মাধবপুর হাসপাতালে দালাল প্রতারকের দৌরাত্ম্য
মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা অসংখ্য রোগী বর্তমানে দালাল ও প্রতারকচক্রের কবলে পড়ছেন। বিভিন্ন সময় নানা কথায় ভুলিয়ে দালাল চক্রের সদস্যরা রোগীদেরকে নিয়ে যাচ্ছেন মানহীন ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর দিকে, যেখানে তারা অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চল থেকে চিকিৎসার জন্য আসা সাধারণ মানুষ প্রতারকদের খপ্পরে পড়ে অসহায় হচ্ছেন।
এখনো পর্যন্ত রোগীদের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে হাসপাতালটিতে দালালদের অত্যাচার। বিশেষ করে, রোগী যখন ডাক্তার থেকে চিকিৎসাপত্র (পেনসক্রিপশন) নিয়ে বের হন, তখন থেকেই দালালরা তাদের পিছু নেয়। একাধিক রোগী জানায়, তারা বিভিন্ন অযাচিত ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষার জন্য বাধ্য হন। এসব সেন্টারে রোগীরা সাধারণত অতিরিক্ত টাকা গুনতে হয় এবং মানহীন সেবা পায়। দালালরা এসব সেন্টারে কমিশনের বিনিময়ে কাজ করে থাকে।
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, এ অঞ্চলের সীমান্তবর্তী হাসপাতালটিতে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৫০০ রোগী সেবা নিতে আসেন। পার্শ্ববর্তী নাসিরনগর, বিজয়নগরসহ বিভিন্ন এলাকায় থেকে আসা মানুষজনদের সেবা দেওয়ার জন্য এই হাসপাতালই একমাত্র ভরসা। তবে, দালালচক্রের তৎপরতায় রোগীদের কাছে সেবা নেওয়া যেন একরকম দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে।
হাসপাতালের কিছু কর্মচারীও এসব দালালচক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। একাধিক রোগী জানিয়েছেন, হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে চিকিৎসাপত্র হাতে পাওয়ার পর তাদের কাছে তা ছিনিয়ে নিয়ে, পছন্দমত ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা করানোর জন্য চাপ দেওয়া হয়। তবে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোগী জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার পর তিনি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন, কিন্তু কিছু লোক তাকে জোর করে বেসরকারি ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। রোগীর মতে, হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে যে পরীক্ষা করা হয়, তা অনেক কম খরচে হয়, কিন্তু দালালরা রোগীদেরকে ভুল বুঝিয়ে স্থানীয় ক্লিনিকগুলোতে নিয়ে যায়, যেখানে দাম বেশি এবং মান খারাপ।
এতে হাসপাতালের রোগীরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তেমনি হাসপাতালের কর্মীদের কিছু অংশের অভিযোগও সামনে এসেছে। হাসপাতালের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা ইতিমধ্যে দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছেন। মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ ইমরুল হাসান জানান, দালালদের তালিকা করা হয়েছে এবং কিছু দিন আগে দুজন দালালকে আটক করে থানায় সোর্পদ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, “দালালমুক্ত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং এসব চক্রের সদস্যদের হাসপাতাল থেকে বিতাড়িত করা হবে।”
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে, মাধবপুর হাসপাতালে রোগীদের জন্য শিগগিরই একটি সুস্থ ও নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।