ঢাকা ০৭:৪০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাজশাহীতে নতুন জাতের আম কাটিমন, বারোমাস আমের উৎসব

মো: গোলাম কিবরিয়া, রাজশাহী প্রতিনিধি::

ছবি: সংগৃহীত

দেশজুড়ে আমের মৌসুম শেষ হলেও রাজশাহীসহ বরেন্দ্র অঞ্চলে দেখা যাচ্ছে এক ভিন্ন চিত্র। এখনো গাছে গাছে ঝুলছে সুস্বাদু কাটিমন আম, যেন নতুন করে শুরু হয়েছে আমের মৌসুম। বিশেষ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও রাজশাহীর অসংখ্য বাগানে ঝুলছে থোকায় থোকায় আম, যা পথচারীদের দৃষ্টি কাড়ছে।

কৃষিবিদদের মতে, কাটিমন বা সুইট কাটিমন থাইল্যান্ড থেকে আনা একটি বিশেষ জাত। দেশীয় জাতের বাইরে এ জাতের আম সারাবছর চাষ করা যায়। মৌসুমের বাইরেও বাজারে এই আমের চাহিদা থাকে, ফলে দামও ভালো। চাষিরা বছরে দু’বার আম সংগ্রহ করতে পারেন, এজন্য দিন দিন বাড়ছে কাটিমন চাষে আগ্রহ।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার আমনুরা থেকে নাচোল-আড্ডা, নওগাঁর পোরশা-নিয়ামতপুর সড়ক কিংবা তানোর উপজেলার মুন্ডুমালা থেকে কলমা পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে এখন দেখা যায় অসংখ্য কাটিমন আমের বাগান। নাচোল উপজেলার লক্ষিপুর মোড়ে একটি বাগানে ছোট ছোট গাছে টসটসে আম ঝুলতে দেখা যায়।

বাগান মালিক টি ইসলাম জানান, সাত বিঘা জমিতে প্রথমে কাটিমন আম চাষ শুরু করেন তিনি। বর্তমানে তার সাতটি বাগানে ১৫–১৬ হাজার গাছ রয়েছে, সবগুলোতেই ফলন আসছে। পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি কাটিমন আম বিক্রি হচ্ছে ২০০–৩০০ টাকায়। বছরে দু’বার আম সংগ্রহ করে কয়েক লাখ টাকা আয় করছেন তিনি।

রাজশাহীর তানোর উপজেলার কৃষক তাবারক হোসেন বলেন, আগে তিনি দেশি জাতের আম (গোপাল ভোগ, নেংড়া, ঘিরসা) চাষ করতেন। কিন্তু খরচের তুলনায় লাভ না হওয়ায় এখন ২৫ বিঘা জমিতে প্রায় আড়াই হাজার কাটিমন গাছ করেছেন। চলতি বছরই তিনি ভালো ফলনের আশা করছেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের কৃষিবিদ ড. জহুরুল ইসলাম জানান, পরীক্ষামূলক সফলতার পর কাটিমন চাষ নিয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হর্টিকালচার সেন্টার ও নার্সারির মাধ্যমে এ জাতের চারা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষ করে রাজশাহী, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে কৃষকদের আগ্রহ বেশি।

তিনি আরও বলেন, কাটিমন চাষে বাড়তি যত্ন প্রয়োজন। এটি শুষ্ক আবহাওয়ার ফসল। দেশি আমের তুলনায় আলাদা পরিচর্যা লাগে। মৌসুমের বাইরে ফলন চাইলে মৌসুমে আসা মুকুল বা গুটি ছেঁটে দিতে হয়, যাকে বলা হয় প্রুনিং। এটিই কাটিমন চাষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।

বরেন্দ্র অঞ্চলের গ্রামীণ সড়ক দিয়ে যে কেউ গেলেই দেখতে পাবেন আমে ভরা ছোট-বড় বাগান। মৌসুম শেষ হলেও গাছে ঝুলন্ত কাটিমন আম যেন মনে করিয়ে দিচ্ছে—বরেন্দ্রতে এখন বারোমাসই আমের উৎসব।

নিউজটি টাইম লাইনে শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

চেকপোস্ট

Checkpost is one of the most popular Bengali news portal and print newspaper in Bangladesh. The print and online news portal started its operations with a commitment to fearless, investigative, informative and unbiased journalism.
আপডেট সময় ০৫:২৮:৫৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
৫২৭ বার পড়া হয়েছে

রাজশাহীতে নতুন জাতের আম কাটিমন, বারোমাস আমের উৎসব

আপডেট সময় ০৫:২৮:৫৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

দেশজুড়ে আমের মৌসুম শেষ হলেও রাজশাহীসহ বরেন্দ্র অঞ্চলে দেখা যাচ্ছে এক ভিন্ন চিত্র। এখনো গাছে গাছে ঝুলছে সুস্বাদু কাটিমন আম, যেন নতুন করে শুরু হয়েছে আমের মৌসুম। বিশেষ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও রাজশাহীর অসংখ্য বাগানে ঝুলছে থোকায় থোকায় আম, যা পথচারীদের দৃষ্টি কাড়ছে।

কৃষিবিদদের মতে, কাটিমন বা সুইট কাটিমন থাইল্যান্ড থেকে আনা একটি বিশেষ জাত। দেশীয় জাতের বাইরে এ জাতের আম সারাবছর চাষ করা যায়। মৌসুমের বাইরেও বাজারে এই আমের চাহিদা থাকে, ফলে দামও ভালো। চাষিরা বছরে দু’বার আম সংগ্রহ করতে পারেন, এজন্য দিন দিন বাড়ছে কাটিমন চাষে আগ্রহ।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার আমনুরা থেকে নাচোল-আড্ডা, নওগাঁর পোরশা-নিয়ামতপুর সড়ক কিংবা তানোর উপজেলার মুন্ডুমালা থেকে কলমা পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে এখন দেখা যায় অসংখ্য কাটিমন আমের বাগান। নাচোল উপজেলার লক্ষিপুর মোড়ে একটি বাগানে ছোট ছোট গাছে টসটসে আম ঝুলতে দেখা যায়।

বাগান মালিক টি ইসলাম জানান, সাত বিঘা জমিতে প্রথমে কাটিমন আম চাষ শুরু করেন তিনি। বর্তমানে তার সাতটি বাগানে ১৫–১৬ হাজার গাছ রয়েছে, সবগুলোতেই ফলন আসছে। পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি কাটিমন আম বিক্রি হচ্ছে ২০০–৩০০ টাকায়। বছরে দু’বার আম সংগ্রহ করে কয়েক লাখ টাকা আয় করছেন তিনি।

রাজশাহীর তানোর উপজেলার কৃষক তাবারক হোসেন বলেন, আগে তিনি দেশি জাতের আম (গোপাল ভোগ, নেংড়া, ঘিরসা) চাষ করতেন। কিন্তু খরচের তুলনায় লাভ না হওয়ায় এখন ২৫ বিঘা জমিতে প্রায় আড়াই হাজার কাটিমন গাছ করেছেন। চলতি বছরই তিনি ভালো ফলনের আশা করছেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের কৃষিবিদ ড. জহুরুল ইসলাম জানান, পরীক্ষামূলক সফলতার পর কাটিমন চাষ নিয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হর্টিকালচার সেন্টার ও নার্সারির মাধ্যমে এ জাতের চারা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষ করে রাজশাহী, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে কৃষকদের আগ্রহ বেশি।

তিনি আরও বলেন, কাটিমন চাষে বাড়তি যত্ন প্রয়োজন। এটি শুষ্ক আবহাওয়ার ফসল। দেশি আমের তুলনায় আলাদা পরিচর্যা লাগে। মৌসুমের বাইরে ফলন চাইলে মৌসুমে আসা মুকুল বা গুটি ছেঁটে দিতে হয়, যাকে বলা হয় প্রুনিং। এটিই কাটিমন চাষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।

বরেন্দ্র অঞ্চলের গ্রামীণ সড়ক দিয়ে যে কেউ গেলেই দেখতে পাবেন আমে ভরা ছোট-বড় বাগান। মৌসুম শেষ হলেও গাছে ঝুলন্ত কাটিমন আম যেন মনে করিয়ে দিচ্ছে—বরেন্দ্রতে এখন বারোমাসই আমের উৎসব।