মেয়েকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় বাবাকে পিটিয়ে হত্যা
রাজশাহীর তালাইমারী শহীদ মিনার এলাকায় মেয়েকে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করায় আকরাম আলী (৫২) নামে এক পিতাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে স্থানীয় বখাটেরা। মর্মান্তিক এই ঘটনার সময় তার মেয়ে রাকিয়া আলফি, চলমান এসএসসি পরীক্ষার একজন পরীক্ষার্থী। বাবার লাশ ঘরে রেখেই বৃহস্পতিবার ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়েছে তাকে।
আলফি নগরীর অগ্রণী বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। পরীক্ষাকেন্দ্র শিরোইল উচ্চ বিদ্যালয়। একদিকে বাবার মৃত্যু, অন্যদিকে পরীক্ষা-এই দুই চাপে ভেঙে পড়েছে পুরো পরিবার।
জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে কিছু বখাটে আলফিকে উত্ত্যক্ত করছিল। অভিযুক্তদের মধ্যে নান্টু নামের একজন ছিল আলফির মায়ের মামাতো ভাই। বুধবার বিকেলে কোচিং থেকে ফেরার পথে আবার উত্ত্যক্তের শিকার হলে আলফি বিষয়টি বাবাকে জানায়। পরে আকরাম আলী নিজে গিয়ে নান্টুর বাড়িতে বিচার দেন। এরপর রাতে প্রতিশোধ নিতে লোহার রড, লাঠি ও ইট নিয়ে হামলা করে নান্টু ও তার সহযোগীরা।
আক্রমণের সময় আকরামের বড় ছেলে ইমাম হাসান অনন্তকে মারধর করা হয়। ছেলেকে রক্ষা করতে গিয়ে আকরাম নিজেও আঘাতপ্রাপ্ত হন। ইটের আঘাতে মাথায় গুরুতর জখম হয় তার। পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
আলফি বলছে, “বাবার লাশ রেখে আমি পরীক্ষা দিতে যেতে চাইনি। কিন্তু সবাই অনেক বুঝিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে পাঠিয়েছে। আমি বাবার খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।”
বৃহস্পতিবার বোয়ালিয়া থানায় ইমাম হাসান অনন্ত সাতজনের নাম উল্লেখ করে এবং ৪-৫ জন অজ্ঞাতনামাকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। নাম উল্লেখিত আসামিরা হলেন-নান্টু, বিশাল, খোকন, তাসিন, অমি, নাহিদ ও শিশির। এদের মধ্যে কেউ এখনো গ্রেপ্তার হয়নি।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আকরাম আলীর লাশ সামনে রেখে মানববন্ধন করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তারা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তার ও সর্বোচ্চ শাস্তি-মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানান।
বোয়ালিয়া থানার ওসি মোস্তাক হোসেন বলেন, “এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। তবে আসামিদের ধরতে পুলিশ তৎপর রয়েছে।”
অগ্রণী স্কুলের অধ্যক্ষ সাইফুল ইসলাম বলেন, “আলফি খুব ভালো ছাত্রী। এই ঘটনায় আমরা সবাই শোকাহত। খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।”