ঢাকা ০১:২৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৯ অগাস্ট ২০২৫, ২৪ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হারানো স্বামীর স্মরণে শিক্ষিকার আবেগঘন ফেসবুক পোস্ট

মাধবপুর প্রতিনিধি::

ছবি: শিক্ষিকা মুস্তাফিজা ফিজো ও তার দেওয়া আবেগঘন ফেসবুক পোস্ট

প্রয়াত শিক্ষক স্বামীর স্মৃতিতে ভেসে গিয়ে আবেগঘন এক ফেসবুক পোস্ট দিয়েছেন হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার এক শিক্ষিকা। হৃদয়ছোঁয়া সেই পোস্ট ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।

শিক্ষিকার নাম মুস্তাফিজা ফিজো। তিনি মাধবপুর উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নের আলহাজ্ব এস. এম. ফয়সাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে কর্মরত।

গত ৫ আগস্ট (রবিবার), ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড আইডি থেকে ফিজো লিখেন-“যদি জানতাম আর ফিরে আসবে না, তবে সেদিন বাড়ি থেকে বের হতে দিতাম না।”

এই সংক্ষিপ্ত বাক্যেই প্রকাশ পেয়েছে তার অন্তরের গভীর শোক, বেদনা আর স্বামীর প্রতি অটুট ভালোবাসা।

কমেন্টে এক নেটিজেন খাইরুল পাঠান নিলয় প্রশ্ন করেন, “কি হয়েছিল?” আরও অনেকে মন্তব্য করেন, “সবই ভাগ্য”, “ভুলা যায় না”, এমন নানা সমবেদনার কথা।

জানা গেছে, মুস্তাফিজা ফিজো ও তোফাজ্জল আলম খান দুজনেই শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত ছিলেন। প্রেমের সম্পর্ক থেকেই তাদের বিয়ে। তোফাজ্জল আলম খান ছিলেন উত্তর বেজুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। সংসার জীবনে ছিল হাসি-আনন্দ, একটি ছেলে সন্তানও রয়েছে তাদের।

কিন্তু ২০২৩ সালের ১৩ জানুয়ারি হঠাৎ করেই তাদের সুখের সংসারে নেমে আসে অন্ধকার। বাজার করতে বের হয়ে আর ফিরে আসেননি তোফাজ্জল। পথেই হার্ট অ্যাটাক করে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

শেষবারের মতো স্ত্রীর হাতে রান্না করা খাবার খেয়েই বিদায় নিয়েছিলেন এই শিক্ষক। সেই স্মৃতিই আজও চোখে ভাসে ফিজোর। মৃত্যুর দুই বছর পরও সেই শোক বয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি।

পরিবার থেকে নতুন করে বিয়ের জন্য চাপ দেওয়া হলেও ফিজো জানান, তিনি আর কাউকে জীবনসঙ্গী করতে চান না। একমাত্র সন্তানকেই জীবনের কেন্দ্র করে এগিয়ে চলছেন। ছেলে বর্তমানে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে।

নিজেকে স্বামীর স্মৃতিতেই বাঁচিয়ে রেখেছেন ফিজো। স্বামীর লেখা কবিতা, ছবি এবং স্মৃতিচারণে কেটে যায় তার দিন।

এ বিষয়ে মাধবপুর উপজেলার মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা পেয়ার বেগম বলেন, “তার সম্পর্কে আপনার মাধ্যমে যা শুনলাম, তা সত্যিই ব্যতিক্রমী ও অনুকরণীয়। এমন ভালোবাসাই পরিবার ও সমাজকে টিকিয়ে রাখে। আমরা চাইব, আমাদের বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমে তাকে সম্পৃক্ত করতে।”

মাধবপুর উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা কবির হোসেন বলেন, “মৃত স্বামীর প্রতি এমন ভালোবাসা এবং দায়িত্বশীলতা সত্যিই দৃষ্টান্তমূলক। তিনি কেবল একজন ভালো শিক্ষিকাই নন, বরং একজন আদর্শ মা ও স্ত্রীর প্রতিচ্ছবি।”

ট্যাগস :

নিউজটি টাইম লাইনে শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

চেকপোস্ট

Checkpost is one of the most popular Bengali news portal and print newspaper in Bangladesh. The print and online news portal started its operations with a commitment to fearless, investigative, informative and unbiased journalism.
আপডেট সময় ১১:৪৪:৪৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ অগাস্ট ২০২৫
৫৪৬ বার পড়া হয়েছে

হারানো স্বামীর স্মরণে শিক্ষিকার আবেগঘন ফেসবুক পোস্ট

আপডেট সময় ১১:৪৪:৪৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ অগাস্ট ২০২৫

প্রয়াত শিক্ষক স্বামীর স্মৃতিতে ভেসে গিয়ে আবেগঘন এক ফেসবুক পোস্ট দিয়েছেন হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার এক শিক্ষিকা। হৃদয়ছোঁয়া সেই পোস্ট ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।

শিক্ষিকার নাম মুস্তাফিজা ফিজো। তিনি মাধবপুর উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নের আলহাজ্ব এস. এম. ফয়সাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে কর্মরত।

গত ৫ আগস্ট (রবিবার), ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড আইডি থেকে ফিজো লিখেন-“যদি জানতাম আর ফিরে আসবে না, তবে সেদিন বাড়ি থেকে বের হতে দিতাম না।”

এই সংক্ষিপ্ত বাক্যেই প্রকাশ পেয়েছে তার অন্তরের গভীর শোক, বেদনা আর স্বামীর প্রতি অটুট ভালোবাসা।

কমেন্টে এক নেটিজেন খাইরুল পাঠান নিলয় প্রশ্ন করেন, “কি হয়েছিল?” আরও অনেকে মন্তব্য করেন, “সবই ভাগ্য”, “ভুলা যায় না”, এমন নানা সমবেদনার কথা।

জানা গেছে, মুস্তাফিজা ফিজো ও তোফাজ্জল আলম খান দুজনেই শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত ছিলেন। প্রেমের সম্পর্ক থেকেই তাদের বিয়ে। তোফাজ্জল আলম খান ছিলেন উত্তর বেজুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। সংসার জীবনে ছিল হাসি-আনন্দ, একটি ছেলে সন্তানও রয়েছে তাদের।

কিন্তু ২০২৩ সালের ১৩ জানুয়ারি হঠাৎ করেই তাদের সুখের সংসারে নেমে আসে অন্ধকার। বাজার করতে বের হয়ে আর ফিরে আসেননি তোফাজ্জল। পথেই হার্ট অ্যাটাক করে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

শেষবারের মতো স্ত্রীর হাতে রান্না করা খাবার খেয়েই বিদায় নিয়েছিলেন এই শিক্ষক। সেই স্মৃতিই আজও চোখে ভাসে ফিজোর। মৃত্যুর দুই বছর পরও সেই শোক বয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি।

পরিবার থেকে নতুন করে বিয়ের জন্য চাপ দেওয়া হলেও ফিজো জানান, তিনি আর কাউকে জীবনসঙ্গী করতে চান না। একমাত্র সন্তানকেই জীবনের কেন্দ্র করে এগিয়ে চলছেন। ছেলে বর্তমানে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে।

নিজেকে স্বামীর স্মৃতিতেই বাঁচিয়ে রেখেছেন ফিজো। স্বামীর লেখা কবিতা, ছবি এবং স্মৃতিচারণে কেটে যায় তার দিন।

এ বিষয়ে মাধবপুর উপজেলার মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা পেয়ার বেগম বলেন, “তার সম্পর্কে আপনার মাধ্যমে যা শুনলাম, তা সত্যিই ব্যতিক্রমী ও অনুকরণীয়। এমন ভালোবাসাই পরিবার ও সমাজকে টিকিয়ে রাখে। আমরা চাইব, আমাদের বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমে তাকে সম্পৃক্ত করতে।”

মাধবপুর উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা কবির হোসেন বলেন, “মৃত স্বামীর প্রতি এমন ভালোবাসা এবং দায়িত্বশীলতা সত্যিই দৃষ্টান্তমূলক। তিনি কেবল একজন ভালো শিক্ষিকাই নন, বরং একজন আদর্শ মা ও স্ত্রীর প্রতিচ্ছবি।”