ঢাকা ১০:০৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ৪ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বৈরী আবহাওয়ায় ফলন নিয়ে শঙ্কায় বীরগঞ্জের লিচু চাষিরা

প্রসেনজিৎ চন্দ্র শর্মা, দিনাজপুর প্রতিনিধি::

ছবি: চেকপোস্ট

দিনাজপুরের বীরগঞ্জে টানা অনাবৃষ্টি ও মৃদু তাপপ্রবাহের কারণে ঝরে পড়ছে লিচুর গুটি, এতে ফলন নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন এলাকার লিচু চাষিরা। আবহাওয়ার এমন বৈরি আচরণে ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন হাজারো লিচু চাষি ও বাগান মালিক।

চৈত্র মাসের শুরু থেকেই গাছে দেখা দেয় মুকুলের সমারোহ। সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে ফুটে ওঠা মুকুল আর তার সুবাসে ভরে ওঠে পুরো এলাকা। এরপর ধীরে ধীরে গুটি আসতে শুরু করে। শুরুতে ফলনের সম্ভাবনায় আশাবাদী ছিলেন চাষিরা। কিন্তু টানা খরা, অনাবৃষ্টি ও মৃদু তাপপ্রবাহে মুকুল শুকিয়ে ঝরে পড়তে শুরু করেছে।

বীরগঞ্জ উপজেলার রামপুর এলাকার লিচু চাষি মিলন বলেন, “এ বছর বোম্বাই জাতের লিচুর গাছে মুকুলের পরিবর্তে অনেক গাছে শুধু পাতা এসেছে। কিছু গাছে যেটুকু মুকুল এসেছিল, সেটাও আগাম বৃষ্টিতে ঝরে গেছে। এখন গুটিগুলোও ঝরতে শুরু করেছে।”

এছাড়া জেলখানাপাড়ার চাষি আবুল কালাম জানান, “একটি বড় গাছে সাধারণত ২০ থেকে ২৫ হাজার লিচু পাওয়া যায়। ছোট গাছে পাওয়া যায় এক থেকে দেড় হাজার। তবে এবারের পরিস্থিতিতে সেই পরিমাণেও লিচু উৎপাদন হবে না বলে মনে হচ্ছে।”

বীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শরিফুল ইসলাম বলেন, “চাষিদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত তাপমাত্রায় দিনে গাছে সেচ বা স্প্রে না দিয়ে সন্ধ্যার পর দিতে বলা হচ্ছে। এতে করে গাছ কিছুটা হলেও রক্ষা পাবে। পাশাপাশি অনুখাদ্য প্রয়োগেও সুফল মিলবে।”

তিনি আরও জানান, এ বছর উপজেলায় লিচুর আবাদ হয়েছে প্রায় ৪২০ হেক্টর জমিতে, এবং লিচু বাগানের সংখ্যা ৪৯৬টির বেশি। বাড়ির ভিটা, আঙিনা কিংবা সীমিত জমিতেও চাষ হচ্ছে লিচু। বেদানা, বোম্বাই, মাদ্রাজি, চায়না থ্রি ও দেশি জাতের লিচু এ অঞ্চলে বেশি চাষ হয়। এসব জাতের গুণগত মানও ভালো, যা বাজারে চাহিদা বাড়ায়।

উপজেলা কৃষি দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, এবার প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ কোটি টাকা মূল্যের লিচু উৎপাদনের সম্ভাবনা ছিল। তবে বর্তমান আবহাওয়ার প্রভাবে সেই প্রত্যাশা ব্যাহত হতে পারে।

চাষিরা বলছেন, “প্রতি বছর বাজার পরিস্থিতি, পরিবহন ব্যয় ও আবহাওয়ার ওপরই নির্ভর করে আমাদের লাভ-ক্ষতির হিসাব। এখন যে অবস্থায় রয়েছে, তাতে ফলন কম হলে লোকসান গুনতে হবে।”

চাষিদের আশঙ্কা—এই ধারা অব্যাহত থাকলে লিচু উৎপাদন আশঙ্কাজনক হারে কমে যাবে। এতে শুধু কৃষকই নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ব্যবসায়ী, পরিবহনকর্মী ও স্থানীয় অর্থনীতির সঙ্গে জড়িত অনেকেই।

ট্যাগস :

নিউজটি টাইম লাইনে শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

চেকপোস্ট

Checkpost is one of the most popular Bengali news portal and print newspaper in Bangladesh. The print and online news portal started its operations with a commitment to fearless, investigative, informative and unbiased journalism.
আপডেট সময় ০১:১৮:০৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ এপ্রিল ২০২৫
৫২২ বার পড়া হয়েছে

বৈরী আবহাওয়ায় ফলন নিয়ে শঙ্কায় বীরগঞ্জের লিচু চাষিরা

আপডেট সময় ০১:১৮:০৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ এপ্রিল ২০২৫

দিনাজপুরের বীরগঞ্জে টানা অনাবৃষ্টি ও মৃদু তাপপ্রবাহের কারণে ঝরে পড়ছে লিচুর গুটি, এতে ফলন নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন এলাকার লিচু চাষিরা। আবহাওয়ার এমন বৈরি আচরণে ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন হাজারো লিচু চাষি ও বাগান মালিক।

চৈত্র মাসের শুরু থেকেই গাছে দেখা দেয় মুকুলের সমারোহ। সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে ফুটে ওঠা মুকুল আর তার সুবাসে ভরে ওঠে পুরো এলাকা। এরপর ধীরে ধীরে গুটি আসতে শুরু করে। শুরুতে ফলনের সম্ভাবনায় আশাবাদী ছিলেন চাষিরা। কিন্তু টানা খরা, অনাবৃষ্টি ও মৃদু তাপপ্রবাহে মুকুল শুকিয়ে ঝরে পড়তে শুরু করেছে।

বীরগঞ্জ উপজেলার রামপুর এলাকার লিচু চাষি মিলন বলেন, “এ বছর বোম্বাই জাতের লিচুর গাছে মুকুলের পরিবর্তে অনেক গাছে শুধু পাতা এসেছে। কিছু গাছে যেটুকু মুকুল এসেছিল, সেটাও আগাম বৃষ্টিতে ঝরে গেছে। এখন গুটিগুলোও ঝরতে শুরু করেছে।”

এছাড়া জেলখানাপাড়ার চাষি আবুল কালাম জানান, “একটি বড় গাছে সাধারণত ২০ থেকে ২৫ হাজার লিচু পাওয়া যায়। ছোট গাছে পাওয়া যায় এক থেকে দেড় হাজার। তবে এবারের পরিস্থিতিতে সেই পরিমাণেও লিচু উৎপাদন হবে না বলে মনে হচ্ছে।”

বীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শরিফুল ইসলাম বলেন, “চাষিদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত তাপমাত্রায় দিনে গাছে সেচ বা স্প্রে না দিয়ে সন্ধ্যার পর দিতে বলা হচ্ছে। এতে করে গাছ কিছুটা হলেও রক্ষা পাবে। পাশাপাশি অনুখাদ্য প্রয়োগেও সুফল মিলবে।”

তিনি আরও জানান, এ বছর উপজেলায় লিচুর আবাদ হয়েছে প্রায় ৪২০ হেক্টর জমিতে, এবং লিচু বাগানের সংখ্যা ৪৯৬টির বেশি। বাড়ির ভিটা, আঙিনা কিংবা সীমিত জমিতেও চাষ হচ্ছে লিচু। বেদানা, বোম্বাই, মাদ্রাজি, চায়না থ্রি ও দেশি জাতের লিচু এ অঞ্চলে বেশি চাষ হয়। এসব জাতের গুণগত মানও ভালো, যা বাজারে চাহিদা বাড়ায়।

উপজেলা কৃষি দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, এবার প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ কোটি টাকা মূল্যের লিচু উৎপাদনের সম্ভাবনা ছিল। তবে বর্তমান আবহাওয়ার প্রভাবে সেই প্রত্যাশা ব্যাহত হতে পারে।

চাষিরা বলছেন, “প্রতি বছর বাজার পরিস্থিতি, পরিবহন ব্যয় ও আবহাওয়ার ওপরই নির্ভর করে আমাদের লাভ-ক্ষতির হিসাব। এখন যে অবস্থায় রয়েছে, তাতে ফলন কম হলে লোকসান গুনতে হবে।”

চাষিদের আশঙ্কা—এই ধারা অব্যাহত থাকলে লিচু উৎপাদন আশঙ্কাজনক হারে কমে যাবে। এতে শুধু কৃষকই নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ব্যবসায়ী, পরিবহনকর্মী ও স্থানীয় অর্থনীতির সঙ্গে জড়িত অনেকেই।