শ্যামনগরে লিডার্সের উদ্যোগে বিনা চাষে উদ্ভাবনী ফসল উৎপাদনের প্রস্তুতি
সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা লিডার্স এর উদ্যোগে বিনা চাষে উদ্ভাবনী ফসল উৎপাদনের এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আলু, ডাল, সরিষা, পেঁয়াজ, রসুন, সূর্যমুখী, গম, ভুট্টা প্রভৃতি ফসল চাষে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও উপকূলীয় অঞ্চলের লবণাক্ততার কারণে কৃষি উৎপাদন কমে যাওয়ার যে সংকট দেখা দিয়েছে, তা মোকাবিলায় বিকল্প কৃষি পদ্ধতির ওপর জোর দিচ্ছে লিডার্স। শ্যামনগরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে অভিযোজিত কৌশলে বিনা চাষে দ্বিতীয় ফসল উৎপাদনের প্রস্তুতি চলছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উপকূলীয় অঞ্চলে ফসল উৎপাদনে ব্যাপক বাধা সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে লিডার্সের টিম লিডার অসিত মণ্ডল বলেন, “অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার মাটির উর্বরতা হ্রাস করেছে। তাই আমাদের মূল লক্ষ্য মাটির স্বাস্থ্য রক্ষা করে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি করা।”
তিনি আরও জানান, উদ্ভাবনী কৌশলে ফসল উৎপাদনে স্বল্প পানি ব্যবহার ও সঠিক পানি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষকরা লাভবান হতে পারেন।
কৃষাণী মলিনা রানী জানান, “আগে ফসল ভালো হতো না। লিডার্সের পরামর্শে এখন আমরা আলু, সরিষা, পেঁয়াজ, রসুন, গম, ভূট্টাসহ বিভিন্ন শীতকালীন ফসল বিনা চাষে উৎপাদন করছি।”
উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে ইতোমধ্যে কৃষকদের মাঝে বীজ বিতরণ করা হয়েছে। এরমধ্যে আলু: ১১৯৪ কেজি, পেঁয়াজ: ৩০০ কেজি, রসুন: ১৪৯ কেজি, সরিষা ১৫০ কেজি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য নিপা চক্রবর্তী জানান, “শ্যামনগরের প্রত্যন্ত অঞ্চলে রাসায়নিক কীটনাশকমুক্ত সবজি উৎপাদনে লিডার্সের কার্যক্রম একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। আমন ধান তোলার পর বিনা চাষে ফসল উৎপাদনে কৃষকরা আগ্রহী হয়ে উঠেছে।”
স্বল্প সময় ও স্বল্প ব্যয়ে ফসল উৎপাদনের এই পদ্ধতি উপকূলীয় কৃষকদের জন্য একটি টেকসই সমাধান হতে পারে। লিডার্সের এই উদ্যোগ কৃষি উৎপাদনে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে, যা খাদ্য সংকট মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
বিনা চাষে উদ্ভাবনী কৌশলে ফসল উৎপাদন একটি পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ। এটি কৃষকদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করে তুলবে এবং কৃষি শ্রমজীবীদের নিজ এলাকায় কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে। শ্যামনগরের এই প্রকল্প যদি সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়, তবে এটি সারা দেশের জন্য একটি মডেল হিসেবে দাঁড়াতে পারে।