মোহনপুর রাবার ড্যামে ছিদ্র, সম্ভব হচ্ছে না নদীর পানি ধরে রাখা
দিনাজপুর সদর ও চিরিরবন্দর উপজেলার কয়েক হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে দুটি রাবার ড্যাম নির্মিত হয়েছিল। এলজিইডি (স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর) ২০০১ সালে চিরিরবন্দর উপজেলার কাঁকড়া নদীতে সাঁইতাড়া এলাকায় এবং ২০১৩ সালে আত্রাই নদীর মোহনপুর এলাকায় দুটি রাবার ড্যাম নির্মাণ করে। তবে, সম্প্রতি মোহনপুর রাবার ড্যামটির বেলুন ফুটো হওয়ায় পানি ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। একই সাথে কাঁকড়া নদীর খননকাজ অসম্পূর্ণ থাকায় পানির প্রবাহ স্থিতিশীল হয়নি, যার ফলে ড্যাম দুটি সেচ সুবিধা প্রদান করতে পারছে না।
এ অবস্থায় কৃষকরা তাদের সেচের জন্য গভীর নলকূপ ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন, যা সেচ খরচ দ্বিগুণেরও বেশি বাড়িয়ে দিয়েছে।
দিনাজপুর এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে মোহনপুর এলাকায় ১৩৫ মিটার দৈর্ঘ্যের রাবার ড্যাম নির্মাণ করা হয়েছিল। এই ড্যামের ক্ষমতা ছিল ৪৪ কিলোমিটার এলাকায় পানি মজুত রাখার। অপরদিকে, কাঁকড়া নদীর ওপর ৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত সাঁইতাড়া রাবার ড্যামটি ১৩০ ফুট দৈর্ঘ্যের।
কৃষকরা জানিয়েছেন, প্রতিবছরই বোরো মৌসুমে মোহনপুর রাবার ড্যামটিতে সমস্যা দেখা দেয় এবং প্রতিবার চালু করার সময় বেলুনের ফুটো হওয়ায় পানি ধরে রাখা সম্ভব হয় না। যদিও কর্তৃপক্ষ স্থায়ী সমাধানে ব্যবস্থা নিচ্ছে না, তবে সম্প্রতি কাঁকড়া নদীর খননকাজ করা হয়েছে। তবে, এটি অসম্পূর্ণ থাকায় পানির সঠিক প্রবাহ বজায় রাখা সম্ভব হয়নি। কাঁকড়ার উভয় পারের কৃষকরা যথাযথ সেচ সুবিধা পাচ্ছেন না।
চিরিরবন্দর উপজেলার জগন্নাথপুর এলাকার কৃষক কৈলাশ চন্দ্র সরকার বলেন, “এবার ড্যাম দুটি চালু না হওয়ায় সেচের খরচ দ্বিগুণ হয়ে গেছে। গত বছর সেচের জন্য ১০০০-১২০০ টাকা খরচ হয়েছিল, এখন তা বেড়ে সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা হয়ে গেছে।”
পাঁচবাড়ী এলাকার কৃষক নজরুল ইসলাম জানান, “যদি দ্রুত ড্যামটি মেরামত করা যায় অথবা কাঁকড়া নদীর খননকাজ সম্পন্ন করা হয়, তবে কৃষকেরা ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবেন।”
জগন্নাথপুর এলাকায় কাঁকড়া নদী থেকে চিরি নদীতে একটি শাখা বের হয়েছে, তবে সেখানে পানি নেই। সেখানেও সেচ সুবিধা না থাকায় কৃষকরা বিপদে পড়ছেন। পাউবোর পক্ষ থেকে সেচ সুবিধার জন্য কিছু জলকপাট তৈরি করা হলেও, সেগুলোও কার্যকর হয়নি।
চিরিরবন্দর ও সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রায় আড়াই থেকে তিন হাজার হেক্টর জমি রাবার ড্যামের সেচ সুবিধার আওতায় রয়েছে। তবে নদী থেকে পানি না থাকায় কৃষকরা ৪৩৯টি বিদ্যুৎ-চালিত গভীর নলকূপ এবং ২৫৮টি ডিজেল-চালিত নলকূপ দিয়ে সেচ কার্যক্রম চালাচ্ছেন।
এ বিষয়ে এলজিইডি জানিয়েছে, নতুন ব্যাগের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে এবং বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।