১৬ বছর পর রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী দামকুড়া পশুহাট উদ্ধারে নতুন প্রভাত
রাজশাহীর পবা উপজেলার ঐতিহ্যবাহী দামকুড়া পশুহাট দীর্ঘ ১৬ বছর পর আবারও প্রাণ ফিরে পেয়েছে। রমরমা কেনাবেচার সেই পুরনো আমেজ নিয়ে নতুন করে শুরু হয়েছে পশু ক্রয়-বিক্রয়। উদ্বোধনী দিনে ক্রেতা-বিক্রেতাদের বিপুল সমাগমে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো হাট এলাকা।
১৯৮৯ সালে প্রথম চালু হওয়া দামকুড়া পশুহাট ২০০৮ সালের পর থেকে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের কৌশলে বন্ধ হয়ে পড়ে। অভিযোগ রয়েছে, ওই সিন্ডিকেট নামমাত্র টাকায় ইজারা নিয়ে হাটটি অকার্যকর করে রেখেছিল, যাতে ১০ কিলোমিটার দূরে রাজশাহী সিটি হাটের ব্যবসা প্রসারিত হয়। স্থানীয়রা এ ঘটনাকে ‘চক্রান্ত’ বলে উল্লেখ করেন। দীর্ঘ ১৬ বছর পর অবশেষে আবারও চালু হওয়া দামকুড়া পশুহাটে সৃষ্টি হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ।
নতুনভাবে চালু হওয়া হাটের ইজারাদার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান আলী। তিনি ১ কোটি ১১ লাখ ১১ হাজার ১১১ টাকায় সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে এক বছরের জন্য হাটটি ইজারা নিয়েছেন। অথচ বিগত সময়গুলোতে এই হাট মাত্র ৩৬-৩৭ লাখ টাকায় ইজারা দেওয়া হয়েছিল। দীর্ঘদিন ধরে ইজারার মাধ্যমে হাটটি নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন রাজশাহী মহানগরের বোয়ালিয়া থানা (পূর্ব) আওয়ামী লীগের সভাপতি আতিকুর রহমানের ছেলে রেজাউনুর রহমান, যিনি একইসঙ্গে সিটি হাটেরও ইজারাদার ছিলেন। তবে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই তারা গা ঢাকা দেন।
নতুন ইজারাদার শাহজাহান আলী জানিয়েছেন, দামকুড়া পশুহাটের ক্রেতা-বিক্রেতাদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে টোল নির্ধারণ করা হয়েছে তুলনামূলক কম হারে। এখানে গরুপ্রতি ৪০০ টাকা ও ছাগলপ্রতি ১৫০ টাকা টোল আদায় করা হচ্ছে। অন্যদিকে নিকটবর্তী সিটি হাটে গরুর জন্য ক্রেতার কাছ থেকে ৮০০ টাকা ও বিক্রেতার কাছ থেকে ২০০ টাকা করে আদায় করা হয়। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ছাগলের জন্য বিক্রয়মূল্যের ৫ শতাংশ টোল আদায়ের কথা থাকলেও দামকুড়া পশুহাটে নির্ধারিত হয়েছে নির্দিষ্ট ১৫০ টাকা।
উদ্বোধনী দিনে প্রথম গরু ও ছাগল ক্রেতাকে উৎসাহিত করতে এক হাজার টাকা ও একটি করে ছাতা উপহার দেওয়া হয়। পাশাপাশি প্রথম বিক্রেতাকে কোনো টোল দিতে হয়নি বলে জানান শাহজাহান আলী।
তিনি আরও বলেন, “২০০৮ সালের পর থেকে হাটটি কৌশলে বন্ধ রাখায় প্রতিবছর প্রায় অর্ধকোটি টাকার সরকারি রাজস্ব হারিয়েছে দেশ। এখন নতুনভাবে হাট চালু হওয়ায় সরকার আবারও বড় অঙ্কের রাজস্ব পাবে এবং স্থানীয় অর্থনীতিতে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরবে।”
রাজশাহীর পশু ব্যবসায় এবং গ্রামীণ অর্থনীতিতে এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করল দীর্ঘ ১৬ বছর পর উদ্ধার হওয়া এই দামকুড়া পশুহাট।