ঢাকা ০৮:৪২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১২ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভূমিদস্যু রাকেশ বাহিনীর নির্যাতনে বিধবা রাশমনি ভৌমিকের সুবিচার প্রার্থনা

চেকপোস্ট প্রতিবেদক::

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট রাকেশ চন্দ্র সরকার ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে জমি দখল ও নির্যাতনের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। তাদের হাতেই প্রতারণা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এক বৃদ্ধা বিধবা নারী—রাশমনি ভৌমিক।

রাশমনি ভৌমিক সরাইল উপজেলার শাহজাদাপুর গ্রামের মৃত পান্ডব ভৌমিকের দ্বিতীয় স্ত্রী। তার একমাত্র সন্তান ভুবন রঞ্জন ভৌমিক প্রাপ্তবয়সে অবিবাহিত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। ভুবনের মৃত্যুর পর, রাশমনি তার ওয়ারিশ হিসেবে জমির মালিকানা গ্রহণ করেন এবং নিয়মিত খাজনা পরিশোধ করে ভোগদখল করতে থাকেন।

কিন্তু, ভুবনের সৎ ভাইয়ের ছেলে স্বপন লাল ভৌমিক প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে অ্যাডভোকেট রাকেশ চন্দ্র সরকারের সহায়তায় রাশমনির জমি নিজের নামে খারিজ করে নেন। অভিযোগ অনুযায়ী, রাকেশকে “আম মোক্তারনামা” দলিল করে দেওয়ার পর থেকেই শুরু হয় এক বিধবা নারীর দুঃসহ জীবন।

স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, রাকেশ ও তার বাহিনী জোরপূর্বক রাশমনির কাছ থেকে টিপসহি নেয়, ঘর থেকে বের করে দেয় এবং জমি দখল করে নেয়। তাদের অত্যাচারে রাশমনি ভৌমিক তার নিজের বাড়ি থেকে বিতাড়িত হয়ে বড় মেয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। অথচ এই জমির আয় দিয়েই তিনি তার জীবিকা নির্বাহ করতেন।

রাশমনির জামাতা রসরাজ চন্দ্র সরকার অভিযোগ করেন, “শাশুড়ির বয়স প্রায় ৮৫ বছর। তিনি চলাফেরা করতে পারেন না বলেই উনি আমাকে আম মোক্তারনামা দলিল করে দিয়েছেন। এখন আমি তার হয়ে জমির মামলা পরিচালনা করি, তাই আমাকেও রাকেশ বাহিনী মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে। একাধিকবার জেল খাটতে হয়েছে আমাকে।”

রসরাজ আরও জানান, অ্যাডভোকেট রাকেশ আদালতের প্রভাবশালী আইনজীবী হওয়ায়, তার দেওয়া মিথ্যা মামলায় জামিন পেতে অসুবিধা হয়। এছাড়া, তিনি ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর এজেন্ট বলেও অভিযোগ করেন রসরাজ।

জানা গেছে, রাকেশ বর্তমানে পলাতক এবং তার বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা মামলা চলমান রয়েছে। স্থানীয়ভাবে তিনি আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবেও পরিচিত এবং অতীতে ছাত্র আন্দোলনের সময় সহিংসতায় যুক্ত থাকার অভিযোগও রয়েছে।

বর্তমানে এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে একটি মিস কেস আপিল শুনানি চলমান রয়েছে। সুবিচার চেয়ে রাশমনি বলেন, “এই বয়সে আমি আর কিছু চাই না, শুধু আমার স্বামীর ভিটায় মরতে চাই। যারা আমার মতো বৃদ্ধাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে, তাদের কঠিন শাস্তি চাই।”

এই ঘটনায় স্থানীয় জনগণের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা অবিলম্বে রাকেশ ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।

ট্যাগস :

নিউজটি টাইম লাইনে শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

চেকপোস্ট

Checkpost is one of the most popular Bengali news portal and print newspaper in Bangladesh. The print and online news portal started its operations with a commitment to fearless, investigative, informative and unbiased journalism.
আপডেট সময় ০৯:৫৪:১৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫
৫৪৫ বার পড়া হয়েছে

ভূমিদস্যু রাকেশ বাহিনীর নির্যাতনে বিধবা রাশমনি ভৌমিকের সুবিচার প্রার্থনা

আপডেট সময় ০৯:৫৪:১৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট রাকেশ চন্দ্র সরকার ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে জমি দখল ও নির্যাতনের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। তাদের হাতেই প্রতারণা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এক বৃদ্ধা বিধবা নারী—রাশমনি ভৌমিক।

রাশমনি ভৌমিক সরাইল উপজেলার শাহজাদাপুর গ্রামের মৃত পান্ডব ভৌমিকের দ্বিতীয় স্ত্রী। তার একমাত্র সন্তান ভুবন রঞ্জন ভৌমিক প্রাপ্তবয়সে অবিবাহিত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। ভুবনের মৃত্যুর পর, রাশমনি তার ওয়ারিশ হিসেবে জমির মালিকানা গ্রহণ করেন এবং নিয়মিত খাজনা পরিশোধ করে ভোগদখল করতে থাকেন।

কিন্তু, ভুবনের সৎ ভাইয়ের ছেলে স্বপন লাল ভৌমিক প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে অ্যাডভোকেট রাকেশ চন্দ্র সরকারের সহায়তায় রাশমনির জমি নিজের নামে খারিজ করে নেন। অভিযোগ অনুযায়ী, রাকেশকে “আম মোক্তারনামা” দলিল করে দেওয়ার পর থেকেই শুরু হয় এক বিধবা নারীর দুঃসহ জীবন।

স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, রাকেশ ও তার বাহিনী জোরপূর্বক রাশমনির কাছ থেকে টিপসহি নেয়, ঘর থেকে বের করে দেয় এবং জমি দখল করে নেয়। তাদের অত্যাচারে রাশমনি ভৌমিক তার নিজের বাড়ি থেকে বিতাড়িত হয়ে বড় মেয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। অথচ এই জমির আয় দিয়েই তিনি তার জীবিকা নির্বাহ করতেন।

রাশমনির জামাতা রসরাজ চন্দ্র সরকার অভিযোগ করেন, “শাশুড়ির বয়স প্রায় ৮৫ বছর। তিনি চলাফেরা করতে পারেন না বলেই উনি আমাকে আম মোক্তারনামা দলিল করে দিয়েছেন। এখন আমি তার হয়ে জমির মামলা পরিচালনা করি, তাই আমাকেও রাকেশ বাহিনী মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে। একাধিকবার জেল খাটতে হয়েছে আমাকে।”

রসরাজ আরও জানান, অ্যাডভোকেট রাকেশ আদালতের প্রভাবশালী আইনজীবী হওয়ায়, তার দেওয়া মিথ্যা মামলায় জামিন পেতে অসুবিধা হয়। এছাড়া, তিনি ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর এজেন্ট বলেও অভিযোগ করেন রসরাজ।

জানা গেছে, রাকেশ বর্তমানে পলাতক এবং তার বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা মামলা চলমান রয়েছে। স্থানীয়ভাবে তিনি আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবেও পরিচিত এবং অতীতে ছাত্র আন্দোলনের সময় সহিংসতায় যুক্ত থাকার অভিযোগও রয়েছে।

বর্তমানে এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে একটি মিস কেস আপিল শুনানি চলমান রয়েছে। সুবিচার চেয়ে রাশমনি বলেন, “এই বয়সে আমি আর কিছু চাই না, শুধু আমার স্বামীর ভিটায় মরতে চাই। যারা আমার মতো বৃদ্ধাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে, তাদের কঠিন শাস্তি চাই।”

এই ঘটনায় স্থানীয় জনগণের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা অবিলম্বে রাকেশ ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।