ঢাকা ০৬:৫৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৪ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বীরগঞ্জের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার নাজুক অবস্থা

প্রসেনজিৎ চন্দ্র শর্মা ,চিরিরবন্দর ,দিনাজপুর ::

দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার নিজপাড়া ১৮৯নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ চরম অবহেলিত। ছয়জন শিক্ষক পদে নিয়োগ থাকা সত্ত্বেও বর্তমানে মাত্র একজন শিক্ষক দিয়েই চলছে বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম। শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১২০-১৩০ হলেও উপস্থিতির হার অত্যন্ত কম। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রথম শ্রেণিতে ১ জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ১ জন, তৃতীয় শ্রেণিতে ৫ জন এবং চতুর্থ শ্রেণিতে ১ জনসহ মোট ৮ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত।

বিদ্যালয়টি ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এবং ২০০২-২০০৩ শিক্ষাবর্ষে সরকারিকরণ করা হয়। দাতব্য ভূমিতে নির্মিত এই বিদ্যালয়ে বর্তমানে ছয়টি শিক্ষক পদ রয়েছে। তবে বাস্তব পরিস্থিতি ভিন্ন। একজন মাত্র শিক্ষক, আরিফা জাহান, পুরো বিদ্যালয়ের দায়িত্ব পালন করছেন। শিক্ষক সংকটের কারণে কয়েকটি শ্রেণিকক্ষ বন্ধ রাখা হয়েছে।

স্থানীয় অভিভাবকরা অভিযোগ করেছেন যে প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল লতিফ অধিকাংশ সময় বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন। উপস্থিত থাকলেও তিনি নিয়ম-শৃঙ্খলার তোয়াক্কা না করে কাজ করেন। লুঙ্গি পরে বিদ্যালয়ে আসা এবং দাপ্তরিক কাজে বেশি ব্যস্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে মো. সফিকুল ইসলাম ছুটিতে আছেন, আর ওমর ফারুক ভোটার হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহে নিয়োজিত। বাকি তিনজন, প্রধান শিক্ষকসহ, নানা অজুহাতে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত। এর ফলে পাঠদান ব্যবস্থা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার মো. মাজেদুর রহমান বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করে বাস্তব চিত্র পর্যবেক্ষণ করেছেন। তিনি বলেছেন, অনুপস্থিত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোছা. শাহজিদা হক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন এবং এ বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছেন।

শিক্ষক সংকট ও বিদ্যালয়ের অব্যবস্থাপনার কারণে অভিভাবকরা সরকারি বিদ্যালয়ের উপর আস্থা হারিয়ে সন্তানদের কিন্ডারগার্টেনগুলোতে পাঠাতে বাধ্য হচ্ছেন। “শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড” স্লোগানটি এখানে শুধুমাত্র কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ।

বীরগঞ্জ উপজেলার শিক্ষা ব্যবস্থার এই নাজুক চিত্র দ্রুত সমাধানের দাবি জানাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ত্বরিত হস্তক্ষেপ ছাড়া এই সংকট কাটানো সম্ভব নয়। শিক্ষকের অনুপস্থিতি ও দায়িত্বে অবহেলার কারণে একটি প্রজন্মের শিক্ষাগত ভবিষ্যৎ ঝুঁকির মুখে পড়ছে।

ট্যাগস :

নিউজটি টাইম লাইনে শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

চেকপোস্ট

Checkpost is one of the most popular Bengali news portal and print newspaper in Bangladesh. The print and online news portal started its operations with a commitment to fearless, investigative, informative and unbiased journalism.
আপডেট সময় ০৯:১১:৪৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫
৫১৪ বার পড়া হয়েছে

বীরগঞ্জের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার নাজুক অবস্থা

আপডেট সময় ০৯:১১:৪৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫

দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার নিজপাড়া ১৮৯নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ চরম অবহেলিত। ছয়জন শিক্ষক পদে নিয়োগ থাকা সত্ত্বেও বর্তমানে মাত্র একজন শিক্ষক দিয়েই চলছে বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম। শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১২০-১৩০ হলেও উপস্থিতির হার অত্যন্ত কম। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রথম শ্রেণিতে ১ জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ১ জন, তৃতীয় শ্রেণিতে ৫ জন এবং চতুর্থ শ্রেণিতে ১ জনসহ মোট ৮ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত।

বিদ্যালয়টি ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এবং ২০০২-২০০৩ শিক্ষাবর্ষে সরকারিকরণ করা হয়। দাতব্য ভূমিতে নির্মিত এই বিদ্যালয়ে বর্তমানে ছয়টি শিক্ষক পদ রয়েছে। তবে বাস্তব পরিস্থিতি ভিন্ন। একজন মাত্র শিক্ষক, আরিফা জাহান, পুরো বিদ্যালয়ের দায়িত্ব পালন করছেন। শিক্ষক সংকটের কারণে কয়েকটি শ্রেণিকক্ষ বন্ধ রাখা হয়েছে।

স্থানীয় অভিভাবকরা অভিযোগ করেছেন যে প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল লতিফ অধিকাংশ সময় বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন। উপস্থিত থাকলেও তিনি নিয়ম-শৃঙ্খলার তোয়াক্কা না করে কাজ করেন। লুঙ্গি পরে বিদ্যালয়ে আসা এবং দাপ্তরিক কাজে বেশি ব্যস্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে মো. সফিকুল ইসলাম ছুটিতে আছেন, আর ওমর ফারুক ভোটার হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহে নিয়োজিত। বাকি তিনজন, প্রধান শিক্ষকসহ, নানা অজুহাতে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত। এর ফলে পাঠদান ব্যবস্থা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার মো. মাজেদুর রহমান বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করে বাস্তব চিত্র পর্যবেক্ষণ করেছেন। তিনি বলেছেন, অনুপস্থিত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোছা. শাহজিদা হক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন এবং এ বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছেন।

শিক্ষক সংকট ও বিদ্যালয়ের অব্যবস্থাপনার কারণে অভিভাবকরা সরকারি বিদ্যালয়ের উপর আস্থা হারিয়ে সন্তানদের কিন্ডারগার্টেনগুলোতে পাঠাতে বাধ্য হচ্ছেন। “শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড” স্লোগানটি এখানে শুধুমাত্র কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ।

বীরগঞ্জ উপজেলার শিক্ষা ব্যবস্থার এই নাজুক চিত্র দ্রুত সমাধানের দাবি জানাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ত্বরিত হস্তক্ষেপ ছাড়া এই সংকট কাটানো সম্ভব নয়। শিক্ষকের অনুপস্থিতি ও দায়িত্বে অবহেলার কারণে একটি প্রজন্মের শিক্ষাগত ভবিষ্যৎ ঝুঁকির মুখে পড়ছে।


Notice: ob_end_flush(): failed to send buffer of zlib output compression (0) in /home2/checkpostcom/public_html/wp-includes/functions.php on line 5464