ঢাকা ০৩:৫০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মোবাইল সাংবাদিকতা: ডিজিটাল যুগের সংবাদ বিপ্লব

শেখ শাহাউর রহমান বেলাল::

মুক্তকথা

শেখ শাহাউর রহমান বেলাল::

প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে যেখানে এক বিপ্লবী পরিবর্তন এনে দিয়েছে, সেখানে সাংবাদিকতা ক্ষেত্রও এর দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছে। মোবাইল সাংবাদিকতা, যা স্মার্টফোনের মাধ্যমে সংবাদ সংগ্রহ, সম্পাদনা এবং প্রচারের পদ্ধতি, আজকের দিনে সাংবাদিকতার অঙ্গনে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। আজকের সাংবাদিকরা এখন খবর সংগ্রহ করার জন্য বড় ক্যামেরা, স্যাটেলাইট অথবা রেডিও উপকরণের বদলে একটি মোবাইল ফোন ব্যবহার করে পুরো সংবাদ পরিবেশন করতে সক্ষম। এটি সংবাদ পরিবেশন, সংবাদ সংগ্রহ, ভিডিও শুটিং, অডিও রেকর্ডিং, এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে দ্রুত শেয়ার করার একটি শক্তিশালী এবং সহজ মাধ্যম হয়ে উঠেছে।

মোবাইল সাংবাদিকতার ধারণাটি অনেকটা হঠাৎ করে শুরু হয়নি, তবে প্রযুক্তির আধুনিকীকরণের সঙ্গে এটি সাংবাদিকতার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি মূলত ২০০০ সাল নাগাদ আধুনিক স্মার্টফোনের প্রযুক্তির মাধ্যমে শুরু হয়, যখন ফোনের ক্যামেরা, ইন্টারনেট সংযোগ এবং ভিডিও রেকর্ডিংয়ের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। আর ২০১০ এর পর, বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সংবাদ দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে, মোবাইল সাংবাদিকতা তখন সাংবাদিকতার ধারায় নতুন একটি যুগের সূচনা করে।

স্মার্টফোনের ক্যামেরা ও ইন্টারনেট সুবিধা সাংবাদিকদের জন্য একটি নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত খুলে দেয়। একসময় যা শুধুমাত্র বড় সাংবাদিক প্রতিষ্ঠানগুলোই করতে পারত, তা এখন মোবাইল ফোনের মাধ্যমে একজন সাধারণ সাংবাদিকও করতে সক্ষম। প্রথম দিকে শুধুমাত্র ব্যক্তিগত খবর, ছোট আকারে ভিডিও, ছবি ইত্যাদি শেয়ার করা হলেও, এখন মোবাইল সাংবাদিকতা বড় বড় সংবাদ প্রতিষ্ঠানেও ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি সাংবাদিকদের হাতে একটি পোর্টেবল স্টুডিও প্রদান করেছে, যা যে কোন জায়গায় থেকে সংবাদ সংগ্রহ এবং তা দ্রুত জনসাধারণের কাছে পৌঁছানোর ক্ষমতা রাখে।

দ্রুত সংবাদ পরিবেশন: মোবাইল সাংবাদিকতার সবচেয়ে বড় সুবিধা হল তার দ্রুততা। আধুনিক স্মার্টফোনের ক্যামেরা, গতি এবং ইন্টারনেট সংযোগের ক্ষমতা সাংবাদিকদের এখন এক ক্লিকেই সংবাদ সংগ্রহ, সম্পাদনা এবং তা বিশ্বব্যাপী পাঠানোর সুযোগ দেয়। প্রাকৃতিক বিপর্যয়, রাজনৈতিক আন্দোলন কিংবা গুরুত্বপূর্ণ কোনো ঘটনা ঘটলে, মোবাইল সাংবাদিকতার মাধ্যমে মুহূর্তের মধ্যে সংবাদ সংগ্রহ ও পাঠানো সম্ভব। যেমন, ২০১১ সালে আরব বসন্তের সময় মোবাইল ফোনের মাধ্যমে হাজার হাজার প্রতিবেদন তৈরি হয়ে ছিল এবং সেগুলি বিশ্বজুড়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল।

সাশ্রয়ী এবং সহজলভ্য: প্রথাগত সংবাদ সংগ্রহের জন্য যেখানে প্রচুর অর্থ এবং বড় প্রযুক্তি উপকরণের প্রয়োজন হত, সেখানে মোবাইল সাংবাদিকতা কম খরচে কার্যকরী সংবাদ পরিবেশন করতে সক্ষম। একটি স্মার্টফোন, ইন্টারনেট সংযোগ, এবং কিছু সহজ সফটওয়্যার ব্যবহার করলেই একজন সাংবাদিক নিজের হাতে এক সম্পূর্ণ সংবাদ সংগ্রহ এবং সম্পাদনার পদ্ধতি পেয়ে যায়। এর ফলে বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সংবাদ মাধ্যমের খরচ কমে যায় এবং সাংবাদিকতা আরো সহজলভ্য হয়।

মোবাইল সাংবাদিকতা শুধুমাত্র সংবাদ সংগ্রহের একটি পদ্ধতি নয়, এটি এক নতুন ধারণায় সংবাদ প্রকাশের ব্যবস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ছবি, ভিডিও, তথ্য, প্রাসঙ্গিক টেক্সট সহ সম্পূর্ণ খবর একসাথে পাঠানো যায়, যা সাধারণত বড় প্রতিষ্ঠানে রিপোর্টিংয়ের ক্ষেত্রে সম্ভব নয়। সাংবাদিকরা সরাসরি প্রাসঙ্গিক তথ্য এবং গল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন। আরও উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, সাংবাদিকরা সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে সরাসরি সংবাদ শেয়ার করতে পারেন, যা দ্রুত পাঠক শ্রেণীর কাছে পৌঁছে যায়।

মোবাইল সাংবাদিকতার আরেকটি শক্তিশালী দিক হলো এটি পাঠকদের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করতে সাহায্য করে। যখন খবর প্রকাশ করা হয়, পাঠকরা তা দ্রুত সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার, মন্তব্য বা বিতর্ক তৈরি করতে পারে। এটি সাংবাদিকদের আরো দক্ষ এবং প্রাসঙ্গিক খবর সরবরাহে সহায়তা করে। পাঠক এবং সাংবাদিকের মধ্যে একটি দ্বিমুখী যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি হয়, যা সংবাদ পরিবেশনের গতি এবং প্রাসঙ্গিকতা বাড়ায়।

যদিও মোবাইল সাংবাদিকতা অসংখ্য সুবিধা নিয়ে এসেছে, তবুও কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। প্রথমত, তথ্য যাচাই একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। মোবাইল সাংবাদিকতার মাধ্যমে সংবাদ সংগ্রহের সময় অনেক সময় ভুল বা বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে পড়ে, যা পরে সংশোধন করা কঠিন হতে পারে। তথ্যে ভুল বা বিভ্রান্তির শিকার হলে, এটি সাংবাদিকতার বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

অন্যদিকে গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তা বিষয়েও বিপদ রয়েছে। সাংবাদিকরা মাঠ পর্যায় থেকে সংবাদের জন্য ছবি, ভিডিও এবং তথ্য সংগ্রহ করেন, কিন্তু সেগুলি অনেক সময় রাজনৈতিক বা সামাজিকভাবে সংবেদনশীল হতে পারে। এটি গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তা উদ্বেগ সৃষ্টি করে।

প্রযুক্তিগত দক্ষতার অভাব এবং মোবাইলের মাধ্যমে ভিডিও এডিটিং বা সংবাদ সম্পাদনার উপযুক্ত প্রশিক্ষণের অভাবও একটি চ্যালেঞ্জ। একদিকে প্রযুক্তি সহজলভ্য হলেও, সাংবাদিকদের এই প্রযুক্তি দক্ষভাবে ব্যবহার করার জন্য প্রশিক্ষিত হতে হবে।

মোবাইল সাংবাদিকতা এখনকার সাংবাদিকতার ভবিষ্যত হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। প্রযুক্তির উন্নতি, স্মার্টফোনের ক্যামেরার উন্নতি, এবং নতুন অ্যাপ্লিকেশনগুলির মাধ্যমে মোবাইল সাংবাদিকতা আরও দ্রুত, সাশ্রয়ী, এবং কার্যকরী হয়ে উঠবে। সাংবাদিকদের জন্য যেকোনো স্থান থেকে সংবাদ সংগ্রহ এবং তা আপডেট করার সুবিধা দেবে এই পদ্ধতি।

এছাড়া ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম এবং সোশ্যাল মিডিয়ার প্রসার সাংবাদিকদের কাজকে আরও শক্তিশালী করবে। ভবিষ্যতে, এই প্রযুক্তির ব্যবহারে অধিক সংখ্যক পাঠক সংবাদটির প্রতি আরও গভীর আগ্রহী হবে এবং সাংবাদিকদের সঠিক তথ্য এবং দ্রুত সংবাদের মাধ্যমে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অব্যাহত থাকবে।

মোবাইল সাংবাদিকতা সাংবাদিকতার নতুন যুগের সূচনা করেছে। এটি সাংবাদিকদের হাতে সাশ্রয়ী, দ্রুত, এবং কার্যকরী সংবাদ পরিবেশন করার ক্ষমতা দিয়েছে। যদিও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে, মোবাইল সাংবাদিকতার সুবিধাগুলি সাংবাদিকদের জন্য একটি শক্তিশালী টুল হিসেবে কাজ করছে। আগামী দিনে মোবাইল সাংবাদিকতা তথ্য পরিবেশন এবং পাঠকের কাছে সত্য তুলে ধরার ক্ষেত্রে আরও বেশি শক্তিশালী ভূমিকা পালন করবে, তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।

 

 

শেখ শাহাউর রহমান বেলাল

সম্পাদক/প্রকাশক: চেকপোস্ট

 

 

 

ট্যাগস :

নিউজটি টাইম লাইনে শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

চেকপোস্ট

Checkpost is one of the most popular Bengali news portal and print newspaper in Bangladesh. The print and online news portal started its operations with a commitment to fearless, investigative, informative and unbiased journalism.
আপডেট সময় ১০:৫২:৪৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ জানুয়ারী ২০২৫
৫৩৮ বার পড়া হয়েছে

মোবাইল সাংবাদিকতা: ডিজিটাল যুগের সংবাদ বিপ্লব

আপডেট সময় ১০:৫২:৪৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ জানুয়ারী ২০২৫

শেখ শাহাউর রহমান বেলাল::

প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে যেখানে এক বিপ্লবী পরিবর্তন এনে দিয়েছে, সেখানে সাংবাদিকতা ক্ষেত্রও এর দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছে। মোবাইল সাংবাদিকতা, যা স্মার্টফোনের মাধ্যমে সংবাদ সংগ্রহ, সম্পাদনা এবং প্রচারের পদ্ধতি, আজকের দিনে সাংবাদিকতার অঙ্গনে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। আজকের সাংবাদিকরা এখন খবর সংগ্রহ করার জন্য বড় ক্যামেরা, স্যাটেলাইট অথবা রেডিও উপকরণের বদলে একটি মোবাইল ফোন ব্যবহার করে পুরো সংবাদ পরিবেশন করতে সক্ষম। এটি সংবাদ পরিবেশন, সংবাদ সংগ্রহ, ভিডিও শুটিং, অডিও রেকর্ডিং, এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে দ্রুত শেয়ার করার একটি শক্তিশালী এবং সহজ মাধ্যম হয়ে উঠেছে।

মোবাইল সাংবাদিকতার ধারণাটি অনেকটা হঠাৎ করে শুরু হয়নি, তবে প্রযুক্তির আধুনিকীকরণের সঙ্গে এটি সাংবাদিকতার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি মূলত ২০০০ সাল নাগাদ আধুনিক স্মার্টফোনের প্রযুক্তির মাধ্যমে শুরু হয়, যখন ফোনের ক্যামেরা, ইন্টারনেট সংযোগ এবং ভিডিও রেকর্ডিংয়ের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। আর ২০১০ এর পর, বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সংবাদ দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে, মোবাইল সাংবাদিকতা তখন সাংবাদিকতার ধারায় নতুন একটি যুগের সূচনা করে।

স্মার্টফোনের ক্যামেরা ও ইন্টারনেট সুবিধা সাংবাদিকদের জন্য একটি নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত খুলে দেয়। একসময় যা শুধুমাত্র বড় সাংবাদিক প্রতিষ্ঠানগুলোই করতে পারত, তা এখন মোবাইল ফোনের মাধ্যমে একজন সাধারণ সাংবাদিকও করতে সক্ষম। প্রথম দিকে শুধুমাত্র ব্যক্তিগত খবর, ছোট আকারে ভিডিও, ছবি ইত্যাদি শেয়ার করা হলেও, এখন মোবাইল সাংবাদিকতা বড় বড় সংবাদ প্রতিষ্ঠানেও ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি সাংবাদিকদের হাতে একটি পোর্টেবল স্টুডিও প্রদান করেছে, যা যে কোন জায়গায় থেকে সংবাদ সংগ্রহ এবং তা দ্রুত জনসাধারণের কাছে পৌঁছানোর ক্ষমতা রাখে।

দ্রুত সংবাদ পরিবেশন: মোবাইল সাংবাদিকতার সবচেয়ে বড় সুবিধা হল তার দ্রুততা। আধুনিক স্মার্টফোনের ক্যামেরা, গতি এবং ইন্টারনেট সংযোগের ক্ষমতা সাংবাদিকদের এখন এক ক্লিকেই সংবাদ সংগ্রহ, সম্পাদনা এবং তা বিশ্বব্যাপী পাঠানোর সুযোগ দেয়। প্রাকৃতিক বিপর্যয়, রাজনৈতিক আন্দোলন কিংবা গুরুত্বপূর্ণ কোনো ঘটনা ঘটলে, মোবাইল সাংবাদিকতার মাধ্যমে মুহূর্তের মধ্যে সংবাদ সংগ্রহ ও পাঠানো সম্ভব। যেমন, ২০১১ সালে আরব বসন্তের সময় মোবাইল ফোনের মাধ্যমে হাজার হাজার প্রতিবেদন তৈরি হয়ে ছিল এবং সেগুলি বিশ্বজুড়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল।

সাশ্রয়ী এবং সহজলভ্য: প্রথাগত সংবাদ সংগ্রহের জন্য যেখানে প্রচুর অর্থ এবং বড় প্রযুক্তি উপকরণের প্রয়োজন হত, সেখানে মোবাইল সাংবাদিকতা কম খরচে কার্যকরী সংবাদ পরিবেশন করতে সক্ষম। একটি স্মার্টফোন, ইন্টারনেট সংযোগ, এবং কিছু সহজ সফটওয়্যার ব্যবহার করলেই একজন সাংবাদিক নিজের হাতে এক সম্পূর্ণ সংবাদ সংগ্রহ এবং সম্পাদনার পদ্ধতি পেয়ে যায়। এর ফলে বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সংবাদ মাধ্যমের খরচ কমে যায় এবং সাংবাদিকতা আরো সহজলভ্য হয়।

মোবাইল সাংবাদিকতা শুধুমাত্র সংবাদ সংগ্রহের একটি পদ্ধতি নয়, এটি এক নতুন ধারণায় সংবাদ প্রকাশের ব্যবস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ছবি, ভিডিও, তথ্য, প্রাসঙ্গিক টেক্সট সহ সম্পূর্ণ খবর একসাথে পাঠানো যায়, যা সাধারণত বড় প্রতিষ্ঠানে রিপোর্টিংয়ের ক্ষেত্রে সম্ভব নয়। সাংবাদিকরা সরাসরি প্রাসঙ্গিক তথ্য এবং গল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন। আরও উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, সাংবাদিকরা সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে সরাসরি সংবাদ শেয়ার করতে পারেন, যা দ্রুত পাঠক শ্রেণীর কাছে পৌঁছে যায়।

মোবাইল সাংবাদিকতার আরেকটি শক্তিশালী দিক হলো এটি পাঠকদের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করতে সাহায্য করে। যখন খবর প্রকাশ করা হয়, পাঠকরা তা দ্রুত সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার, মন্তব্য বা বিতর্ক তৈরি করতে পারে। এটি সাংবাদিকদের আরো দক্ষ এবং প্রাসঙ্গিক খবর সরবরাহে সহায়তা করে। পাঠক এবং সাংবাদিকের মধ্যে একটি দ্বিমুখী যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি হয়, যা সংবাদ পরিবেশনের গতি এবং প্রাসঙ্গিকতা বাড়ায়।

যদিও মোবাইল সাংবাদিকতা অসংখ্য সুবিধা নিয়ে এসেছে, তবুও কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। প্রথমত, তথ্য যাচাই একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। মোবাইল সাংবাদিকতার মাধ্যমে সংবাদ সংগ্রহের সময় অনেক সময় ভুল বা বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে পড়ে, যা পরে সংশোধন করা কঠিন হতে পারে। তথ্যে ভুল বা বিভ্রান্তির শিকার হলে, এটি সাংবাদিকতার বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

অন্যদিকে গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তা বিষয়েও বিপদ রয়েছে। সাংবাদিকরা মাঠ পর্যায় থেকে সংবাদের জন্য ছবি, ভিডিও এবং তথ্য সংগ্রহ করেন, কিন্তু সেগুলি অনেক সময় রাজনৈতিক বা সামাজিকভাবে সংবেদনশীল হতে পারে। এটি গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তা উদ্বেগ সৃষ্টি করে।

প্রযুক্তিগত দক্ষতার অভাব এবং মোবাইলের মাধ্যমে ভিডিও এডিটিং বা সংবাদ সম্পাদনার উপযুক্ত প্রশিক্ষণের অভাবও একটি চ্যালেঞ্জ। একদিকে প্রযুক্তি সহজলভ্য হলেও, সাংবাদিকদের এই প্রযুক্তি দক্ষভাবে ব্যবহার করার জন্য প্রশিক্ষিত হতে হবে।

মোবাইল সাংবাদিকতা এখনকার সাংবাদিকতার ভবিষ্যত হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। প্রযুক্তির উন্নতি, স্মার্টফোনের ক্যামেরার উন্নতি, এবং নতুন অ্যাপ্লিকেশনগুলির মাধ্যমে মোবাইল সাংবাদিকতা আরও দ্রুত, সাশ্রয়ী, এবং কার্যকরী হয়ে উঠবে। সাংবাদিকদের জন্য যেকোনো স্থান থেকে সংবাদ সংগ্রহ এবং তা আপডেট করার সুবিধা দেবে এই পদ্ধতি।

এছাড়া ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম এবং সোশ্যাল মিডিয়ার প্রসার সাংবাদিকদের কাজকে আরও শক্তিশালী করবে। ভবিষ্যতে, এই প্রযুক্তির ব্যবহারে অধিক সংখ্যক পাঠক সংবাদটির প্রতি আরও গভীর আগ্রহী হবে এবং সাংবাদিকদের সঠিক তথ্য এবং দ্রুত সংবাদের মাধ্যমে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অব্যাহত থাকবে।

মোবাইল সাংবাদিকতা সাংবাদিকতার নতুন যুগের সূচনা করেছে। এটি সাংবাদিকদের হাতে সাশ্রয়ী, দ্রুত, এবং কার্যকরী সংবাদ পরিবেশন করার ক্ষমতা দিয়েছে। যদিও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে, মোবাইল সাংবাদিকতার সুবিধাগুলি সাংবাদিকদের জন্য একটি শক্তিশালী টুল হিসেবে কাজ করছে। আগামী দিনে মোবাইল সাংবাদিকতা তথ্য পরিবেশন এবং পাঠকের কাছে সত্য তুলে ধরার ক্ষেত্রে আরও বেশি শক্তিশালী ভূমিকা পালন করবে, তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।

 

 

শেখ শাহাউর রহমান বেলাল

সম্পাদক/প্রকাশক: চেকপোস্ট

 

 

 


Notice: ob_end_flush(): failed to send buffer of zlib output compression (0) in /home2/checkpostcom/public_html/wp-includes/functions.php on line 5464