ঢাকা ০৭:৪৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৫ অগাস্ট ২০২৫, ২১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মশার ওষুধ দিচ্ছে না রাসিক, অতিষ্ঠ রাজশাহীর নগরবাসী

মো: গোলাম কিবরিয়া, রাজশাহী প্রতিনিধি::

ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহীতে মশার উৎপাত চরমে উঠেছে। মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক)। এখন পর্যন্ত কোনো মশকনাশক ওষুধ ছিটানো হয়নি। ফলে শহরের ড্রেন, নর্দমা ও ঝোপঝাড়ে বাড়ছে মশার বিস্তার, আর তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গুর ঝুঁকি।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, নগরীর অধিকাংশ ড্রেন নোংরা পানি ও আবর্জনায় পূর্ণ। দীর্ঘদিন ধরে এসব পরিষ্কার না হওয়ায় মশা বংশবিস্তারের অনুকূল পরিবেশ পেয়েছে। বিশেষ করে বর্ণালী মোড় থেকে তেরোখাদিয়া হয়ে যাওয়া বড় ড্রেনটি অন্তত তিন মাস ধরে পরিস্কার হয়নি বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

স্থানীয় দোকানি ভুট্টু রহমান বলেন, “দোকানে দিনের বেলাতেও দাঁড়িয়ে থাকা যায় না। সারাক্ষণ কয়েল জ্বালিয়ে রাখতে হয়। আমার এমনিতেই শ্বাসকষ্ট, তার উপর কয়েলের ধোঁয়ায় সমস্যা আরও বাড়ে। তবুও মশার হাত থেকে বাঁচতে কয়েল জ্বালাতে হয়।”

একই অভিযোগ মুদি দোকানি ও হোটেল মালিকদেরও। তারা বলেন, “মশার কারণে ব্যবসা মার খাচ্ছে। ক্রেতারা দোকানে এসে দাঁড়াতেও চায় না। রেস্টুরেন্টে খাবার খেতে এসেও মশার কামড়ে অতিষ্ঠ হয়ে যায়।”

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মুখপাত্র ও চিকিৎসক শঙ্কর কুমার বিশ্বাস জানান, “মশার বৃদ্ধির কারণে রাজশাহীতে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে তিনজন মারা গেছেন এবং বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ২৬ জন। করোনার থেকেও ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে ডেঙ্গু, কিন্তু মানুষের মধ্যে সচেতনতা অনেক কম।”

এ বিষয়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা শেখ মো. মামুন ডলার বলেন, “মশা বেড়েছে, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। ওয়ার্ড পর্যায়ে জনপ্রতিনিধি না থাকায় পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম কমে গেছে। অনেকেই নিজেদের বাড়ির আশেপাশের ঝোপঝাড় পরিষ্কার করছেন না। ছাদবাগানের টবে জমে থাকা পানিতেও মশা বংশবৃদ্ধি করছে।”

তিনি আরও বলেন, “বর্তমানে আমরা লার্ভিসাইড বা ফগার মেশিনের ওষুধ দিচ্ছি না। বরং ড্রেন পরিষ্কার করে মশা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। আগামী অক্টোবরে মশক নিধনের ওষুধ ছিটানো হবে। তখন ৬০-৭০ লাখ টাকার ওষুধ কেনা হবে বলে আশা করছি।”

এদিকে নগরবাসী বলছেন, রাসিকের এই বিলম্বিত কার্যক্রমে মশার উপদ্রব ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। বাড়ি, অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান— কোথাও মশার হাত থেকে রেহাই নেই। নগরবাসীর দাবি, অবিলম্বে মশকনাশক ওষুধ ছিটানো ও নিয়মিত ড্রেন পরিষ্কারের কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

ট্যাগস :

নিউজটি টাইম লাইনে শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

চেকপোস্ট

Checkpost is one of the most popular Bengali news portal and print newspaper in Bangladesh. The print and online news portal started its operations with a commitment to fearless, investigative, informative and unbiased journalism.
আপডেট সময় ০৫:০৬:৩৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ অগাস্ট ২০২৫
৫২৪ বার পড়া হয়েছে

মশার ওষুধ দিচ্ছে না রাসিক, অতিষ্ঠ রাজশাহীর নগরবাসী

আপডেট সময় ০৫:০৬:৩৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ অগাস্ট ২০২৫

রাজশাহীতে মশার উৎপাত চরমে উঠেছে। মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক)। এখন পর্যন্ত কোনো মশকনাশক ওষুধ ছিটানো হয়নি। ফলে শহরের ড্রেন, নর্দমা ও ঝোপঝাড়ে বাড়ছে মশার বিস্তার, আর তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গুর ঝুঁকি।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, নগরীর অধিকাংশ ড্রেন নোংরা পানি ও আবর্জনায় পূর্ণ। দীর্ঘদিন ধরে এসব পরিষ্কার না হওয়ায় মশা বংশবিস্তারের অনুকূল পরিবেশ পেয়েছে। বিশেষ করে বর্ণালী মোড় থেকে তেরোখাদিয়া হয়ে যাওয়া বড় ড্রেনটি অন্তত তিন মাস ধরে পরিস্কার হয়নি বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

স্থানীয় দোকানি ভুট্টু রহমান বলেন, “দোকানে দিনের বেলাতেও দাঁড়িয়ে থাকা যায় না। সারাক্ষণ কয়েল জ্বালিয়ে রাখতে হয়। আমার এমনিতেই শ্বাসকষ্ট, তার উপর কয়েলের ধোঁয়ায় সমস্যা আরও বাড়ে। তবুও মশার হাত থেকে বাঁচতে কয়েল জ্বালাতে হয়।”

একই অভিযোগ মুদি দোকানি ও হোটেল মালিকদেরও। তারা বলেন, “মশার কারণে ব্যবসা মার খাচ্ছে। ক্রেতারা দোকানে এসে দাঁড়াতেও চায় না। রেস্টুরেন্টে খাবার খেতে এসেও মশার কামড়ে অতিষ্ঠ হয়ে যায়।”

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মুখপাত্র ও চিকিৎসক শঙ্কর কুমার বিশ্বাস জানান, “মশার বৃদ্ধির কারণে রাজশাহীতে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে তিনজন মারা গেছেন এবং বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ২৬ জন। করোনার থেকেও ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে ডেঙ্গু, কিন্তু মানুষের মধ্যে সচেতনতা অনেক কম।”

এ বিষয়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা শেখ মো. মামুন ডলার বলেন, “মশা বেড়েছে, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। ওয়ার্ড পর্যায়ে জনপ্রতিনিধি না থাকায় পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম কমে গেছে। অনেকেই নিজেদের বাড়ির আশেপাশের ঝোপঝাড় পরিষ্কার করছেন না। ছাদবাগানের টবে জমে থাকা পানিতেও মশা বংশবৃদ্ধি করছে।”

তিনি আরও বলেন, “বর্তমানে আমরা লার্ভিসাইড বা ফগার মেশিনের ওষুধ দিচ্ছি না। বরং ড্রেন পরিষ্কার করে মশা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। আগামী অক্টোবরে মশক নিধনের ওষুধ ছিটানো হবে। তখন ৬০-৭০ লাখ টাকার ওষুধ কেনা হবে বলে আশা করছি।”

এদিকে নগরবাসী বলছেন, রাসিকের এই বিলম্বিত কার্যক্রমে মশার উপদ্রব ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। বাড়ি, অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান— কোথাও মশার হাত থেকে রেহাই নেই। নগরবাসীর দাবি, অবিলম্বে মশকনাশক ওষুধ ছিটানো ও নিয়মিত ড্রেন পরিষ্কারের কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।