ঢাকা ০৬:০৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মাধবপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জাল ভোট ও অনিয়মের অভিযোগ! উচ্চ আদালতে রিটের প্রস্তুতি!

স্টাফ রিপোর্টার::

মাধবপুরের অনুষ্ঠিত হওয়া বিগত ৫ জুন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জাল ভোটের ডকুমেন্টেট প্রমাণ ও ভুয়া ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তাদের দিয়ে নির্বাচন সম্পন্ন করার গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার ৯৩ টি ভোট কেন্দ্রের বেশিরভাগ কেন্দ্রেই জাল ভোটকে বৈধতা দিতে রেজাল্ট সিটে বাতিল ভোট উল্লেখ করা হয়নি এমন অভিযোগ বিভিন্ন প্রার্থীদের।

নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক একজন দায়িত্ব পালন করা প্রিসাইডিং কর্মকর্তা জানান, রেজাল্ট সিটের মধ্যে বাতিল ভোটের সংখ্যা উল্লেখ না করতে স্যাররা আমাদের মৌখিক নির্দেশনা দিয়েছেন। তাই আমরা তা উল্লেখ করিনি। এখানে প্রিসাইডিং অফিসারদের কোন দোষ নেই।

ভোট দেওয়ার সময় একজন ভোটার ৩ টা করে ব্যালট পান। প্রথমটি চেয়ারম্যান পদের জন্য। দ্বিতীয়টি ভাইস চেয়ারম্যান পদের জন্য এবং তৃতীয়টি মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর জন্য কিন্তু চাঞ্চল্যের বিষয় হলো এদের ভোটের সংখ্যা প্রায় সমান না হয়ে রহস্যময় ব্যবধান হয়েছে। চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মোট ভোট ১ লক্ষ ২ হাজার ৫৮৮ টি। মহিলা ভাই চেয়ারম্যান প্রার্থীরা পান মোট পান ১ লক্ষ ৮ শত ৫৫ টি। যা চেয়ারম্যান প্রার্থীর সাথে ভোটের ব্যবধান ১ হাজার ৭ শত ৩৩ টির । অন্যদিকে ভাইস চেয়ারম্যান পুরুষ প্রার্থীর সাথে ব্যবধান ১ হাজার ৩ শত ৪০ টির। এক্ষেত্রে হাজারেরও অধিক জাল ভোট পড়েছে এমন মন্তব্য বিশিষ্টজনদের।এছাড়া কেন্দ্র ভিত্তিক বাতিল বা অবৈধ ভোট সিটে উল্লেখ না করা এসব জাল ভোটকে গোজামিল দেওয়ার আলামত বলে অভিমত দিয়েছেন তারা।

শায়েস্তাগঞ্জ ও বানিয়াচং উপজেলা থেকে আনা ভোট গ্রহণকারী সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসারদের চূড়ান্ত প্রশিক্ষণ ও নিয়োগ দেওয়া সত্ত্বেও তাদের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দায়িত্ব না দেওয়াকে বড় ধরনের ষড়যন্ত্র ও দুর্নীতি হিসেবে দেখছেন উপজেলা পরিষদের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও জেলা আওয়ামীলীগ নেতা জাকির হোসেন চৌধুরী অসীম।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, নির্বাচনের গ্রহণ কর্মকর্তা হিসাবে প্রশিক্ষন ও চূড়ান্ত নিয়োগ পাওয়া পার্শ্ববর্তী শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার পরিবার পরিকল্পনা অফিসের পরিবার পরিকল্পনা সহকারী মিজানুর রহমান ঠাকুর,পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক আজাদুল ইসলাম ও পরিবার পরিকল্পনা সহকারী উজ্জল মিয়া নামে কোন লোক শায়েস্তাগঞ্জ পরিবার পরিকল্পনা অফিসে কর্মরত নেই। যদিও ফোনে ওইসব কর্মকর্তা বলছেন তারা শায়েস্তাগঞ্জে কর্মরত রয়েছেন। এই নামে কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী শায়েস্তাগঞ্জ পরিবার পরিকল্পনা অফিসে কর্মরত নেই এই সত্যতা নিশ্চিত করেছেন হবিগঞ্জ জেলা পরিবার পরিকল্পনার কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক ডাক্তার মোঃ আব্দুর রব মোল্লা।

এসব প্রকাশ্য ভুয়া কর্মকর্তা দিয়ে নির্বাচন করানোর ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চলের সৃষ্টি হয়েছে। আওয়ামীলীগের অনেক নেতাকর্মীরা পুনরায় চেয়ারম্যান পদে উপজেলা নির্বাচন দেয়ার দাবিও তুলছেন।

অভিযোগ রয়েছে নির্দিষ্ট প্রার্থীর পছন্দের ও মনোনীত লোকদের নির্বাচনী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের আগে আগে এসব নিয়ে কথাবার্তা উঠলেও প্রার্থীর টাকার কাছে বিক্রি হন নির্বাচন নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তারা। এ কারণে পরিবর্তনের চূড়ান্ত তালিকাও পরিবর্তন হয়ে যায়।এ বিষয়ে তথ্য ও মতামত নিতে উপজেলার সহকারী রিটার্নীং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও ফোন রিসিভ করেননি।

অভিযোগ রয়েছে, নির্বাচনী কর্মকর্তা নিয়োগ বিধিমালা লংঘন করে বিজয়ী প্রার্থী সৈয়দ মোহাম্মদ শাহজাহানের নোয়াপাড়া ইউনিয়নে একই ইউনিয়নের নির্বাচনী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ওই প্রার্থীর পরিবারের প্রতিষ্ঠিত মাওলানা আসাদ আলী ডিগ্রী কলেজ থেকে ১৭ জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নেওয়ায় অভিযোগ উঠলেও এদেরকে পরিবর্তন করা হয়নি।
বিভিন্ন মহলের চাপে একটি বিতর্কমুক্ত প্রিসাইডিং,সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসারদের একটি তালিকা প্রস্তুত ও প্রকাশ করলেও অজানা কারণে গোপনে সেটিও স্থগিত হয়। এ নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনা হওয়ার পরেও রিটানিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা কোন বক্তব্য কিংবা কোন প্রেস মিটিং এখন পর্যন্ত করেননি।

হবিগঞ্জের রিটানিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের এসব গুরুতর অনিয়ম ও দায়িত্ব অবহেলা বিষয়ে আওয়ামীলীগের প্রার্থী ও সমর্থকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। কেউ কেউ উচ্চ আদালতে রিট করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কেউ বলছেন করবেন মানববন্ধন কিংবা তুলবেন দাবী বিচার বিভাগীয় তদন্তেরও। 

ট্যাগস :

নিউজটি টাইম লাইনে শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

চেকপোস্ট

Checkpost is one of the most popular Bengali news portal and print newspaper in Bangladesh. The print and online news portal started its operations with a commitment to fearless, investigative, informative and unbiased journalism.
আপডেট সময় ১২:৪৮:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ জুন ২০২৪
৫৫৬ বার পড়া হয়েছে

মাধবপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জাল ভোট ও অনিয়মের অভিযোগ! উচ্চ আদালতে রিটের প্রস্তুতি!

আপডেট সময় ১২:৪৮:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ জুন ২০২৪

মাধবপুরের অনুষ্ঠিত হওয়া বিগত ৫ জুন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জাল ভোটের ডকুমেন্টেট প্রমাণ ও ভুয়া ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তাদের দিয়ে নির্বাচন সম্পন্ন করার গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার ৯৩ টি ভোট কেন্দ্রের বেশিরভাগ কেন্দ্রেই জাল ভোটকে বৈধতা দিতে রেজাল্ট সিটে বাতিল ভোট উল্লেখ করা হয়নি এমন অভিযোগ বিভিন্ন প্রার্থীদের।

নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক একজন দায়িত্ব পালন করা প্রিসাইডিং কর্মকর্তা জানান, রেজাল্ট সিটের মধ্যে বাতিল ভোটের সংখ্যা উল্লেখ না করতে স্যাররা আমাদের মৌখিক নির্দেশনা দিয়েছেন। তাই আমরা তা উল্লেখ করিনি। এখানে প্রিসাইডিং অফিসারদের কোন দোষ নেই।

ভোট দেওয়ার সময় একজন ভোটার ৩ টা করে ব্যালট পান। প্রথমটি চেয়ারম্যান পদের জন্য। দ্বিতীয়টি ভাইস চেয়ারম্যান পদের জন্য এবং তৃতীয়টি মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর জন্য কিন্তু চাঞ্চল্যের বিষয় হলো এদের ভোটের সংখ্যা প্রায় সমান না হয়ে রহস্যময় ব্যবধান হয়েছে। চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মোট ভোট ১ লক্ষ ২ হাজার ৫৮৮ টি। মহিলা ভাই চেয়ারম্যান প্রার্থীরা পান মোট পান ১ লক্ষ ৮ শত ৫৫ টি। যা চেয়ারম্যান প্রার্থীর সাথে ভোটের ব্যবধান ১ হাজার ৭ শত ৩৩ টির । অন্যদিকে ভাইস চেয়ারম্যান পুরুষ প্রার্থীর সাথে ব্যবধান ১ হাজার ৩ শত ৪০ টির। এক্ষেত্রে হাজারেরও অধিক জাল ভোট পড়েছে এমন মন্তব্য বিশিষ্টজনদের।এছাড়া কেন্দ্র ভিত্তিক বাতিল বা অবৈধ ভোট সিটে উল্লেখ না করা এসব জাল ভোটকে গোজামিল দেওয়ার আলামত বলে অভিমত দিয়েছেন তারা।

শায়েস্তাগঞ্জ ও বানিয়াচং উপজেলা থেকে আনা ভোট গ্রহণকারী সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসারদের চূড়ান্ত প্রশিক্ষণ ও নিয়োগ দেওয়া সত্ত্বেও তাদের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দায়িত্ব না দেওয়াকে বড় ধরনের ষড়যন্ত্র ও দুর্নীতি হিসেবে দেখছেন উপজেলা পরিষদের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও জেলা আওয়ামীলীগ নেতা জাকির হোসেন চৌধুরী অসীম।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, নির্বাচনের গ্রহণ কর্মকর্তা হিসাবে প্রশিক্ষন ও চূড়ান্ত নিয়োগ পাওয়া পার্শ্ববর্তী শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার পরিবার পরিকল্পনা অফিসের পরিবার পরিকল্পনা সহকারী মিজানুর রহমান ঠাকুর,পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক আজাদুল ইসলাম ও পরিবার পরিকল্পনা সহকারী উজ্জল মিয়া নামে কোন লোক শায়েস্তাগঞ্জ পরিবার পরিকল্পনা অফিসে কর্মরত নেই। যদিও ফোনে ওইসব কর্মকর্তা বলছেন তারা শায়েস্তাগঞ্জে কর্মরত রয়েছেন। এই নামে কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী শায়েস্তাগঞ্জ পরিবার পরিকল্পনা অফিসে কর্মরত নেই এই সত্যতা নিশ্চিত করেছেন হবিগঞ্জ জেলা পরিবার পরিকল্পনার কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক ডাক্তার মোঃ আব্দুর রব মোল্লা।

এসব প্রকাশ্য ভুয়া কর্মকর্তা দিয়ে নির্বাচন করানোর ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চলের সৃষ্টি হয়েছে। আওয়ামীলীগের অনেক নেতাকর্মীরা পুনরায় চেয়ারম্যান পদে উপজেলা নির্বাচন দেয়ার দাবিও তুলছেন।

অভিযোগ রয়েছে নির্দিষ্ট প্রার্থীর পছন্দের ও মনোনীত লোকদের নির্বাচনী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের আগে আগে এসব নিয়ে কথাবার্তা উঠলেও প্রার্থীর টাকার কাছে বিক্রি হন নির্বাচন নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তারা। এ কারণে পরিবর্তনের চূড়ান্ত তালিকাও পরিবর্তন হয়ে যায়।এ বিষয়ে তথ্য ও মতামত নিতে উপজেলার সহকারী রিটার্নীং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও ফোন রিসিভ করেননি।

অভিযোগ রয়েছে, নির্বাচনী কর্মকর্তা নিয়োগ বিধিমালা লংঘন করে বিজয়ী প্রার্থী সৈয়দ মোহাম্মদ শাহজাহানের নোয়াপাড়া ইউনিয়নে একই ইউনিয়নের নির্বাচনী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ওই প্রার্থীর পরিবারের প্রতিষ্ঠিত মাওলানা আসাদ আলী ডিগ্রী কলেজ থেকে ১৭ জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নেওয়ায় অভিযোগ উঠলেও এদেরকে পরিবর্তন করা হয়নি।
বিভিন্ন মহলের চাপে একটি বিতর্কমুক্ত প্রিসাইডিং,সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসারদের একটি তালিকা প্রস্তুত ও প্রকাশ করলেও অজানা কারণে গোপনে সেটিও স্থগিত হয়। এ নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনা হওয়ার পরেও রিটানিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা কোন বক্তব্য কিংবা কোন প্রেস মিটিং এখন পর্যন্ত করেননি।

হবিগঞ্জের রিটানিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের এসব গুরুতর অনিয়ম ও দায়িত্ব অবহেলা বিষয়ে আওয়ামীলীগের প্রার্থী ও সমর্থকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। কেউ কেউ উচ্চ আদালতে রিট করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কেউ বলছেন করবেন মানববন্ধন কিংবা তুলবেন দাবী বিচার বিভাগীয় তদন্তেরও।