মানবিকতার এক অনন্য গল্প
সম্পূর্ণ পরিশোধিত এক গ্লাস দুধ দিয়ে
জীবনে মাঝে মাঝে এমন কিছু ঘটনা ঘটে, যা আমাদের শিখিয়ে দেয় ছোট্ট একটি দান বা সদয় আচরণ কতটা গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। ডাঃ হাওয়ার্ড কেলির জীবনের এক সত্য ঘটনা মানবিকতার এই মূল্যবান পাঠের সেরা উদাহরণ।
ডাঃ হাওয়ার্ড কেলি ছিলেন একজন প্রতিভাবান গাইনোকোলজিস্ট, যিনি ১৮৯৫ সালে জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে গাইনোকোলজিক অনকোলজি বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তার গবেষণা ও অবদানে চিকিৎসা শাস্ত্রে অনেক পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু তার জীবনের একটি ছোট্ট ঘটনা তাকে চিরস্মরণীয় করে রেখেছে।
একদিন, এক দরিদ্র ছেলে, হাওয়ার্ড কেলি, দরজায় দরজায় ঘুরে পণ্য বিক্রি করছিল। তার উদ্দেশ্য ছিল নিজের স্কুলের খরচ জোগাড় করা। ক্লান্ত ও ক্ষুধার্ত হয়ে, এক বাড়িতে গিয়ে সে এক গ্লাস পানি চেয়েছিল। দরজা খুলে এক ছোট মেয়ে তার অবস্থা দেখে দয়া করে তাকে এক গ্লাস দুধ দেয়। হাওয়ার্ড মুগ্ধ হয়ে জিজ্ঞাসা করেছিল, “আমি এর জন্য কীভাবে তোমার ঋণ শোধ করব?” মেয়েটি হেসে উত্তর দিয়েছিল, “আমার মা শিখিয়েছেন, কাউকে সাহায্য করলে তার মূল্য নিতে নেই।”
সেই এক গ্লাস দুধ শুধু তার ক্ষুধা মেটায়নি; বরং জীবনের প্রতি তার বিশ্বাস পুনর্জাগরিত করেছিল।
বহু বছর পর, একদিন হাওয়ার্ড কেলি একজন সফল চিকিৎসক। এক মহিলা ভয়াবহ রোগে আক্রান্ত হয়ে তার ক্লিনিকে এলেন। ডাক্তার কেলি রোগীকে দেখে চমকে উঠলেন, কারণ তিনিই সেই মহিলা, যিনি তাকে এক গ্লাস দুধ দিয়েছিলেন।
মহিলার চিকিৎসা ছিল ব্যয়বহুল। কিন্তু ডাঃ কেলি সমস্ত যত্ন ও আন্তরিকতা দিয়ে তার চিকিৎসা চালিয়ে যান। চিকিৎসার শেষে, বিল পরিশোধের সময় মহিলাকে একটি কাগজ দেওয়া হলো। বিল দেখে তিনি অবাক হয়ে পড়লেন। সেখানে লেখা ছিল:
“Paid in full with one glass of Milk” নীচে স্বাক্ষর করেছিলেন—ডাঃ হাওয়ার্ড কেলি।
মহিলা কেঁদে ফেললেন। সেই এক গ্লাস দুধের ঋণ এত সুন্দরভাবে শোধ হবে, তা তিনি কল্পনাও করতে পারেননি। তিনি ডাঃ কেলির কাছে গিয়ে তাকে ধন্যবাদ জানালেন।
এই ঘটনা শুধু একটি গল্প নয়, বরং একটি জীবনের শিক্ষা। আমরা যদি সাধ্যমত অন্যদের সাহায্য করি, সেই দানের প্রতিদান হয়তো কখনোই প্রত্যক্ষভাবে পাব না, কিন্তু তা পৃথিবীতে ভালোবাসা ও মানবিকতার শিকড় আরও গভীর করবে।
ডাঃ হাওয়ার্ড কেলির জীবনের এই ঘটনা আমাদের শেখায়, দয়া ও মানবিকতা আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ। তাই, জীবনে যতটুকু সম্ভব, আমাদের সবারই সাধ্যমত অন্যদের সাহায্য করার চেষ্টা করা উচিত। কারণ, একটি ছোট দান একদিন বিশাল প্রতিদান হিসেবে ফিরে আসতে পারে।