ঢাকা ০৭:০৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মানুষ হত্যাকারী আখিরাতে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হবে

ইসলাম ডেস্ক::

ছবি: নেট থেকে নেয়া

বর্তমানে সমাজে মানুষ হত্যা যেন এক স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। নানা স্বার্থ, প্রতিশোধ কিংবা রাজনৈতিক হিংসার বলি হচ্ছেন নিরপরাধ মানুষ। অথচ ইসলাম ধর্মে একজন নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা সবচেয়ে বড় গুনাহ বা পাপ। পবিত্র কোরআনে এমন হত্যার জন্য চিরস্থায়ী জাহান্নামের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন “এ কারণেই আমি বনি ইসরাঈলের ওপর এই হুকুম দিলাম যে, যে ব্যক্তি কাউকে হত্যা করা কিংবা জমিনে ফাসাদ সৃষ্টি করা ছাড়া কাউকে হত্যা করল, সে যেন সমগ্র মানবজাতিকে হত্যা করল। আর যে একজনকে জীবন দান করল, সে যেন সমগ্র মানবজাতিকে জীবন দান করল।” (সুরা মায়েদা, আয়াত: ৩২)

এ আয়াত থেকে বোঝা যায়, ইসলামে জীবন সংরক্ষণ কতটা গুরুত্বপূর্ণ। অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা শুধু একটি মানুষের নয়, বরং সমগ্র মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে বিবেচিত।

মুমিনকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করলে সেই হত্যাকারীর জন্য ভয়াবহ পরিণতি নির্ধারিত। মহান আল্লাহ বলেন “আর যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো মুমিনকে হত্যা করবে, তার শাস্তি জাহান্নাম, সেখানে সে চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ হবেন, তাকে অভিশপ্ত করবেন এবং তার জন্য ভয়াবহ শাস্তি প্রস্তুত করে রাখবেন।” (সুরা নিসা, আয়াত: ৯৩)

কোরআনের আরেকটি আয়াতে আল্লাহ বলেন “আল্লাহ যার হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন, যথার্থ কারণ ছাড়া তোমরা তাকে হত্যা করো না।” (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত: ৩৩)

এ আয়াত ইসলামে নরহত্যাকে চূড়ান্তভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। শুধুমাত্র শরিয়তের নির্ধারিত বিচার ও শাস্তির মাধ্যমেই কোনো জীবন সংহারের বিধান রয়েছে—তা ছাড়া নয়।

হাদিসে এসেছে, কিয়ামতের দিন মানুষদের মধ্যে সর্বপ্রথম যে বিষয়ের বিচার হবে, তা হলো রক্তপাত বা হত্যা সম্পর্কিত।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত,
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন “কিয়ামতের দিন মানুষের মধ্যে সর্বপ্রথম যেসব বিষয়ে ফয়সালা হবে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রক্তপাত।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৬৭৮)

এক ভয়াবহ হাদিসে এসেছে, কিয়ামতের দিন হত্যাকৃত ব্যক্তি হত্যাকারীকে সঙ্গে করে আল্লাহর দরবারে হাজির হবে। তার হাতে থাকবে নিজ মাথা। রক্ত ঝরবে, এবং সে আল্লাহর উদ্দেশে বলবে, “হে আমার রব! এ ব্যক্তি আমাকে হত্যা করেছে।” সেই বিচারপ্রক্রিয়া এতটাই ভয়াবহ হবে যে, হত্যাকারীকে আরশের নিকট পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হবে।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-কে একবার জিজ্ঞাসা করা হয়, হত্যাকারীর তওবা কি কবুল হবে? তিনি সুরা নিসার ৯৩ নম্বর আয়াত তেলাওয়াত করে বলেন “এই আয়াত রহিত হয়নি, পরিবর্তন হয়নি। সুতরাং হত্যাকারীর তওবা কোনো কাজেই আসবে না।” (তিরমিজি, হাদিস: ৩০২৯)

মানুষ হত্যা একটি জঘন্য অপরাধ, যা শুধু দুনিয়ায় নয়, আখেরাতেও ভয়াবহ পরিণতির দিকে ধাবিত করে। ইসলাম একটি শান্তিপূর্ণ ধর্ম, যা প্রতিটি মানুষের জীবনের অধিকারকে পবিত্র ও সুরক্ষিত ঘোষণা করেছে। তাই সমাজে শান্তি, নিরাপত্তা এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব হলো—জীবনের মর্যাদা রক্ষা করা এবং যেকোনো ধরনের সহিংসতা থেকে বিরত থাকা।

ট্যাগস :

নিউজটি টাইম লাইনে শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

চেকপোস্ট

Checkpost is one of the most popular Bengali news portal and print newspaper in Bangladesh. The print and online news portal started its operations with a commitment to fearless, investigative, informative and unbiased journalism.
আপডেট সময় ১২:০৮:৪৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫
৫৪০ বার পড়া হয়েছে

মানুষ হত্যাকারী আখিরাতে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হবে

আপডেট সময় ১২:০৮:৪৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫

বর্তমানে সমাজে মানুষ হত্যা যেন এক স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। নানা স্বার্থ, প্রতিশোধ কিংবা রাজনৈতিক হিংসার বলি হচ্ছেন নিরপরাধ মানুষ। অথচ ইসলাম ধর্মে একজন নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা সবচেয়ে বড় গুনাহ বা পাপ। পবিত্র কোরআনে এমন হত্যার জন্য চিরস্থায়ী জাহান্নামের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন “এ কারণেই আমি বনি ইসরাঈলের ওপর এই হুকুম দিলাম যে, যে ব্যক্তি কাউকে হত্যা করা কিংবা জমিনে ফাসাদ সৃষ্টি করা ছাড়া কাউকে হত্যা করল, সে যেন সমগ্র মানবজাতিকে হত্যা করল। আর যে একজনকে জীবন দান করল, সে যেন সমগ্র মানবজাতিকে জীবন দান করল।” (সুরা মায়েদা, আয়াত: ৩২)

এ আয়াত থেকে বোঝা যায়, ইসলামে জীবন সংরক্ষণ কতটা গুরুত্বপূর্ণ। অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা শুধু একটি মানুষের নয়, বরং সমগ্র মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে বিবেচিত।

মুমিনকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করলে সেই হত্যাকারীর জন্য ভয়াবহ পরিণতি নির্ধারিত। মহান আল্লাহ বলেন “আর যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো মুমিনকে হত্যা করবে, তার শাস্তি জাহান্নাম, সেখানে সে চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ হবেন, তাকে অভিশপ্ত করবেন এবং তার জন্য ভয়াবহ শাস্তি প্রস্তুত করে রাখবেন।” (সুরা নিসা, আয়াত: ৯৩)

কোরআনের আরেকটি আয়াতে আল্লাহ বলেন “আল্লাহ যার হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন, যথার্থ কারণ ছাড়া তোমরা তাকে হত্যা করো না।” (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত: ৩৩)

এ আয়াত ইসলামে নরহত্যাকে চূড়ান্তভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। শুধুমাত্র শরিয়তের নির্ধারিত বিচার ও শাস্তির মাধ্যমেই কোনো জীবন সংহারের বিধান রয়েছে—তা ছাড়া নয়।

হাদিসে এসেছে, কিয়ামতের দিন মানুষদের মধ্যে সর্বপ্রথম যে বিষয়ের বিচার হবে, তা হলো রক্তপাত বা হত্যা সম্পর্কিত।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত,
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন “কিয়ামতের দিন মানুষের মধ্যে সর্বপ্রথম যেসব বিষয়ে ফয়সালা হবে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রক্তপাত।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৬৭৮)

এক ভয়াবহ হাদিসে এসেছে, কিয়ামতের দিন হত্যাকৃত ব্যক্তি হত্যাকারীকে সঙ্গে করে আল্লাহর দরবারে হাজির হবে। তার হাতে থাকবে নিজ মাথা। রক্ত ঝরবে, এবং সে আল্লাহর উদ্দেশে বলবে, “হে আমার রব! এ ব্যক্তি আমাকে হত্যা করেছে।” সেই বিচারপ্রক্রিয়া এতটাই ভয়াবহ হবে যে, হত্যাকারীকে আরশের নিকট পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হবে।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-কে একবার জিজ্ঞাসা করা হয়, হত্যাকারীর তওবা কি কবুল হবে? তিনি সুরা নিসার ৯৩ নম্বর আয়াত তেলাওয়াত করে বলেন “এই আয়াত রহিত হয়নি, পরিবর্তন হয়নি। সুতরাং হত্যাকারীর তওবা কোনো কাজেই আসবে না।” (তিরমিজি, হাদিস: ৩০২৯)

মানুষ হত্যা একটি জঘন্য অপরাধ, যা শুধু দুনিয়ায় নয়, আখেরাতেও ভয়াবহ পরিণতির দিকে ধাবিত করে। ইসলাম একটি শান্তিপূর্ণ ধর্ম, যা প্রতিটি মানুষের জীবনের অধিকারকে পবিত্র ও সুরক্ষিত ঘোষণা করেছে। তাই সমাজে শান্তি, নিরাপত্তা এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব হলো—জীবনের মর্যাদা রক্ষা করা এবং যেকোনো ধরনের সহিংসতা থেকে বিরত থাকা।