বিএনপিপন্থী প্রতিষ্ঠান থেকে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ: আওয়ামীলীগের প্রার্থীদের প্রতিবাদ
মাধবপুরে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ: সমালোচনায় ইউএনও
হবিগঞ্জের মাধবপুরে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা (প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তা) নিয়োগে নানা অনিয়ম,স্বজনপ্রীতি ও কারসাজির অভিযোগ উঠেছে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ইউএনও একেএম ফয়সালের বিরুদ্ধে । এ নিয়ে জেলা ও উপজেলা জুড়ে সমালোচনার ঝড় বইছে।
উপজেলার নির্বাচনের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও পোলিং কর্মকর্তা নিয়োগে নির্দিষ্ট প্রার্থীর পছন্দের লোক নিয়োগ ও অভিজ্ঞদের বাদ দিয়ে নন এমপিওভুক্ত ও অনিবন্ধিত কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকদের নিয়োগ দিয়ে এদের প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। বুধবার(৫ জুন) উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
আওয়ামীলীগের চেয়ারম্যান ও ভাইস-চেয়ারম্যান প্রার্থীদের অভিযোগ,মাধবপুরে ২৭টি এমপিওভুক্ত থাকার সত্ত্বেও বিএনপি দলীয় উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী সৈয়দ মোহাম্মদ শাহজাহান পরিবারের প্রতিষ্ঠিত ও মদদপুষ্ট প্রতিষ্টান মাওলানা আসাদ আলী ডিগ্রী কলেজ (সাবেক সৈয়দ সৈয়দ উদ্দিন ডিগ্রী কলেজ) থেকেই ২০ জন শিক্ষককে প্রিসাইডিং অফিসার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। অথচ পার্শ্ববর্তী মনতলা শাহজালাল সরকারি কলেজ থেকে মাত্র ৭ জন প্রিসাইডিং অফিসার নেয়া হয়েছে। শুধু তাই নয় বিগত ৭টি নির্বাচনে প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালনে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন মনতলা শাহজালাল সরকারি কলেজের ৩ জন প্রভাষককে নিয়ম বহির্ভূতভাবে সহকারী প্রিসাইডিং পদে নিযুক্ত করায় এবার তারা তাদের সাথে বৈষম্য করার কারণে ইউএনও ও সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার একেএম ফয়সালকে ডিউটি না করার ঘোষণা দিয়েছেন। ওই ৩ জন কলেজ প্রভাষক হলেন – শাহ মো:শামসুজ্জামান,শেখ রফিকুল ইসলাম ও শেখ সৈয়দ মহাসিনুল হোসাইন। তাদের অভিযোগ, তারা কারো তাবেদদারী করে না, কারো নীল নকশা বাস্তবায়নে রাজি নয়। তাই তাদের সাথে বৈষম্য করা হয়েছে।
সরকারি নিবন্ধনবিহীন কিন্ডারগার্টেন ও কোচিং সেন্টার থেকে কিন্ডারগার্টেনে পরিণত হওয়া অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের পোলিং অফিসার হিসাবে নিয়োগ দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিবন্ধিত কিন্ডারগার্ডেনের শিক্ষকগন।
উপজেলার অনিবন্ধিত ফুলকলি কিন্ডারগার্টেনর ২২ জন শিক্ষকের মধ্যে থেকে ২২ জনকেই পোলিং অফিসার নেয়া হয়েছে যদিও এর মধ্যে ৩ জন স্বেচছায় ডিউটি বাতিল করেছেন।ওই কিন্ডারগার্টেনের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মেয়র হাবিবুর রহমান মানিক বিএনপি হতে নির্বাচিত মেয়র।বিএনপিপন্থী উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী সৈয়দ মোহাম্মদ শাহজাহানের ঘনিষ্ট লোক।
এ ছাড়া আরো অনেক অননুমোদিত কিন্ডারগার্টেনের বহু শিক্ষকদের দায়িত্ব দেওয়া হলেও অনুমোদিত ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞ শিক্ষকদের নির্বাচনী দায়িত্বে নিযুক্ত না করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
উপজেলা প্রশাসনের কুচকাওয়াসহ জাতীয় বহু প্রোগ্রামে অংশ নেয়া সরকারি নিবন্ধনপ্রাপ্ত বুশরা ইসলামিক কিন্ডারগার্ট ও ব্লু বার্ড কিন্ডারগার্টেনের কোন শিক্ষককে নির্বাচনী দায়িত্বে নিযুক্ত না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
অন্যদিকে মাধবপুর উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ আল-আমিনের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান জাগরন আইডিয়াল একাডেমীর শিক্ষকদের পোলিং অফিসারের দায়িত্ব দেওয়া হলেও চৌমুহনী ইউপির যুবলীগ নেতা এমদাদুল ইসলাম সুজনের মালিকানাধীন নিবন্ধিত কিন্ডারগার্টেন ইদ্রিস একাডেমির কোন শিক্ষককেই দায়িত্বে নিযুক্ত করা হয়নি। এ নিয়েও সমালোচনা হচ্ছে নিবন্ধিত কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষকদের মধ্যে ।
অনুমোদিত কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকদের পোলিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব দেয়া বিষয়ে শিক্ষা কর্মকর্তা জাকিরুল ইসলামের জানান, এই বিষয়টি সম্পূর্ণ রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার এখতিয়ার। এখানে আমাদের সাথে কোন পরামর্শ করা হয়নি।
এসব অনিয়ম দুর্নীতি খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছেন আনারস প্রতীকে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী ও হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম আহবায়ক জাকির হোসেন চৌধুরী অসীম ও শালিক পাখির প্রতীকে চেয়ারম্যান প্রার্থী ও আওয়ামীলীগ নেতা সৈয়দ হাবিবুল্লাহ সূচন ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী সুলতান আরেফিন রাজিব।
চেয়ারম্যান প্রার্থী জাকির হোসেন চৌধুরী অসীম বলেন, আমরা নিরপেক্ষ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি। ইতোমধ্যে পাওয়া অসঙ্গতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে আমরা কঠিন পদক্ষেপে যেতে বাধ্য হব।
এ ব্যাপারে জানতে মাধবপুরের ইউএনও ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা একেএম ফয়সালকে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও ফোন রিসিভ হয়নি। ম্যাসেজ করেও কোন জবাব পাওয়া যায়নি।