ঢাকা ০৩:২৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৪ অগাস্ট ২০২৫, ১৯ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিএনপির ৩১ দফা ‘রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখা’, কিন্তু স্থানীয় পর্যায়ে নেই পর্যাপ্ত ধারণা

শহীদুল ইসলাম শরীফ, স্টাফ রিপোর্টার::

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ঘোষিত ৩১ দফা মূলত ‘রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখা’ হিসেবে পরিচিত। এই রূপরেখার মাধ্যমে দলটি গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, আইনের শাসন, অর্থনৈতিক মুক্তি এবং একটি জনকল্যাণমুখী সরকার গঠনের প্রত্যয় ঘোষণা করেছে। কেন্দ্রীয় পর্যায়ে ব্যাপক গুরুত্ব দিয়ে প্রচারিত হলেও, তৃণমূল পর্যায়ের অনেক নেতাকর্মীর কাছেই এই রূপরেখা সম্পর্কে সুষ্পষ্ট ধারণা নেই।

দোহার উপজেলা বিএনপির ত্যাগী ও পরীক্ষিত ১০ জন স্থানীয় নেতাকর্মীর কাছে যখন ৩১ দফা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়, তাদের মধ্যে মাত্র দুইজন সন্তোষজনকভাবে উত্তর দিতে পারেন। বাকিরা কেউই জানেন না এই দফাগুলো কী, এমনকি অনেকের কাছেই নেই কোনো বুকলেট বা প্রচারপত্র।

তৃণমূলের মধ্যে দূরত্ব: কেন জানে না কর্মীরা?

বিষয়টি দলীয় প্রচার কাঠামোর দুর্বলতাকেই ইঙ্গিত করে। কেন্দ্র থেকে ঘোষিত এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক রূপরেখা তৃণমূল কর্মীদের মাঝে না পৌঁছানোয় প্রশ্ন উঠেছে সাংগঠনিক দক্ষতা ও দলীয় যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সংগঠন চালাতে গেলে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন দলীয় কর্মীদের মধ্যে দিকনির্দেশনা, আদর্শ ও কর্মসূচির স্পষ্টতা। যদি স্থানীয় নেতাকর্মীরাই ৩১ দফা সম্পর্কে না জানেন, তাহলে তারা সাধারণ ভোটারদের কাছে দলের ভিশন কীভাবে তুলে ধরবেন?

ইউপি নির্বাচনে কেন্দ্রীয় নীতির ব্যত্যয়

জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি কেন্দ্রীয়ভাবে অংশগ্রহণমূলক সরকার ও নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান নিলেও, স্থানীয় পর্যায়ে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। কিছু নেতা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে নিজেকে তুলে ধরছেন, এমনকি কেন্দ্রীয় নেতাদের ছবি ব্যবহার করে ব্যানার টানিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন।

দলের পক্ষ থেকে ইউপি নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত থাকলেও, কিছু নেতা ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত স্বার্থে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। এ থেকে স্পষ্ট হয়, স্থানীয় পর্যায়ে দলীয় শৃঙ্খলা ও আদর্শের চেয়ে ব্যক্তি স্বার্থ বড় হয়ে উঠেছে।

এই পরিস্থিতি যে সমস্যাগুলোর ইঙ্গিত দেয়:

১. সংগঠনগত দুর্বলতা:
তথ্য ও আদর্শ কর্মীদের মাঝে সঠিকভাবে না পৌঁছানো।

২. দৃষ্টিভঙ্গির অভাব:
কর্মীদের মধ্যে দলের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নিয়ে পরিষ্কার ধারণা না থাকা।

৩. জনসংযোগের ঘাটতি:
কর্মীরা যখন দফাগুলো জানেন না, তখন তারা সাধারণ মানুষের সঙ্গেও দলের বার্তা ভাগ করে নিতে অক্ষম হন।

৪. প্রচারের দুর্বলতা:
বুকলেট, লিফলেট, পোস্টার-এই প্রচার সামগ্রীর ঘাটতি।

৫. আস্থার সংকট:
ত্যাগী নেতাকর্মীদের এভাবে বিমুখ হয়ে পড়া, ভবিষ্যতে তাদের দলীয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণে অনীহা সৃষ্টি করতে পারে।

দুইজন ব্যতিক্রম-আলোকবর্তিকা?

দলীয় দফা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখা ওই দুইজন নেতাকর্মী হতে পারেন স্থানীয় পর্যায়ে ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের প্রতিচ্ছবি। এটি প্রমাণ করে-যদি সদিচ্ছা থাকে, তাহলে একজন কর্মী নিজ উদ্যোগেই দলের আদর্শ আয়ত্ত করতে পারেন। তবে, দুজনের সচেতনতা বাকি আটজনের অজ্ঞতা ঢেকে দিতে পারে না।

করণীয় ও সুপারিশ:

১. ব্যাপক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি:
ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে ৩১ দফা নিয়ে ধারাবাহিক প্রশিক্ষণের আয়োজন করা।

২. সহজলভ্য প্রচার সামগ্রী:
দফাগুলো নিয়ে সহজ ভাষায় লিফলেট, বুকলেট তৈরি করে সেগুলো মুদ্রিত ও ডিজিটাল উভয় মাধ্যমে প্রচার চালানো।

৩. আলোচনা ও মতবিনিময় সভা:
স্থানীয় কমিটিতে নিয়মিত আলোচনা সভার মাধ্যমে কর্মীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।

৪. মনিটরিং ও জবাবদিহিতা:
কেন্দ্রীয় পর্যায়ে একটি মনিটরিং সেল গঠন করে নিশ্চিত করা যে, তৃণমূল পর্যায়ে তথ্য ও দিকনির্দেশনা পৌঁছাচ্ছে কিনা।

৫. সাংগঠনিক শুদ্ধি অভিযান:
যারা দলীয় আদর্শ ও সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

ট্যাগস :

নিউজটি টাইম লাইনে শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

চেকপোস্ট

Checkpost is one of the most popular Bengali news portal and print newspaper in Bangladesh. The print and online news portal started its operations with a commitment to fearless, investigative, informative and unbiased journalism.
আপডেট সময় ০৯:১৪:৪৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ অগাস্ট ২০২৫
৫৩০ বার পড়া হয়েছে

বিএনপির ৩১ দফা ‘রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখা’, কিন্তু স্থানীয় পর্যায়ে নেই পর্যাপ্ত ধারণা

আপডেট সময় ০৯:১৪:৪৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ অগাস্ট ২০২৫

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ঘোষিত ৩১ দফা মূলত ‘রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখা’ হিসেবে পরিচিত। এই রূপরেখার মাধ্যমে দলটি গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, আইনের শাসন, অর্থনৈতিক মুক্তি এবং একটি জনকল্যাণমুখী সরকার গঠনের প্রত্যয় ঘোষণা করেছে। কেন্দ্রীয় পর্যায়ে ব্যাপক গুরুত্ব দিয়ে প্রচারিত হলেও, তৃণমূল পর্যায়ের অনেক নেতাকর্মীর কাছেই এই রূপরেখা সম্পর্কে সুষ্পষ্ট ধারণা নেই।

দোহার উপজেলা বিএনপির ত্যাগী ও পরীক্ষিত ১০ জন স্থানীয় নেতাকর্মীর কাছে যখন ৩১ দফা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়, তাদের মধ্যে মাত্র দুইজন সন্তোষজনকভাবে উত্তর দিতে পারেন। বাকিরা কেউই জানেন না এই দফাগুলো কী, এমনকি অনেকের কাছেই নেই কোনো বুকলেট বা প্রচারপত্র।

তৃণমূলের মধ্যে দূরত্ব: কেন জানে না কর্মীরা?

বিষয়টি দলীয় প্রচার কাঠামোর দুর্বলতাকেই ইঙ্গিত করে। কেন্দ্র থেকে ঘোষিত এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক রূপরেখা তৃণমূল কর্মীদের মাঝে না পৌঁছানোয় প্রশ্ন উঠেছে সাংগঠনিক দক্ষতা ও দলীয় যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সংগঠন চালাতে গেলে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন দলীয় কর্মীদের মধ্যে দিকনির্দেশনা, আদর্শ ও কর্মসূচির স্পষ্টতা। যদি স্থানীয় নেতাকর্মীরাই ৩১ দফা সম্পর্কে না জানেন, তাহলে তারা সাধারণ ভোটারদের কাছে দলের ভিশন কীভাবে তুলে ধরবেন?

ইউপি নির্বাচনে কেন্দ্রীয় নীতির ব্যত্যয়

জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি কেন্দ্রীয়ভাবে অংশগ্রহণমূলক সরকার ও নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান নিলেও, স্থানীয় পর্যায়ে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। কিছু নেতা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে নিজেকে তুলে ধরছেন, এমনকি কেন্দ্রীয় নেতাদের ছবি ব্যবহার করে ব্যানার টানিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন।

দলের পক্ষ থেকে ইউপি নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত থাকলেও, কিছু নেতা ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত স্বার্থে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। এ থেকে স্পষ্ট হয়, স্থানীয় পর্যায়ে দলীয় শৃঙ্খলা ও আদর্শের চেয়ে ব্যক্তি স্বার্থ বড় হয়ে উঠেছে।

এই পরিস্থিতি যে সমস্যাগুলোর ইঙ্গিত দেয়:

১. সংগঠনগত দুর্বলতা:
তথ্য ও আদর্শ কর্মীদের মাঝে সঠিকভাবে না পৌঁছানো।

২. দৃষ্টিভঙ্গির অভাব:
কর্মীদের মধ্যে দলের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নিয়ে পরিষ্কার ধারণা না থাকা।

৩. জনসংযোগের ঘাটতি:
কর্মীরা যখন দফাগুলো জানেন না, তখন তারা সাধারণ মানুষের সঙ্গেও দলের বার্তা ভাগ করে নিতে অক্ষম হন।

৪. প্রচারের দুর্বলতা:
বুকলেট, লিফলেট, পোস্টার-এই প্রচার সামগ্রীর ঘাটতি।

৫. আস্থার সংকট:
ত্যাগী নেতাকর্মীদের এভাবে বিমুখ হয়ে পড়া, ভবিষ্যতে তাদের দলীয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণে অনীহা সৃষ্টি করতে পারে।

দুইজন ব্যতিক্রম-আলোকবর্তিকা?

দলীয় দফা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখা ওই দুইজন নেতাকর্মী হতে পারেন স্থানীয় পর্যায়ে ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের প্রতিচ্ছবি। এটি প্রমাণ করে-যদি সদিচ্ছা থাকে, তাহলে একজন কর্মী নিজ উদ্যোগেই দলের আদর্শ আয়ত্ত করতে পারেন। তবে, দুজনের সচেতনতা বাকি আটজনের অজ্ঞতা ঢেকে দিতে পারে না।

করণীয় ও সুপারিশ:

১. ব্যাপক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি:
ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে ৩১ দফা নিয়ে ধারাবাহিক প্রশিক্ষণের আয়োজন করা।

২. সহজলভ্য প্রচার সামগ্রী:
দফাগুলো নিয়ে সহজ ভাষায় লিফলেট, বুকলেট তৈরি করে সেগুলো মুদ্রিত ও ডিজিটাল উভয় মাধ্যমে প্রচার চালানো।

৩. আলোচনা ও মতবিনিময় সভা:
স্থানীয় কমিটিতে নিয়মিত আলোচনা সভার মাধ্যমে কর্মীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।

৪. মনিটরিং ও জবাবদিহিতা:
কেন্দ্রীয় পর্যায়ে একটি মনিটরিং সেল গঠন করে নিশ্চিত করা যে, তৃণমূল পর্যায়ে তথ্য ও দিকনির্দেশনা পৌঁছাচ্ছে কিনা।

৫. সাংগঠনিক শুদ্ধি অভিযান:
যারা দলীয় আদর্শ ও সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।