ঢাকা ০৫:১৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত

যেসব কারণে একাকী কোরবানি করা উত্তম

চেকপোস্ট ডেস্ক::

কোরবানি ইসলামি শরিয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। আল্লাহ তাআলা কোরবানির নির্দেশ দিয়ে বলেন— ‘আপনি আপনার রবের উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ুন এবং কোরবানি আদায় করুন।’ (সুরা কাউসার: ২)

কোরবানি শরিকে করা যায়, একাকীও করা যায়। তবে সামর্থ্য থাকলে একাকী একটি পশু কোরবানি করাই উত্তম। এতে অনেক ঝুঁকি থেকে নিরাপদ থাকা যায় এবং আল্লাহর কাছে কবুল হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি থাকে। যেসব ঝুঁকির কারণে কোরবানি একাকী করা উত্তম, তা নিচে তুলে ধরা হলো।

১. ইসলামি শরিয়তের বিধান হলো- শরিকের মধ্যে শুধু একজনের নিয়তে গণ্ডগোল থাকলে কারো কোরবানিই শুদ্ধ হবে না। এ বিষয়ে ফতোয়ার কিতাবগুলোতে বলা হয়েছে—যদি কেউ আল্লাহ তাআলার হুকুম পালনের উদ্দেশ্যে কোরবানি না করে শুধু গোশত খাওয়ার নিয়তে কোরবানি করে তাহলে তার কোরবানি সহিহ হবে না। তাকে অংশীদার বানালে শরিকদের কারো কোরবানি হবে না। তাই অত্যন্ত সতর্কতার সাথে শরিক নির্বাচন করতে হবে। (বাদায়েউস সানায়ে: ৪/২০৮, কাজিখান: ৩/৩৪৯)

২. জেনেশুনে হারাম উপার্জনকারীকে কোরবানির অংশিদার করলে অন্য শরিকদের কোরবানিও সহিহ হবে না। (সুরা বাকারা: ৪২; মুসলিম: ১০১৫) তবে, বিষয়টি অন্য শরিকদের অজানা থাকলে তাদের কোরবানি হবে, শুধু হারাম টাকার অংশীদারের কোরবানি হবে না। (সুরা বাকারা: ২৮৬)

কিন্তু অনেক সময় হারাম উপার্জনকারী আত্মীয় হওয়ার কারণে বাদ দেওয়ারও সুযোগ থাকে না কিংবা বাদ দিতে গেলে সমাজে একটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়ার আশংকা থাকে। অথচ একজন বেনামাজিকেও কোরবানির অংশে শরিক করতে নিষেধ করেন আলেমরা। কারণ, যে লোক নামাজের গুরুত্ব বোঝে না, নামাজের ব্যাপারে আল্লাহর ভয় নেই, সে আল্লাহর জন্য কোরবানি করবে—বিষয়টি অসম্ভব। গোশত খাওয়ার নিয়তই থাকবে তার।

এসব বিষয় বিবেচনা করেই আলেমরা বলে থাকেন যে, সামর্থ্য থাকলে একাকী কোরবানি করাই উত্তম। আর কম সামর্থ্যওয়ালা ব্যক্তি শরিকের পরিবর্তে ছাগল-ভেড়াও তো কোরবানি করতে পারেন। সেটাই ভালো।

তবে হ্যাঁ শরিকে কোরবানি করা জায়েজ। শুধু খেয়াল রাখতে হবে- ভালো লোকগুলোকেই যেন শরিক করা হয়। গরু, মহিষ ও উট—এই তিন প্রকার পশুর একেকটিতে সর্বোচ্চ সাত ব্যক্তি পর্যন্ত শরিক হয়ে কোরবানি করতে পারবে। তবে শর্ত হলো কারো অংশ যেন এক-সপ্তমাংশের চেয়ে কম না হয়। যদি কোনো শরিকের অংশ সপ্তমাংশের কম হয় তবে সবার কোরবানিই নষ্ট হয়ে যাবে। (ফতোয়ায়ে আলমগিরি: ৫/৩০৪)

উল্লেখ্য, সামর্থ্য থাকার পরও যে কোরবানি করে না, হাদিসে তার নিন্দা করা হয়েছে। ছাগল, ভেড়া বা দুম্বা দ্বারা কোরবানি দিলে একা দিতে হবে (মুসলিম: ১৩১৮; কাজিখান: ৩/৩৪৯)। গরু-মহিষ ও উটের ক্ষেত্রে একটি প্রাণীতে সর্বাধিক সাতজন অংশীদার হতে পারেন, চাই একই পরিবারের সদস্য হোক বা একাধিক পরিবারের। (নুখাবুল আফকার: ১২/৫৩২, মিরকাত: ৩/১০৮০)

ট্যাগস :

নিউজটি টাইম লাইনে শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

চেকপোস্ট

Checkpost is one of the most popular Bengali news portal and print newspaper in Bangladesh. The print and online news portal started its operations with a commitment to fearless, investigative, informative and unbiased journalism.
আপডেট সময় ০৩:০৫:৫৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪
৫৩১ বার পড়া হয়েছে

একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত

যেসব কারণে একাকী কোরবানি করা উত্তম

আপডেট সময় ০৩:০৫:৫৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪

কোরবানি ইসলামি শরিয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। আল্লাহ তাআলা কোরবানির নির্দেশ দিয়ে বলেন— ‘আপনি আপনার রবের উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ুন এবং কোরবানি আদায় করুন।’ (সুরা কাউসার: ২)

কোরবানি শরিকে করা যায়, একাকীও করা যায়। তবে সামর্থ্য থাকলে একাকী একটি পশু কোরবানি করাই উত্তম। এতে অনেক ঝুঁকি থেকে নিরাপদ থাকা যায় এবং আল্লাহর কাছে কবুল হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি থাকে। যেসব ঝুঁকির কারণে কোরবানি একাকী করা উত্তম, তা নিচে তুলে ধরা হলো।

১. ইসলামি শরিয়তের বিধান হলো- শরিকের মধ্যে শুধু একজনের নিয়তে গণ্ডগোল থাকলে কারো কোরবানিই শুদ্ধ হবে না। এ বিষয়ে ফতোয়ার কিতাবগুলোতে বলা হয়েছে—যদি কেউ আল্লাহ তাআলার হুকুম পালনের উদ্দেশ্যে কোরবানি না করে শুধু গোশত খাওয়ার নিয়তে কোরবানি করে তাহলে তার কোরবানি সহিহ হবে না। তাকে অংশীদার বানালে শরিকদের কারো কোরবানি হবে না। তাই অত্যন্ত সতর্কতার সাথে শরিক নির্বাচন করতে হবে। (বাদায়েউস সানায়ে: ৪/২০৮, কাজিখান: ৩/৩৪৯)

২. জেনেশুনে হারাম উপার্জনকারীকে কোরবানির অংশিদার করলে অন্য শরিকদের কোরবানিও সহিহ হবে না। (সুরা বাকারা: ৪২; মুসলিম: ১০১৫) তবে, বিষয়টি অন্য শরিকদের অজানা থাকলে তাদের কোরবানি হবে, শুধু হারাম টাকার অংশীদারের কোরবানি হবে না। (সুরা বাকারা: ২৮৬)

কিন্তু অনেক সময় হারাম উপার্জনকারী আত্মীয় হওয়ার কারণে বাদ দেওয়ারও সুযোগ থাকে না কিংবা বাদ দিতে গেলে সমাজে একটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়ার আশংকা থাকে। অথচ একজন বেনামাজিকেও কোরবানির অংশে শরিক করতে নিষেধ করেন আলেমরা। কারণ, যে লোক নামাজের গুরুত্ব বোঝে না, নামাজের ব্যাপারে আল্লাহর ভয় নেই, সে আল্লাহর জন্য কোরবানি করবে—বিষয়টি অসম্ভব। গোশত খাওয়ার নিয়তই থাকবে তার।

এসব বিষয় বিবেচনা করেই আলেমরা বলে থাকেন যে, সামর্থ্য থাকলে একাকী কোরবানি করাই উত্তম। আর কম সামর্থ্যওয়ালা ব্যক্তি শরিকের পরিবর্তে ছাগল-ভেড়াও তো কোরবানি করতে পারেন। সেটাই ভালো।

তবে হ্যাঁ শরিকে কোরবানি করা জায়েজ। শুধু খেয়াল রাখতে হবে- ভালো লোকগুলোকেই যেন শরিক করা হয়। গরু, মহিষ ও উট—এই তিন প্রকার পশুর একেকটিতে সর্বোচ্চ সাত ব্যক্তি পর্যন্ত শরিক হয়ে কোরবানি করতে পারবে। তবে শর্ত হলো কারো অংশ যেন এক-সপ্তমাংশের চেয়ে কম না হয়। যদি কোনো শরিকের অংশ সপ্তমাংশের কম হয় তবে সবার কোরবানিই নষ্ট হয়ে যাবে। (ফতোয়ায়ে আলমগিরি: ৫/৩০৪)

উল্লেখ্য, সামর্থ্য থাকার পরও যে কোরবানি করে না, হাদিসে তার নিন্দা করা হয়েছে। ছাগল, ভেড়া বা দুম্বা দ্বারা কোরবানি দিলে একা দিতে হবে (মুসলিম: ১৩১৮; কাজিখান: ৩/৩৪৯)। গরু-মহিষ ও উটের ক্ষেত্রে একটি প্রাণীতে সর্বাধিক সাতজন অংশীদার হতে পারেন, চাই একই পরিবারের সদস্য হোক বা একাধিক পরিবারের। (নুখাবুল আফকার: ১২/৫৩২, মিরকাত: ৩/১০৮০)