ঢাকা ০৩:৫১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাবার অভাব, আমার নিরবতা: চার বছরের নিঃশব্দ যাত্রা

শেখ শাহাউর রহমান বেলাল::

বাবার অভাব, আমার নিরবতা: চার বছরের নিঃশব্দ যাত্রা

আজ থেকে চার বছর আগে, এক অন্ধকার দিন ভেঙে গিয়ে জীবনের আলো চলে গিয়েছিল। এক স্মৃতি, এক অনুভূতি, এক শক্তি—আমার প্রিয় বাবা আর আমাদের মধ্যে নেই। বাবার চলে যাওয়ার পর জীবন যেমন থমকে গিয়েছিল, তেমনি দিনগুলোও সময়ের গতির সাথে কোথাও হারিয়ে যেতে থাকে। চার বছর পর আজও সেই শূন্যতা, সেই নিরবতা ঘিরে রেখেছে আমাকে। এখন, এই দীর্ঘ সময় পরে যখন আমি ফিরে তাকাই, তখন মনে হয়—বাবা ছাড়া জীবন, সময়, সম্পর্ক আর অনুভূতির মানে কেমন ছিল তা এখনো পুরোপুরি অনুভব করা সম্ভব হয়নি।

আজকের এই দিনটি আমাদের জীবনের এক গভীর বেদনার দিন। এই দিনে আমরা আমাদের প্রিয় বাবাকে হারিয়েছি। তাঁর স্নেহ, ভালোবাসা, এবং জীবনপথে পথপ্রদর্শনের জন্য আমরা চিরকাল তাঁর কাছে ঋণী।

বাবা ছিলেন আমাদের জীবনের অভিভাবক। তাঁর হাত ধরেই আমরা শিখেছি জীবনের প্রথম পাঠ। তিনি শুধু আমাদের পরিবারের ভিত্তিই ছিলেন না, বরং আমাদের মানসিক শক্তি এবং আত্মবিশ্বাসের উৎস ছিলেন।

বাবা ছিলেন একজন অসাধারণ মানুষ। নিজের কষ্টের কথাটি কখনো প্রকাশ না করে, তিনি সব সময় আমাদের সুখের কথা ভেবেছেন। তাঁর প্রতিটি কথায় ছিল মমতার স্পর্শ এবং প্রতিটি কাজে ছিল আমাদের জন্য উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ার প্রচেষ্টা।

এক শূন্যতার মাঝে জীবন: বাবা চলে যাওয়ার পর একসময় সবকিছু স্থবির হয়ে গিয়েছিল। ভাবতাম, কীভাবে জীবন চলবে? কীভাবে পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে আমার সম্পর্ক আগের মতো থাকবে? বাবা সব সময় আমাদের মাঝে যে শক্তি ও আশ্রয় ছিলেন, তার অভাবে পুরো পরিবার যেন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। এই শূন্যতা শুধু শারীরিকভাবে নয়, মানসিকভাবেও আমাকে ঘিরে ফেলেছিল। কোথাও কিছু একটা ছিল যা বুঝতে পারছিলাম না—এক অনুভূতি, যা আমি জানতাম না।

মনে পড়ে বাবার প্রতিটি মুহূর্ত: বাবা আমার জীবনের এক বিশাল অংশ। বাবার হাসি, কথা, এবং তার জীবনদর্শন এখনও স্পষ্টভাবে মনে আছে। তার শাসন, আদর, হাস্যরস—সবকিছুই যেন কিছুটা কেটে গেছে। আর কখনও তিনি আমার পাশে থাকবেন না, এটা বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। মনে পড়ে, যখন আমি কিছু ভাল করতে চাইতাম, তখন বাবা প্রথমেই উৎসাহ দিতেন। আমি বাবাকে সবকিছু বলতাম—আমার ভয়, আমার দুঃখ, আমার আশা। কিন্তু এখন, সবকিছু মনের মাঝে জমে থাকে। একা একা সব অনুভব করি। তার অভাবটা কখনোই পূর্ণ হয় না।

নিরবতার দিনগুলো: এই চার বছরে কখনোই সেই নিরবতা কাটানো সম্ভব হয়নি। জীবন বদলেছে, তবে শূন্যতাও বড় হয়ে উঠেছে। আজকাল, আমি আর কাউকে সেভাবে আগের মতো শেয়ার করি না। বাবা ছিল আমার শ্রোতা, আমার বন্ধু, আমার পরামর্শদাতা। যখন কিছু অনুভব করি, তখন মনে হয়—যদি বাবা থাকতেন, কত সহজেই সব কিছু শেয়ার করতে পারতাম। কিন্তু এখন একলা একলা দিন কেটে যাচ্ছে। দিনগুলো চলে যাচ্ছে, কিন্তু বাবার শূন্যতা এক ফাঁক রেখে যাচ্ছে।

পরিবারের প্রতি দায়িত্ব: বাবা চলে যাওয়ার পর, পরিবারের প্রতি আমার দায়িত্ব বেড়ে গেছে। মা, ভাই-বোনদের দেখে মনে হয়, যেন বাবা এখনও আমাদের পাশে আছেন, কিন্তু বাবা ছাড়া এই নতুন দায়িত্ব পালন করাটা অনেক কঠিন। সংসারের নানা কাজ, ছোট বড় সিদ্ধান্ত—এগুলোর মাঝে বাবার অভাব আরও তীব্র হয়ে ওঠে। মাঝে মাঝে ভাবি, যদি বাবা থাকতেন, তাহলে সে সবকিছু সহজ হয়ে যেত। কিন্তু এখন, কিছুটা স্বচ্ছন্দ হয়ে হলেও, এসব দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মানসিক চাপ অনুভব হয়।

বাবার শিক্ষাগুলো: বাবা, যিনি একবার আমাকে বলেছিলেন, “জীবন সব সময় সহজ হবে না, তবে তুমি কখনো হাল ছেড়ো না”, তার এই কথা আমি এখনও মনের মধ্যে ধারণ করে রেখেছি। বাবার শিক্ষা ও আদর্শ আমাকে চলতে সাহায্য করে, তবে মাঝে মাঝে মনে হয়, যদি তিনি পাশে থাকতেন, তাহলে হয়তো আরও ভালোভাবে পরামর্শ দিতে পারতেন। তবে তার শিক্ষা আমাকে শক্তি জোগায়—কীভাবে জীবনের কঠিন সময়গুলোর মধ্য দিয়ে যেতে হয়, কীভাবে এগিয়ে যেতে হয়, সব কিছুতেই বাবা ছিল আমার শক্তির উৎস।

শোক এবং সংগ্রাম: চার বছর পরও বাবার শোক এখনও এক মেঘের মতো রয়ে গেছে। মাঝে মাঝে মনে হয়, আমি সেই শোকের মধ্যে হারিয়ে যাব। তবে, বাবার স্মৃতি আমাকে শিখিয়েছে, জীবনের যাত্রা থেমে থাকে না। শোক এবং সংগ্রাম সবই আমাদের জীবনের অংশ। বাবার চলে যাওয়ার পর যেসব কিছু শিখেছি, সেগুলোই এখন আমাকে শক্তি দেয়। আমি জানি, বাবার অভাব কখনো পূর্ণ হবে না, তবে তার শিখানো পথে হাঁটতে পারলে, তার স্মৃতি কখনো হারিয়ে যাবে না।

বাবা হারা এই চারটি বছর আমার জীবনের এক কঠিন, নিরব, কিন্তু শক্তিশালী অধ্যায় হিসেবে রয়ে যাবে। তার স্মৃতি, তার শিক্ষা, এবং তার ভালোবাসা সব সময় আমার সঙ্গে থাকবে। এই নিরবতার দিনগুলো কখনোই পূর্ণ হবে না, তবে এগুলিই আমার জীবনকে আলোকিত করবে, যতদিন না আমি নিজেই সেই শূন্যতার মাঝে শক্তি খুঁজে পাই।

আজকের এই দিনে আমরা তাঁর জন্য গভীর শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা জানাই। তাঁর জন্য সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করছি। আল্লাহ তাআলা যেন তাঁকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন এবং তাঁর আত্মাকে শান্তিতে রাখেন।

বাবা, আমরা তোমাকে অনেক মিস করি। তোমার স্মৃতি আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে রয়ে যাবে। তুমি আমাদের অন্তরের গভীরে চিরকাল বেঁচে থাকবে।

সবাইকে অনুরোধ করছি, বাবার জন্য দোয়া করুন। আল্লাহ যেন তাঁকে পরকালীন শান্তি দান করেন এবং আমাদের সবাইকে তাঁর দেখানো সৎ পথে চলার তৌফিক দেন।

 

শেখ শাহাউর রহমান বেলাল

সম্পাদক/প্রকাশক: চেকপোস্ট

ট্যাগস :

নিউজটি টাইম লাইনে শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

চেকপোস্ট

Checkpost is one of the most popular Bengali news portal and print newspaper in Bangladesh. The print and online news portal started its operations with a commitment to fearless, investigative, informative and unbiased journalism.
আপডেট সময় ০১:০২:৩৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ জানুয়ারী ২০২৫
৫৫২ বার পড়া হয়েছে

বাবার অভাব, আমার নিরবতা: চার বছরের নিঃশব্দ যাত্রা

আপডেট সময় ০১:০২:৩৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ জানুয়ারী ২০২৫

আজ থেকে চার বছর আগে, এক অন্ধকার দিন ভেঙে গিয়ে জীবনের আলো চলে গিয়েছিল। এক স্মৃতি, এক অনুভূতি, এক শক্তি—আমার প্রিয় বাবা আর আমাদের মধ্যে নেই। বাবার চলে যাওয়ার পর জীবন যেমন থমকে গিয়েছিল, তেমনি দিনগুলোও সময়ের গতির সাথে কোথাও হারিয়ে যেতে থাকে। চার বছর পর আজও সেই শূন্যতা, সেই নিরবতা ঘিরে রেখেছে আমাকে। এখন, এই দীর্ঘ সময় পরে যখন আমি ফিরে তাকাই, তখন মনে হয়—বাবা ছাড়া জীবন, সময়, সম্পর্ক আর অনুভূতির মানে কেমন ছিল তা এখনো পুরোপুরি অনুভব করা সম্ভব হয়নি।

আজকের এই দিনটি আমাদের জীবনের এক গভীর বেদনার দিন। এই দিনে আমরা আমাদের প্রিয় বাবাকে হারিয়েছি। তাঁর স্নেহ, ভালোবাসা, এবং জীবনপথে পথপ্রদর্শনের জন্য আমরা চিরকাল তাঁর কাছে ঋণী।

বাবা ছিলেন আমাদের জীবনের অভিভাবক। তাঁর হাত ধরেই আমরা শিখেছি জীবনের প্রথম পাঠ। তিনি শুধু আমাদের পরিবারের ভিত্তিই ছিলেন না, বরং আমাদের মানসিক শক্তি এবং আত্মবিশ্বাসের উৎস ছিলেন।

বাবা ছিলেন একজন অসাধারণ মানুষ। নিজের কষ্টের কথাটি কখনো প্রকাশ না করে, তিনি সব সময় আমাদের সুখের কথা ভেবেছেন। তাঁর প্রতিটি কথায় ছিল মমতার স্পর্শ এবং প্রতিটি কাজে ছিল আমাদের জন্য উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ার প্রচেষ্টা।

এক শূন্যতার মাঝে জীবন: বাবা চলে যাওয়ার পর একসময় সবকিছু স্থবির হয়ে গিয়েছিল। ভাবতাম, কীভাবে জীবন চলবে? কীভাবে পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে আমার সম্পর্ক আগের মতো থাকবে? বাবা সব সময় আমাদের মাঝে যে শক্তি ও আশ্রয় ছিলেন, তার অভাবে পুরো পরিবার যেন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। এই শূন্যতা শুধু শারীরিকভাবে নয়, মানসিকভাবেও আমাকে ঘিরে ফেলেছিল। কোথাও কিছু একটা ছিল যা বুঝতে পারছিলাম না—এক অনুভূতি, যা আমি জানতাম না।

মনে পড়ে বাবার প্রতিটি মুহূর্ত: বাবা আমার জীবনের এক বিশাল অংশ। বাবার হাসি, কথা, এবং তার জীবনদর্শন এখনও স্পষ্টভাবে মনে আছে। তার শাসন, আদর, হাস্যরস—সবকিছুই যেন কিছুটা কেটে গেছে। আর কখনও তিনি আমার পাশে থাকবেন না, এটা বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। মনে পড়ে, যখন আমি কিছু ভাল করতে চাইতাম, তখন বাবা প্রথমেই উৎসাহ দিতেন। আমি বাবাকে সবকিছু বলতাম—আমার ভয়, আমার দুঃখ, আমার আশা। কিন্তু এখন, সবকিছু মনের মাঝে জমে থাকে। একা একা সব অনুভব করি। তার অভাবটা কখনোই পূর্ণ হয় না।

নিরবতার দিনগুলো: এই চার বছরে কখনোই সেই নিরবতা কাটানো সম্ভব হয়নি। জীবন বদলেছে, তবে শূন্যতাও বড় হয়ে উঠেছে। আজকাল, আমি আর কাউকে সেভাবে আগের মতো শেয়ার করি না। বাবা ছিল আমার শ্রোতা, আমার বন্ধু, আমার পরামর্শদাতা। যখন কিছু অনুভব করি, তখন মনে হয়—যদি বাবা থাকতেন, কত সহজেই সব কিছু শেয়ার করতে পারতাম। কিন্তু এখন একলা একলা দিন কেটে যাচ্ছে। দিনগুলো চলে যাচ্ছে, কিন্তু বাবার শূন্যতা এক ফাঁক রেখে যাচ্ছে।

পরিবারের প্রতি দায়িত্ব: বাবা চলে যাওয়ার পর, পরিবারের প্রতি আমার দায়িত্ব বেড়ে গেছে। মা, ভাই-বোনদের দেখে মনে হয়, যেন বাবা এখনও আমাদের পাশে আছেন, কিন্তু বাবা ছাড়া এই নতুন দায়িত্ব পালন করাটা অনেক কঠিন। সংসারের নানা কাজ, ছোট বড় সিদ্ধান্ত—এগুলোর মাঝে বাবার অভাব আরও তীব্র হয়ে ওঠে। মাঝে মাঝে ভাবি, যদি বাবা থাকতেন, তাহলে সে সবকিছু সহজ হয়ে যেত। কিন্তু এখন, কিছুটা স্বচ্ছন্দ হয়ে হলেও, এসব দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মানসিক চাপ অনুভব হয়।

বাবার শিক্ষাগুলো: বাবা, যিনি একবার আমাকে বলেছিলেন, “জীবন সব সময় সহজ হবে না, তবে তুমি কখনো হাল ছেড়ো না”, তার এই কথা আমি এখনও মনের মধ্যে ধারণ করে রেখেছি। বাবার শিক্ষা ও আদর্শ আমাকে চলতে সাহায্য করে, তবে মাঝে মাঝে মনে হয়, যদি তিনি পাশে থাকতেন, তাহলে হয়তো আরও ভালোভাবে পরামর্শ দিতে পারতেন। তবে তার শিক্ষা আমাকে শক্তি জোগায়—কীভাবে জীবনের কঠিন সময়গুলোর মধ্য দিয়ে যেতে হয়, কীভাবে এগিয়ে যেতে হয়, সব কিছুতেই বাবা ছিল আমার শক্তির উৎস।

শোক এবং সংগ্রাম: চার বছর পরও বাবার শোক এখনও এক মেঘের মতো রয়ে গেছে। মাঝে মাঝে মনে হয়, আমি সেই শোকের মধ্যে হারিয়ে যাব। তবে, বাবার স্মৃতি আমাকে শিখিয়েছে, জীবনের যাত্রা থেমে থাকে না। শোক এবং সংগ্রাম সবই আমাদের জীবনের অংশ। বাবার চলে যাওয়ার পর যেসব কিছু শিখেছি, সেগুলোই এখন আমাকে শক্তি দেয়। আমি জানি, বাবার অভাব কখনো পূর্ণ হবে না, তবে তার শিখানো পথে হাঁটতে পারলে, তার স্মৃতি কখনো হারিয়ে যাবে না।

বাবা হারা এই চারটি বছর আমার জীবনের এক কঠিন, নিরব, কিন্তু শক্তিশালী অধ্যায় হিসেবে রয়ে যাবে। তার স্মৃতি, তার শিক্ষা, এবং তার ভালোবাসা সব সময় আমার সঙ্গে থাকবে। এই নিরবতার দিনগুলো কখনোই পূর্ণ হবে না, তবে এগুলিই আমার জীবনকে আলোকিত করবে, যতদিন না আমি নিজেই সেই শূন্যতার মাঝে শক্তি খুঁজে পাই।

আজকের এই দিনে আমরা তাঁর জন্য গভীর শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা জানাই। তাঁর জন্য সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করছি। আল্লাহ তাআলা যেন তাঁকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন এবং তাঁর আত্মাকে শান্তিতে রাখেন।

বাবা, আমরা তোমাকে অনেক মিস করি। তোমার স্মৃতি আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে রয়ে যাবে। তুমি আমাদের অন্তরের গভীরে চিরকাল বেঁচে থাকবে।

সবাইকে অনুরোধ করছি, বাবার জন্য দোয়া করুন। আল্লাহ যেন তাঁকে পরকালীন শান্তি দান করেন এবং আমাদের সবাইকে তাঁর দেখানো সৎ পথে চলার তৌফিক দেন।

 

শেখ শাহাউর রহমান বেলাল

সম্পাদক/প্রকাশক: চেকপোস্ট


Notice: ob_end_flush(): failed to send buffer of zlib output compression (0) in /home2/checkpostcom/public_html/wp-includes/functions.php on line 5464