বেনাপোল-মোংলা কমিউটার ট্রেন লিজ দেওয়ার পাঁয়তারা, যাত্রীদের উদ্বেগ
বেনাপোল-মোংলা চলাচলকারী কমিউটার ট্রেনটি লোকসান দেখিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের একমাত্র লাভজনক ট্রেনটিকে বেসরকারি খাতে লিজ দেওয়ার চক্রান্ত করছে বাংলাদেশ রেলওয়ের কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তা। রেলের আয় কম দেখানোর জন্য কয়েক মাস আগে থেকেই পরিকল্পিতভাবে কোচ কমিয়ে রাখা হয়। ৭ কোচের পরিবর্তে ৫ কোচ দিয়ে ট্রেন চালানো হয়, ফলে যাত্রীরা সিট না পেয়ে দাঁড়িয়ে যাতায়াত করতে বাধ্য হন। অনেকে টিকিট হাতে পেয়েও প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষা করতেন।
এ ট্রেনটি পর্যটকদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে দেশের একমাত্র ফুলের শহর গদখালির সৌন্দর্য উপভোগের জন্য বহু পর্যটক ঝিকরগাছা ও নাভারণ স্টেশনে নামতেন।
বর্তমানে বেতনা এক্সপ্রেস নামে পরিচিত ট্রেনটি সকাল ৬:১০ মিনিটে খুলনা থেকে ছেড়ে ৮:৩০ মিনিটে বেনাপোলে পৌঁছে। পরবর্তীতে সকাল ৯:১৫ মিনিটে বেনাপোল থেকে মোংলা কমিউটার হিসেবে ছেড়ে দুপুর ১:০০ টায় মোংলায় পৌঁছে। আবার ১:৩০ মিনিটে মোংলা থেকে ছেড়ে বিকাল ৪:৩০ মিনিটে বেনাপোলে পৌঁছে, এবং বিকাল ৫:০০ টায় বেনাপোল থেকে ছেড়ে সন্ধ্যা ৭:৪৫ মিনিটে খুলনায় পৌঁছে। ট্রেনটি সপ্তাহে মঙ্গলবার একদিন বন্ধ থাকে।
ট্রেনটির যাত্রীসংখ্যা কম দেখানোর জন্য পরিকল্পিতভাবে কিছু স্টেশনে ট্রেন থামানো হয় না। উদাহরণস্বরূপ, ফুলতলা ও দৌলতপুরের মাঝে অবস্থিত আড়ংঘাটা স্টেশন কার্যত অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এ স্টেশনের বেশ কিছু সরঞ্জাম চুরি হয়েছে বলে জানা গেছে।
বাসের তুলনায় ট্রেন ভাড়া অর্ধেকের কম হওয়ায় যাত্রীরা সাচ্ছন্দ্যে এ ট্রেনে ভ্রমণ করেন। ভারতীয় ট্যুরিস্ট ভিসা সাময়িকভাবে বন্ধ থাকায় যাত্রী কিছুটা কম থাকলেও, তবুও ট্রেনটি লাভজনক। ২০২৪ সালের নভেম্বরে ট্রেনের কাউন্টার ক্যাশ ছিল ১৯,৪৩,৬৫৫ টাকা, এবং টিটিই ক্যাশ ছিল ২,৯৮,০৮০ টাকা। ডিসেম্বর মাসে কাউন্টার ক্যাশ ২১,৪৪,৮৪০ টাকা এবং টিটিই ক্যাশ ৩,১৩,০৮৫ টাকা। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে কাউন্টার ক্যাশ ২১,৩৯,৮১৫ টাকা এবং টিটিই ক্যাশ ৩,৪০,২৯৫ টাকা ছিল।
বেতনা এক্সপ্রেস ও মোংলা কমিউটার ট্রেনটি বেসরকারি খাতে লিজের বিষয়ে পাকশী ডিআরএম-এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, কিছুদিন আগে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল, তবে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। বিষয়টি স্থগিত রয়েছে।
ট্রেনটি বেসরকারি খাতে লিজ দিলে সরকারের তেল, জনবল, স্টেশন, রেলওয়ে পুলিশ, আরএনবি সবকিছুই দিতে হবে। শুধু টিটিই থাকবেন না, বেসরকারি অপারেটর তার নিজস্ব লোক দিয়ে টিকিট বিক্রির মাধ্যমে আয় করবে এবং সরকারকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করবে।
এলাকাবাসী ও নিয়মিত যাত্রীরা এ ট্রেনটিকে বেসরকারি খাতে দেখতে চান না। তারা রেলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও রেল মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।