সুতাং নদী শিল্পকারখানার বর্জ্য দূষণে পরিবেশ হুমকিতে লাখাই উপজেলা
হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলা ধান, মাছ খ্যাত এ উপজেলা। ধান ও মাছ উৎপাদনে এ উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্যান্য জেলার চাহিদা মিটাতে সক্ষমতা রয়েছে এ উপজেলার কৃষক ও জেলেদের। এ সব অবদান রেখে আসছে উপজেলার আপামর জনগণ কিন্তু বিগত কয়েক বছর আগে হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার ওলিপুর এলাকায় গড়ে উঠেছে শিল্পকারখানা। আর এই শিল্পকারকানার দূষিত বর্জ্য পরিশোধন করে বর্জ্য নির্গমন করার বিধান থাকা সত্বেও মানছেন সংশ্লিষ্ট শিল্পকারখানার মালিকগন। খোঁজ নিয়ে জানা যায় ওলিপুরি গড়ে উঠা প্রাণ আর এফ এল কোম্পানির দূষিত বর্জ্য শলজুড়াগ্রামের খাল দিয়ে এই দূষিত বর্জ্য সুতাং নদীতে নির্গমন করার ফলে দূষিত হচ্ছে সুতাং নদীর পানি। এই দূষিত পানির কারনে সুতাং নদীর জলজপ্রাণী নির্বংশ হয়ে পরেছে। দূষিত পানি হেমন্ত মৌসুমে কাল রঙ ধারন করার ফলে নদীর পাশ দিয়ে দুর্গন্ধের প্রভাবে মানুষ পর্যন্ত চলাফেরা করতে পারছেন না।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সুতাং নদীর দূষিত পানি ব্যবহার করার কারনে বিভিন্ন এলাকার মানুষ চর্মরোগে আক্রান্ত হতে দেখা গেছে। এ বিষয়ে এলাকার মানুষের সাথে আলাপ কালে তারা জানান, ওলিপুর এলাকায় গড়ে উঠা দূষিত শিল্প বর্জ্যের পানির গন্ধে আশ পাশ দিয়ে চলাফেরা করতে পারছি না। এ সংক্রান্ত বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় লেখা লেখি হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর দেখেও না দেখার ভান করে বসে আছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঔ এলাকার কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, বিগত সরকারের আমলে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রাম করলেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, এমপি আমলারা নিরব ভূমিকা পালন করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সুতাং নদী এক সময় খর স্রোতা নদী হিসেবে পরিচিত ছিল কিন্তু কালের বিবর্তনে বর্তমানে সুতাং নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় অল্প বৃষ্টিতেই বন্যা রুপ ধারণ করে ফসলি জমির ফসল ভাসিয়ে নিয়ে যায় এতে করে কৃষকদের ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি সম্মুখীন হতে হয়। এই শিল্প বর্জ্যে দূষিত পানির কারনে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পরেছে। ইতিহাস ঐতিহ্য এই সুতাং নদীর উৎপত্তি স্থল ত্রিপুরা রাজ্যের আসাম পাড়া প্রদেশ থেকে হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার পূর্ব উত্তর হয়ে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ পাশ হয়ে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার পশ্চিম পার্শ্ব হয়ে লাখাই উপজেলার পূর্ব ও করাব, বুল্লা, বামৈ ও লাখাই ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে ধলেশ্বরী নদীতে মিলিত হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলার প্রবীন কৃষক ও জেলের সাথে আলাপ কালে তারা জানান, এক সময় আমরা ও আমাদের বাপ চাচারা সুতাং নদী থেকে পাওয়ার পাম্প মেশিন দিয়ে আমাদের বোরোধান চাষাবাদের জন্য সুতাং নদী থেকে পানি সেচ দিয়ে চাষাবাদ করে বোরোধান উৎপাদন করা হতো কিন্তু বর্তমানে সুতাং নদীর দূষিত বর্জ্যের পানির কারনে না করতে চাষাবাদ না পারছি মাছ আহরণ।
জেলেরা জানিয়েছেন এই সুতাং নদী থেকে মাছ আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করতাম কিন্তু বর্তমানে দূষিত পানির কারনে নেই কোন প্রকার মাছ।তারা আরো জানান পাওয়ার পাম্প মেশিন দ্বারা পানি সেচ করে চাষা বাদে খরচও কম হতো কিন্তু বর্তমানে নদীর পানি দূষিত হওয়ার কারণে গভীর নলকূপ দ্বারা পানি সেচ দিয়ে জমি চাষাবাদ করতে হচ্ছে এতে করে খরচও বেশী পরে। বর্তমান প্রাণ আর এফ এল এর দূষিত বর্জ্যের পানির কারনে সুতাং নদীর কেরোসিন এর রঙ ধারণ করেছে।
এ সংক্রান্ত বিষয়ে হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোছাঃ জিলুফা সুলতানা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা সুলতানা কিছুদিন পূর্বে উপজেলায় এক মতবিনিময় সভায় বলেছেন লাখাই উপজেলার নদ নদী পুনরুদ্ধার করতে যা যা প্রয়োজন তা অচিরেই উদ্যোগ নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে লাখাই উপজেলাবাসীর দাবী ওলিপুরে গড়ে উঠা শিল্পকারখানার দূষিত বর্জ্যের পানি নিষ্কাশন বন্ধ করে সুতাং নদী রক্ষায় পূনঃ খনন করতঃ পরিবেশ রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে দাবী জানান।