ঢাকা ০৫:৫৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

লাখাইয়ে পরিচ্ছন্ন কর্মীর ভুল চিকিৎসায় প্রসূতি মায়ের অবস্থা আশঙ্কাজনক, চাকরি হারালেন অভিযুক্ত কর্মী

এম এ ওয়াহেদ, লাখাই, হবিগঞ্জ::

লাখাই উপজেলার করাব মডেল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকদের অনুপস্থিতির সুযোগে এক পরিচ্ছন্ন কর্মী দ্বারা প্রসব করানোর ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, অদক্ষ হাতে পরিচালিত চিকিৎসায় গুরুতর ভুলের কারণে প্রসূতি মায়ের অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়ে পড়েছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত পরিচ্ছন্ন কর্মী অনুরূপা রানী দাসকে চাকরি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার মনতৈল গ্রামের জুয়েনা আক্তার (২৫) নামের এক গর্ভবতী নারী গত শুক্রবার সকালে করাব মডেল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে ডেলিভারি সেবা নিতে আসেন। তবে ওই সময় কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা সুচিত্রা রানী ও সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা পরাশ উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন না। এ সুযোগে কেন্দ্রের পরিচ্ছন্ন কর্মী অনুরূপা রানী দাস নিজেই প্রসব করান এবং নিচে সেলাই করেন। অভিযোগ রয়েছে, ভুলভাবে সেলাই করার ফলে প্রসূতির মল ও মূত্রের রাস্তা একত্রিত হয়ে গুরুতর ইনফেকশন হয়।

ঘটনার পর জুয়েনা আক্তারের পরিবার বাড়ি ফিরে গেলে ইনফেকশনের লক্ষণ দেখা দেয়। পরবর্তীতে বিষয়টি অভিযুক্ত পরিচ্ছন্ন কর্মীকে জানালে তিনি তা গোপন রাখতে অনুরোধ করেন এবং চিকিৎসার সব খরচ বহনের আশ্বাস দেন। পরদিন জুয়েনাকে পুনরায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গেলে সেখানকার পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা সুচিত্রা রানী ভুল চিকিৎসার বিষয়টি শনাক্ত করেন এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন।

এদিকে একই কেন্দ্রে আরও একটি অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। পূর্ব বুল্লা গ্রামের ইয়াকুব হাসান অন্তর অভিযোগ করেন, তার স্ত্রীর প্রসবের সময় অনুরূপা রানী একটি ওষুধ কিনে খাওয়াতে বলেন, যার প্রভাবে তার স্ত্রীর অবস্থাও গুরুতর হয়ে পড়ে।

প্রসূতি মা জুয়েনা আক্তার বলেন, “আমরা বুঝতে পারিনি কে ডাক্তার আর কে পরিচ্ছন্ন কর্মী। আমরা ভেবেছিলাম অনুরূপা রানী দাস ডাক্তার, তাই তাঁর কাছে চিকিৎসা নিই।”

অভিযুক্ত অনুরূপা রানী দাস নিজেও ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, “আমার ভুল হয়েছে। আমি জুয়েনার সব চিকিৎসার খরচ বহন করব।”

এ বিষয়ে করাব স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পরিদর্শিকা সুচিত্রা রানী জানান, “আমি বিষয়টি উপজেলা কর্মকর্তাকে জানিয়েছি এবং কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন।”

উপজেলা পঃপঃ কর্মকর্তা ডা. নাঈমুর রহমান পিয়াস জানান, “ঘটনা জানার সঙ্গে সঙ্গে অভিযুক্ত পরিচ্ছন্ন কর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে এবং দায়িত্বরত দুইজন কর্মীর অনুপস্থিতির কারণ জানতে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। প্রসূতির চিকিৎসা ব্যয়ের দায়িত্ব স্বাস্থ্যকেন্দ্রই নেবে।”

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে এবং সাধারণ মানুষের মাঝে স্বাস্থ্যসেবার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

ট্যাগস :

নিউজটি টাইম লাইনে শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

চেকপোস্ট

Checkpost is one of the most popular Bengali news portal and print newspaper in Bangladesh. The print and online news portal started its operations with a commitment to fearless, investigative, informative and unbiased journalism.
আপডেট সময় ১১:৩৭:২৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫
৫১৪ বার পড়া হয়েছে

লাখাইয়ে পরিচ্ছন্ন কর্মীর ভুল চিকিৎসায় প্রসূতি মায়ের অবস্থা আশঙ্কাজনক, চাকরি হারালেন অভিযুক্ত কর্মী

আপডেট সময় ১১:৩৭:২৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫

লাখাই উপজেলার করাব মডেল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকদের অনুপস্থিতির সুযোগে এক পরিচ্ছন্ন কর্মী দ্বারা প্রসব করানোর ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, অদক্ষ হাতে পরিচালিত চিকিৎসায় গুরুতর ভুলের কারণে প্রসূতি মায়ের অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়ে পড়েছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত পরিচ্ছন্ন কর্মী অনুরূপা রানী দাসকে চাকরি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার মনতৈল গ্রামের জুয়েনা আক্তার (২৫) নামের এক গর্ভবতী নারী গত শুক্রবার সকালে করাব মডেল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে ডেলিভারি সেবা নিতে আসেন। তবে ওই সময় কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা সুচিত্রা রানী ও সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা পরাশ উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন না। এ সুযোগে কেন্দ্রের পরিচ্ছন্ন কর্মী অনুরূপা রানী দাস নিজেই প্রসব করান এবং নিচে সেলাই করেন। অভিযোগ রয়েছে, ভুলভাবে সেলাই করার ফলে প্রসূতির মল ও মূত্রের রাস্তা একত্রিত হয়ে গুরুতর ইনফেকশন হয়।

ঘটনার পর জুয়েনা আক্তারের পরিবার বাড়ি ফিরে গেলে ইনফেকশনের লক্ষণ দেখা দেয়। পরবর্তীতে বিষয়টি অভিযুক্ত পরিচ্ছন্ন কর্মীকে জানালে তিনি তা গোপন রাখতে অনুরোধ করেন এবং চিকিৎসার সব খরচ বহনের আশ্বাস দেন। পরদিন জুয়েনাকে পুনরায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গেলে সেখানকার পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা সুচিত্রা রানী ভুল চিকিৎসার বিষয়টি শনাক্ত করেন এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন।

এদিকে একই কেন্দ্রে আরও একটি অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। পূর্ব বুল্লা গ্রামের ইয়াকুব হাসান অন্তর অভিযোগ করেন, তার স্ত্রীর প্রসবের সময় অনুরূপা রানী একটি ওষুধ কিনে খাওয়াতে বলেন, যার প্রভাবে তার স্ত্রীর অবস্থাও গুরুতর হয়ে পড়ে।

প্রসূতি মা জুয়েনা আক্তার বলেন, “আমরা বুঝতে পারিনি কে ডাক্তার আর কে পরিচ্ছন্ন কর্মী। আমরা ভেবেছিলাম অনুরূপা রানী দাস ডাক্তার, তাই তাঁর কাছে চিকিৎসা নিই।”

অভিযুক্ত অনুরূপা রানী দাস নিজেও ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, “আমার ভুল হয়েছে। আমি জুয়েনার সব চিকিৎসার খরচ বহন করব।”

এ বিষয়ে করাব স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পরিদর্শিকা সুচিত্রা রানী জানান, “আমি বিষয়টি উপজেলা কর্মকর্তাকে জানিয়েছি এবং কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন।”

উপজেলা পঃপঃ কর্মকর্তা ডা. নাঈমুর রহমান পিয়াস জানান, “ঘটনা জানার সঙ্গে সঙ্গে অভিযুক্ত পরিচ্ছন্ন কর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে এবং দায়িত্বরত দুইজন কর্মীর অনুপস্থিতির কারণ জানতে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। প্রসূতির চিকিৎসা ব্যয়ের দায়িত্ব স্বাস্থ্যকেন্দ্রই নেবে।”

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে এবং সাধারণ মানুষের মাঝে স্বাস্থ্যসেবার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।