ঢাকা ০৩:২৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৫ অগাস্ট ২০২৫, ২০ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রূপসায় দেড় কোটি টাকার রাস্তা হস্তান্তরের আগেই ভেঙেছে ৩৫০ ফুট

মোঃ রবিউল হোসেন খান, খুলনা::

ছবি: সংগৃহীত

খুলনার রূপসা উপজেলার ঘাটভোগ ইউনিয়নে দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সড়কটি হস্তান্তরের আগেই ভেঙে পড়েছে প্রায় সাড়ে তিনশ ফুট। কাজ শেষের মাত্র পাঁচ দিনের মধ্যেই ১০ ফুট প্রস্থের সড়কের বড় অংশ ভেঙে যাওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

উপজেলা এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, বামনডাঙ্গা বাজার পুলিশ ক্যাম্প থেকে চাঁদপুর দাখিল মাদ্রাসা পর্যন্ত ১ হাজার ৪৮৫ মিটার পুরাতন সড়ক পুনঃনির্মাণের কাজ বাস্তবায়ন করা হয় “প্রশস্ত ও শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের” আওতায়। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রকল্পটির বরাদ্দ ছিল ১ কোটি ৫২ লাখ ২৮ হাজার ১১৫ টাকা। মেসার্স জারা ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজের দায়িত্ব পায়, যার মালিক মো. জিল্লুর রহমান। তবে প্রকৃত নির্মাণ কাজ করেন এস এম সালাউদ্দিন ও ওবায়দুল নামে দুই ব্যক্তি সাব-কন্ট্রাক্টর হিসেবে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সড়ক নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের কারণে কাজ চলাকালীন অবস্থায়ই ফাটল দেখা দেয়। তাদের বাধা উপেক্ষা করে দায়সারা কাজ সম্পন্ন করা হয়। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই একাধিক স্থানে রাস্তার গাঁ থেকে পুকুরের দিকে ধসে পড়ে প্রায় ২০ ফুট এলাকা।

এলাকার বাসিন্দা মো. আসমত আলী বলেন, “যেভাবে দায়সারা কাজ করেছে, এতে ভাঙন হবেই। গাইড ওয়াল না থাকায় বা যথাযথভাবে নির্মাণ না হওয়ায় বৃষ্টির পানি রক্ষা করতে পারেনি।”

স্থানীয় আরেক বাসিন্দা তালুকদার বাদশা মিয়া বলেন, “রাস্তা দুই পাশে পুকুর, মাঝখান দিয়ে ২০ ফুটের বেশি ভেঙে গেছে। গাইড ওয়াল উঁচু করে দিলে হয়তো এই দুর্ভোগ হতো না।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “সড়কটির মাটির গোড়া কেটে পায়েলিংয়ের ভেতর দেওয়ার কারণে তা দুর্বল হয়ে পড়ে। এর সাথে অপরিকল্পিত এস্টিমেট ও দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজের যোগফলে এমনটি হয়েছে।”

সাব-কন্ট্রাক্টর এস এম সালাউদ্দিন বলেন, “কাজ শেষ করেছিলাম। কিন্তু টানা বৃষ্টিতে ভেঙে গেছে। প্রকল্পে যেখানে ১০ মিটার খুঁটির প্রয়োজন ছিল, সেখানে এস্টিমেট দেওয়া হয়েছে মাত্র ৩ মিটার। এমন পরিকল্পনায় ক্ষতি হবেই।”

ঠিকাদার জিল্লুর রহমানের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী শোভন সরকার বলেন, “ঠিকাদারকে সংস্কারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিল এখনও চূড়ান্ত হয়নি। বৃষ্টি থামলে মেরামতের কাজ শুরু হবে।”

রূপসা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা রিক্তা বলেন, “বামনডাঙ্গা এলাকার সড়ক ভেঙে যাওয়ার খবর পেয়েছি। প্রকৌশলীকে সরেজমিনে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমরাও বিষয়টি মনিটরিং করছি।”

স্থানীয়রা বলছেন, এই রাস্তা ছিল তাদের একমাত্র ভরসা। এখন রাস্তার এই অবস্থায় তাদের দুর্ভোগ আরও বেড়ে

ট্যাগস :

নিউজটি টাইম লাইনে শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

চেকপোস্ট

Checkpost is one of the most popular Bengali news portal and print newspaper in Bangladesh. The print and online news portal started its operations with a commitment to fearless, investigative, informative and unbiased journalism.
আপডেট সময় ০৭:৫৭:৪১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ অগাস্ট ২০২৫
৫২৫ বার পড়া হয়েছে

রূপসায় দেড় কোটি টাকার রাস্তা হস্তান্তরের আগেই ভেঙেছে ৩৫০ ফুট

আপডেট সময় ০৭:৫৭:৪১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ অগাস্ট ২০২৫

খুলনার রূপসা উপজেলার ঘাটভোগ ইউনিয়নে দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সড়কটি হস্তান্তরের আগেই ভেঙে পড়েছে প্রায় সাড়ে তিনশ ফুট। কাজ শেষের মাত্র পাঁচ দিনের মধ্যেই ১০ ফুট প্রস্থের সড়কের বড় অংশ ভেঙে যাওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

উপজেলা এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, বামনডাঙ্গা বাজার পুলিশ ক্যাম্প থেকে চাঁদপুর দাখিল মাদ্রাসা পর্যন্ত ১ হাজার ৪৮৫ মিটার পুরাতন সড়ক পুনঃনির্মাণের কাজ বাস্তবায়ন করা হয় “প্রশস্ত ও শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের” আওতায়। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রকল্পটির বরাদ্দ ছিল ১ কোটি ৫২ লাখ ২৮ হাজার ১১৫ টাকা। মেসার্স জারা ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজের দায়িত্ব পায়, যার মালিক মো. জিল্লুর রহমান। তবে প্রকৃত নির্মাণ কাজ করেন এস এম সালাউদ্দিন ও ওবায়দুল নামে দুই ব্যক্তি সাব-কন্ট্রাক্টর হিসেবে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সড়ক নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের কারণে কাজ চলাকালীন অবস্থায়ই ফাটল দেখা দেয়। তাদের বাধা উপেক্ষা করে দায়সারা কাজ সম্পন্ন করা হয়। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই একাধিক স্থানে রাস্তার গাঁ থেকে পুকুরের দিকে ধসে পড়ে প্রায় ২০ ফুট এলাকা।

এলাকার বাসিন্দা মো. আসমত আলী বলেন, “যেভাবে দায়সারা কাজ করেছে, এতে ভাঙন হবেই। গাইড ওয়াল না থাকায় বা যথাযথভাবে নির্মাণ না হওয়ায় বৃষ্টির পানি রক্ষা করতে পারেনি।”

স্থানীয় আরেক বাসিন্দা তালুকদার বাদশা মিয়া বলেন, “রাস্তা দুই পাশে পুকুর, মাঝখান দিয়ে ২০ ফুটের বেশি ভেঙে গেছে। গাইড ওয়াল উঁচু করে দিলে হয়তো এই দুর্ভোগ হতো না।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “সড়কটির মাটির গোড়া কেটে পায়েলিংয়ের ভেতর দেওয়ার কারণে তা দুর্বল হয়ে পড়ে। এর সাথে অপরিকল্পিত এস্টিমেট ও দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজের যোগফলে এমনটি হয়েছে।”

সাব-কন্ট্রাক্টর এস এম সালাউদ্দিন বলেন, “কাজ শেষ করেছিলাম। কিন্তু টানা বৃষ্টিতে ভেঙে গেছে। প্রকল্পে যেখানে ১০ মিটার খুঁটির প্রয়োজন ছিল, সেখানে এস্টিমেট দেওয়া হয়েছে মাত্র ৩ মিটার। এমন পরিকল্পনায় ক্ষতি হবেই।”

ঠিকাদার জিল্লুর রহমানের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী শোভন সরকার বলেন, “ঠিকাদারকে সংস্কারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিল এখনও চূড়ান্ত হয়নি। বৃষ্টি থামলে মেরামতের কাজ শুরু হবে।”

রূপসা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা রিক্তা বলেন, “বামনডাঙ্গা এলাকার সড়ক ভেঙে যাওয়ার খবর পেয়েছি। প্রকৌশলীকে সরেজমিনে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমরাও বিষয়টি মনিটরিং করছি।”

স্থানীয়রা বলছেন, এই রাস্তা ছিল তাদের একমাত্র ভরসা। এখন রাস্তার এই অবস্থায় তাদের দুর্ভোগ আরও বেড়ে