ঢাকা ১২:১১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৭ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভেলা ভাসানি উৎসব: দোহার-নবাবগঞ্জে ঐতিহ্য আর সম্প্রীতির মিলনমেলা

শহীদুল ইসলাম শরীফ, স্টাফ রিপোর্টার::

ছবি: সংগৃহীত

বাংলার লোকসংস্কৃতির ইতিহাসে অন্যতম একটি প্রাণবন্ত উৎসব হলো ‘ভেলা ভাসানি’। প্রতি বছর ভাদ্র মাসের শেষ বৃহস্পতিবার ঢাকার দোহার, নবাবগঞ্জ, কেরানিগঞ্জসহ আশপাশের গ্রামীণ জনপদে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। শুধু উৎসব নয়, এটি গ্রামীণ ঐক্য, বিশ্বাস ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য নিদর্শন।

ভেলা সাধারণত সাত বা পাঁচটি কলাগাছের টুকরা জোড়া দিয়ে বানানো হয়। এরপর বাঁশ, রঙিন কাগজ ও কাপড় দিয়ে ছোট একটি ঘরের মতো কাঠামো তৈরি করা হয়। ভেলাটিকে সাজানো হয় মোমবাতি, আগরবাতি, ফল আর শিন্নি (মিষ্টি প্রসাদ) দিয়ে।

উৎসবে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই তাদের ইচ্ছা পূরণের আশায় মানত করে। কেউ মুরগি, কেউ শিন্নি বা ফল, আবার কেউ টাকা-পয়সা নিয়ে আসে। এর একটি অংশ ভেলায় উৎসর্গ করা হয়। বাকি অংশ সবার মধ্যে প্রসাদ হিসেবে ভাগ করে দেওয়া হয়।

দিনভর চলে আধ্যাত্মিক গানের আসর। ঢোলক, একতারা, দোতারা আর সারিন্দার সুরে মুখরিত থাকে আশপাশের গ্রাম। একইসঙ্গে বসে গ্রামীণ মেলা, যেখানে মানুষের মিলনমেলায় উৎসব মুখর হয়ে ওঠে।

দিন শেষে কিংবা ভোর রাতে সাজানো ভেলাটি নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। এই প্রথা বংশপরম্পরায় চলে আসছে। যেমন দোহারের জামালচর গ্রামের পলাশ ফকির জানান, তাঁর দাদা সুরত খাঁ ও বাবা ফুলচান ফকির এই আয়োজন করতেন, আর তিনিও সেই ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন।

প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে চলে আসা এই ভেলা ভাসানি আজও গ্রামীণ জীবনে সজীব। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার অংশগ্রহণে এটি হয়ে উঠেছে সত্যিকারের সম্প্রীতির উৎসব।

নিউজটি টাইম লাইনে শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

চেকপোস্ট

Checkpost is one of the most popular Bengali news portal and print newspaper in Bangladesh. The print and online news portal started its operations with a commitment to fearless, investigative, informative and unbiased journalism.
আপডেট সময় ১০:৩৩:৩৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
৫১৫ বার পড়া হয়েছে

ভেলা ভাসানি উৎসব: দোহার-নবাবগঞ্জে ঐতিহ্য আর সম্প্রীতির মিলনমেলা

আপডেট সময় ১০:৩৩:৩৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বাংলার লোকসংস্কৃতির ইতিহাসে অন্যতম একটি প্রাণবন্ত উৎসব হলো ‘ভেলা ভাসানি’। প্রতি বছর ভাদ্র মাসের শেষ বৃহস্পতিবার ঢাকার দোহার, নবাবগঞ্জ, কেরানিগঞ্জসহ আশপাশের গ্রামীণ জনপদে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। শুধু উৎসব নয়, এটি গ্রামীণ ঐক্য, বিশ্বাস ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য নিদর্শন।

ভেলা সাধারণত সাত বা পাঁচটি কলাগাছের টুকরা জোড়া দিয়ে বানানো হয়। এরপর বাঁশ, রঙিন কাগজ ও কাপড় দিয়ে ছোট একটি ঘরের মতো কাঠামো তৈরি করা হয়। ভেলাটিকে সাজানো হয় মোমবাতি, আগরবাতি, ফল আর শিন্নি (মিষ্টি প্রসাদ) দিয়ে।

উৎসবে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই তাদের ইচ্ছা পূরণের আশায় মানত করে। কেউ মুরগি, কেউ শিন্নি বা ফল, আবার কেউ টাকা-পয়সা নিয়ে আসে। এর একটি অংশ ভেলায় উৎসর্গ করা হয়। বাকি অংশ সবার মধ্যে প্রসাদ হিসেবে ভাগ করে দেওয়া হয়।

দিনভর চলে আধ্যাত্মিক গানের আসর। ঢোলক, একতারা, দোতারা আর সারিন্দার সুরে মুখরিত থাকে আশপাশের গ্রাম। একইসঙ্গে বসে গ্রামীণ মেলা, যেখানে মানুষের মিলনমেলায় উৎসব মুখর হয়ে ওঠে।

দিন শেষে কিংবা ভোর রাতে সাজানো ভেলাটি নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। এই প্রথা বংশপরম্পরায় চলে আসছে। যেমন দোহারের জামালচর গ্রামের পলাশ ফকির জানান, তাঁর দাদা সুরত খাঁ ও বাবা ফুলচান ফকির এই আয়োজন করতেন, আর তিনিও সেই ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন।

প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে চলে আসা এই ভেলা ভাসানি আজও গ্রামীণ জীবনে সজীব। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার অংশগ্রহণে এটি হয়ে উঠেছে সত্যিকারের সম্প্রীতির উৎসব।