শেখ জুয়েলের আলোচিত এপিএস সাঈদুর এখন আমেরিকায়
খুলনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সালাউদ্দিন জুয়েলের ব্যক্তিগত সহকারী (এপিএস) সাঈদুর রহমানকে সম্প্রতি দেখা গেছে যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটির পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের ল্যাঙ্কাস্টার শহরে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে দেখা যায় তাকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে কয়েকটি ছবিও প্রকাশ করেছেন তিনি।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয় আওয়ামী লীগ সরকার। এরপর থেকেই আত্মগোপনে চলে যান সাঈদুর রহমান। তখন থেকে তাকে আর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। এপিএস হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী এই ব্যক্তি কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পেলেন এবং কীভাবে দেশ ত্যাগ করলেন—তা নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন।
সাঈদুর রহমান খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগর ডিগ্রি কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে হলেও বসবাস করতেন খুলনা নগরীর ট্যাংক রোডে। ধারাভাষ্যকার হিসেবে ক্রীড়াঙ্গনেও তার পরিচিতি ছিল। ২০১৮ সালে শেখ জুয়েল এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর সাঈদুরকে এপিএস হিসেবে নিয়োগ দেন। এরপর থেকে ক্ষমতার বলয়ে তার অবস্থান দৃঢ় হতে থাকে।
সাবেক এমপির ছায়ায় থেকে সরকারি দপ্তরের নিয়োগ, বদলি ও নানা তদারকির কাজ করতেন সাঈদুর। পরবর্তী সময়ে নিজেও নিয়োগ ও বদলিতে জড়িয়ে পড়েন বলে অভিযোগ রয়েছে। তিনি ছিলেন খুলনা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি।
২০২৪ সালের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আলোচনার জন্ম দেন তিনি নিজেই। শেখ জুয়েলের পাশাপাশি খুলনা-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করেন সাঈদুর রহমান। তার প্রতীক ছিল ‘ঈগল’। খোদ এমপির এপিএস নির্বাচনে দাঁড়ানোয় আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি নিয়ে তখন গণমাধ্যমে একাধিক প্রতিবেদনও প্রকাশ হয়।
জানা যায়, চুকনগর কলেজে এমপিওভুক্ত শিক্ষক ছিলেন সাঈদুর। কিন্তু এপিএস হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর কলেজে অনিয়মিত থাকলেও নিয়মিত বেতন তুলেছেন। এমপিওভুক্ত শিক্ষক নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন না, তারপরও তার প্রার্থী হওয়া নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলার সাহস পাননি। গত বছরের জুলাই মাসে আন্দোলনের কিছুদিন আগে তিনি কলেজ থেকে অব্যাহতি নেন। কলেজ কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, গত ৩০ জুন তিনি অব্যাহতির আবেদন করেন এবং জুলাই মাসে তা গ্রহণ করা হয়।
তার যুক্তরাষ্ট্রে গমন এবং গণআন্দোলনের ঠিক আগমুহূর্তে কলেজ থেকে অব্যাহতি গ্রহণের বিষয়টিকে কেন্দ্র করে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে। অনেকে মনে করছেন, এটি পূর্বপরিকল্পিত ছিল।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র থেকে ঈদের দিনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কয়েকটি ছবি পোস্ট করেন সাঈদুর। এক ছবির ক্যাপশনে তিনি লেখেন, “এত ভালো ঈদ কাটবে কল্পনাও করিনি।”
২০২৪ সালের সংসদ নির্বাচনে তার দাখিলকৃত হলফনামা অনুযায়ী, নগদ ও ব্যাংক মিলে তার সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৯৭ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। ঝিনাইদহ, ঢাকা ও খুলনায় তার নামে এবং নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে তার স্ত্রীর নামে জমি রয়েছে।
তার বক্তব্য জানতে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
এদিকে খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “আমরা ত্যাগী কর্মীরা হামলা-মামলা খেয়ে এখনো পালিয়ে বেড়াই, আর সুবিধাভোগী এপিএসরা ভিসা নিয়ে আরাম-আয়েশে বিদেশে বসবাস করছে। কেউ কেউ দেশের ভেতরেই অন্য দলের সঙ্গে লিয়াজো করে ব্যবসা চালাচ্ছে। ঈদের সময়েও কেউ কেউ অন্য দলের ইফতার মাহফিলে গিয়েছেন। তারা আমাদের খবর রাখেনি, এমনকি খোঁজও নেয় না।”
স্থানীয়রা মনে করছেন, এসব সুবিধাভোগী নেতাদের সম্পদের উৎস খতিয়ে দেখতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। অনুসন্ধান চালালে অনেক অজানা তথ্য বেরিয়ে আসবে বলেও মত দিয়েছেন তারা।