরও অনেক পর্যটকের আগমন ঘটায়।

গির্জাটি স্থানীয়দের সহযোগিতা ও পর্তুগিজ ব্যবসায়ীদের আর্থিক সহায়তায় নির্মাণ করা হয়েছিল। পর্তুগিজরা বাংলাদেশে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য নিয়ে এলেও, তারা প্রথমে ধর্ম প্রচারে ঝুঁকে পড়েছিল। বাংলাদেশের প্রথম বাংলা ব্যাকরণ রচয়িতা পাদ্রী ম্যানুয়াল দ্যা অ্যাসুম্পসাও এই গির্জারই পাদ্রী ছিলেন এবং এই গির্জাতেই তিনি তাঁর গ্রন্থ রচনার কাজ শুরু করেছিলেন।

নাগরী গির্জার কাছেই পানজোড়া গির্জা বা সাধু এন্টোনিস গির্জা অবস্থিত, যা ১৯০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে প্রতি বছর সাধু আন্তুনির তীর্থোৎসব অনুষ্ঠিত হয়, যা স্থানীয় খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের কাছে একটি বড় ধর্মীয় উৎসব।

নাগরী গির্জা ছাড়াও বাংলাদেশের প্রাচীন গির্জাগুলোর মধ্যে অন্যতম তেজগাঁও গির্জা, যা ১৬৭৭ সালে নির্মিত হয়। এই গির্জাও পর্তুগিজদের দ্বারা নির্মিত হয়েছিল এবং এটি দেশের খ্রিষ্টান ধর্মীয় স্থাপনার ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

নাগরী গির্জা শুধু একটি ধর্মীয় স্থান নয়, এটি বাংলাদেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতির একটি অমূল্য অংশ। এর প্রাচীনত্ব, স্থাপত্যশৈলী এবং ধর্মীয় গুরুত্ব দেশের পর্যটকদের জন্য একটি অমূল্য সম্পদ হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। খ্রিষ্টান ধর্মীয় স্থাপনার ইতিহাস এবং বাংলাদেশে পর্তুগিজদের ভূমিকা বোঝার জন্য নাগরী গির্জা একটি অমূল্য জায়গা।