ঢাকা ০৩:২৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চিরুনি অভিযান চালাবে সেনাবাহিনী

বানিয়াচংয়ে হত্যা মামলায় ৬হাজার ৪শত ৬০জন আসামি

আকিকুর রহমান রুমন, বানিয়াচং::

হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে থানা ঘেরাও করে পুলিশ কর্মকর্তা(এসআই) সন্তোষ দাশ চৌধুরী হত্যার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (২২আগস্ট) বানিয়াচং থানার ওসি(তদন্ত)আবু হানিফ বাদি হয়ে ৫ থেকে ৬ হাজার অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আসামি করে এই হত্যা মামলা দায়ের করেন। অপরদিকে একই দিনে ৯জন হত্যার ঘটনায় ১৬০জনকে নামীয় ও ৩০০জনকে অঞ্জাতনামা আসামি করে অন্য নিহত হওয়া ৮পরিবারের পক্ষে একটি মামলা করেন নিহত হওয়া শিশু হাসানের (১২)এর পিতা ছানু মিয়া। তার মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন বানিয়াচং থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মোহাম্মদ দেলোয়ার হুসাইন।

অন্যদিকে পুলিশ হত্যা মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(বানিয়াচং- আজমিরীগঞ্জ সার্কেল)পলাশ রঞ্জন দে।

উভয় দু’টি মামলার এজাহার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়,গত ৫ আগস্ট দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে উপজেলার এল আর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জড়ো হন কয়েক হাজার লোক। পরে তাঁরা সেখান থেকে একটি মিছিল নিয়ে নতুন বাজার হয়ে বড়বাজারে স্হানীয় শহীদ মিনারে এসে পৌঁছে মিছিলটি। মিছিলকারীদের একটি অংশ বানিয়াচং উপজেলার কয়েকটি অফিসে ইটপাটকেল ছুঁড়ে গ্লাস ভাংচুর করে থানার উদ্দেশ্যে রওয়া হয়।

আন্দোলনকারীদের মিছিলটি থানার সন্নিকটে গেলে বানিয়াচং শাহী ঈদগাহ এলাকায় যাওয়া মাত্রই পুলিশ তাদের বাধা প্রদান করার চেষ্টা করলে বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুঁড়ে। এসময় পুলিশ রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাসের শেল,সাউন্ড গ্রেনেড ছুঁড়লে ঘটনাস্থলেই গুলিবিদ্ধ হয়ে কয়েকজন নিহত হন। এবং গুলিবিদ্ধ অনেকেই আহত হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকেন। তাদেরকে পরবর্তীতে উদ্ধার করে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গুলিবিদ্ধ আরও অনেকেই মারা যান। এই রাতে গুলিবিদ্ধ ৭জন এবং আন্দোলনকারীর গণধোলাইয়ে পুলিশসহ ২জন নিহত নিয়ে মোট ৯জনের প্রানহানীর ঘটে। পরদিন সিলেটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গুলিবিদ্ধ আনাছ (২০)নামের একজন মৃত্যু বরণ করে।

এদিকে সংঘর্ষ চলাকালে তৎকালীন পুলিশের গুলিতে মারা যাওয়ার বিষয়টি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে আশপাশের কয়েকটি মহল্লার মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে থানার সামনে একত্রিত হন। কয়েক হাজার মানুষ বানিয়াচং থানা ঘেরাও করে। শুরু হয় ইটপাটকেল নিক্ষেপ। একপর্যায়ে থানা ভবনে আগুন ধরিয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা। এ সময় থানার ভেতরে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)সহ পুলিশের ১৫ থেকে ১৬ সদস্য আটকা পড়েন। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের ১০ থেকে ১৫ জন নেতা-কর্মী আটকা পড়েন। তারা বিক্ষোভকারীদের ধাওয়ায় থানায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। এসময় উত্তেজিত জনতা বানিয়াচং থানায় আগুন ধরিয়ে দিলে ভেতরে থাকা বেশ কিছু গাড়ি ভস্মীভূত হয়।

এদিকে থানা ঘেরাওয়ের খবর পেয়ে বেলা তিনটার দিকে জেলা সদর থেকে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। কিন্তু কোনোভাবেই সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। এভাবে সময় গড়িয়ে রাত ১টা পর্যন্ত উত্তেজিত জনতা থানা ঘেরাও করে রাখেন। এরপর মধ্যরাতে বিএনপির সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জি কে গউছসহ দলটির বেশ কিছু নেতা ঘটনাস্থলে গিয়ে লোকজনকে বোঝানোর চেষ্টা করেন কিন্তু লোকজন তাতেও মানতে রাজি না হলে তারা ব্যর্থ হয়ে ফিরে যান। পরে উত্তেজিত জনতা রাত ১টার দিকে সেনাবাহিনীকে প্রস্তাব দেন, আওয়ামী লীগ নেতা ও বানিয়াচং উপজেলা সদরের ২নং উত্তর-পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হায়দারুজ্জামান খান ধন মিয়া ও থানার এসআই সন্তোষ দাশ চৌধুরীকে তাদের হাতে তোলে দিতে। কিন্তু সেনাবাহিনী তাদের কথায় রাজি হয়নি। পরে সেনাবাহিনী জানায়,থানার ভেতরে ওই নেতাসহ আওয়ামী লীগের কোন নেতাকর্মী নেই।

সেনাবাহিনীর এমন কথায় উত্তেজিত আন্দোলনকারীগন তাদের ২জনকে ভিতরে নিয়ে দেখানোর কথা জানান। পরে তাদের কথা অনুযায়ী ২জনকে নিয়ে ভেতরে দেখানো হয়। এসময় ২জন থানার ভিতরে আ’লীগ এর কোন নেতৃবৃন্দ নেই জানালে তারা শান্ত হন। তারপর রাত দেড়টার দিকে থানার দ্বিতীয় তলা থেকে অবরুদ্ধ সকল পুলিশ ও তাদের কিছু অস্ত্র উদ্ধার করেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সেনাবাহিনীর উদ্ধার কার্যক্রম চলাকালে এবং অন্যান্য পুলিশ সদস্যদের গাড়িতে উঠানোর এক ফাঁকে পুলিশ সদস্য (এসআই) সন্তোষ দাশ চৌধুরীকে উপস্থিত হাজারো লোকজন তাকে দেখা মাত্র ঐ সবাই ভিতর গিয়ে ধরে ফেলে এবং গণধোলাইয়ে সবার সামনে(পিটিয়ে) হত্যা করা হয়।

রাতেই দারোগা সন্তুশ চৌধুরীর মৃত্যুর খবরটি জানাজানি হয়ে পড়লে আশপাশের তার আক্রোশের শিকার লোকজন থানায় এসে তার মৃত দেহের উপর আরও ২দফা হামলা চালিয়ে লাশটি ভেতর থেকে থানার সামনে বানিয়াচং হবিগঞ্জ এর আঞ্চলিক সড়কের তিন রাস্তার মোড়ে ফেলে রেখে রাত ৩টার দিকে থানা ত্যাগ করেন উত্তেজিত জনতা। এসব তথ্য উপাত্ত ঘটনাস্থলে থাকা নিজস্ব সূত্রে জানাযায়। পর দিন ভোর থেকে থানার সামনে লোকজন এক নজর দেখার জন্য আসেন। এসময় আরও ২দফা তার নিথর দেহের উপর হামলা নিয়ে মোট ৫বার হামলা চালানোর খবর পাওয়া যায়। এমনকি আনুমানিক সকাল ১০টার দিকে উত্তেজিত জনতা এসআই সন্তোষ দাশ চৌধুরীর লাশটি থানার সামনে একটি গাছে ঝুঁলিয়ে রাখেন এবং কেউ কেউ এই বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেন।

এভাবেই দিনভর হাজার হাজার মানুষ লাশ দেখতে থানা প্রাঙ্গণে ভিড় করেন। এদিকে গাছে লাশ ঝুঁলানোর খবরটি দেশ বিদেশে ছড়িয়ে পড়লে এবং সেনাবাহিনীর নজরে এলে ৬ আগস্ট বেলা ২টার দিকে সেনাবাহিনীর একটি টিম ঘটনাস্থলে এসে লাশটি উদ্ধার করেন। এবং তারা লাশটি হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে ময়না তদন্তের জন্য হস্তান্তর করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নিকট। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ লাশের ময়না তদন্তের কাজ সম্পন্ন করে সন্তুশ চৌধুরীর লাশটি পরিবারের নিকট হস্তান্তর করেন বলেও জানাযায়।

এদিকে ৯জন হত্যার ঘটনায় নিহত শিশু হাসান(১২)পিতার ছানু মিয়ার এজাহারে আসামি করা হয় সাবেক দুই এমপি এডভোকেট আব্দুল মজিদ খান,এডভোকেট ময়েজউদ্দিন শরীফ রুয়েল,সাবেক দুই উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কাশেম চৌধুরী ও ইকবাল হুসেন খান,৭জন ইউপি চেয়ারম্যান,আ’লীগ নেতৃবৃন্দ,সংবাদকর্মী ও প্রবাসীদেরকে আসামি করা হয়। এই বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানাজানি হয়ে পড়লে দেশ বিদেশে সমালোচনার ঝড় উঠে। এছাড়াও বানিয়াচং সদরের ভিতরের হাট বাজারে মামলার বিষয়টি নিয়ে সর্বত্র আলোচনা সমালোচনা করার খবর পাওয়া যায়। মামলায় নিহত হওয়া পরিবারের আত্মীয় স্বজনদেরকেও আসামি করা হয়। উল্লেখ্য, গত ৫ আগষ্ট সরকার পতনের শেষ দিন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা দাবিতে থানা ঘেরাও করে আগুন জ্বালিয়ে থানার ভিতরে থাকা সকল গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। লুটপাট করা হয় অস্ত্র গুলাবারুদসহ সরকারি সকল মালামাল।

এমনকি থানার কোয়ার্টার ও ডাকবাংলো ভাংচুর করে লুটপাট করা হয়। পরদিন ৬আগষ্ট এই লুটপাট অব্যাহত থাকে। লুটপাটকারীদের হাত থেকে রেখাই মেলেনি থানার মসজিদটি। সর্বশেষ দেশে সেনা বাহিনীর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর হওয়ায় বানিয়াচং উপজেলায় সেনাবাহিনী অবস্থান নেয়। উপজেলা পরিষদ মাঠে তাদের ঘাঁটি করে সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ চালিয়ে যান। এবং থানার অস্ত্র গুলাবারুদ ও সরকারি লুটপাটকৃত মালামাল ফেরত দিতে ৩দফা মাইকিং করে প্রচারনা চালিয়ে যান তারা।

আজ২৫আগষ্ট (রবিবার)এসব মালামাল জমা দেওয়ার শেষ দিন। যদিও লুন্ঠনকৃত অস্ত্র গুলাবারুদসহ সরকারি সকল মালামাল উপজেলা পরিষদে সেনাবাহিনীর নিকট জমা হয়নি বলে প্রশাসন সূত্রে জানাযায়। এসব উদ্ধারে আগামী ২৬ আগষ্ট(সোমবার) থেকে সেনাবাহিনীর চিরুনি অভিযান চলবে এবং লুন্ঠনকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যগন নিশ্চিত করেন।।

ট্যাগস :

নিউজটি টাইম লাইনে শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

চেকপোস্ট

Checkpost is one of the most popular Bengali news portal and print newspaper in Bangladesh. The print and online news portal started its operations with a commitment to fearless, investigative, informative and unbiased journalism.
আপডেট সময় ০২:৫৭:৪২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৪
৫১৭ বার পড়া হয়েছে

চিরুনি অভিযান চালাবে সেনাবাহিনী

বানিয়াচংয়ে হত্যা মামলায় ৬হাজার ৪শত ৬০জন আসামি

আপডেট সময় ০২:৫৭:৪২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৪

হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে থানা ঘেরাও করে পুলিশ কর্মকর্তা(এসআই) সন্তোষ দাশ চৌধুরী হত্যার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (২২আগস্ট) বানিয়াচং থানার ওসি(তদন্ত)আবু হানিফ বাদি হয়ে ৫ থেকে ৬ হাজার অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আসামি করে এই হত্যা মামলা দায়ের করেন। অপরদিকে একই দিনে ৯জন হত্যার ঘটনায় ১৬০জনকে নামীয় ও ৩০০জনকে অঞ্জাতনামা আসামি করে অন্য নিহত হওয়া ৮পরিবারের পক্ষে একটি মামলা করেন নিহত হওয়া শিশু হাসানের (১২)এর পিতা ছানু মিয়া। তার মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন বানিয়াচং থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মোহাম্মদ দেলোয়ার হুসাইন।

অন্যদিকে পুলিশ হত্যা মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(বানিয়াচং- আজমিরীগঞ্জ সার্কেল)পলাশ রঞ্জন দে।

উভয় দু’টি মামলার এজাহার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়,গত ৫ আগস্ট দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে উপজেলার এল আর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জড়ো হন কয়েক হাজার লোক। পরে তাঁরা সেখান থেকে একটি মিছিল নিয়ে নতুন বাজার হয়ে বড়বাজারে স্হানীয় শহীদ মিনারে এসে পৌঁছে মিছিলটি। মিছিলকারীদের একটি অংশ বানিয়াচং উপজেলার কয়েকটি অফিসে ইটপাটকেল ছুঁড়ে গ্লাস ভাংচুর করে থানার উদ্দেশ্যে রওয়া হয়।

আন্দোলনকারীদের মিছিলটি থানার সন্নিকটে গেলে বানিয়াচং শাহী ঈদগাহ এলাকায় যাওয়া মাত্রই পুলিশ তাদের বাধা প্রদান করার চেষ্টা করলে বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুঁড়ে। এসময় পুলিশ রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাসের শেল,সাউন্ড গ্রেনেড ছুঁড়লে ঘটনাস্থলেই গুলিবিদ্ধ হয়ে কয়েকজন নিহত হন। এবং গুলিবিদ্ধ অনেকেই আহত হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকেন। তাদেরকে পরবর্তীতে উদ্ধার করে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গুলিবিদ্ধ আরও অনেকেই মারা যান। এই রাতে গুলিবিদ্ধ ৭জন এবং আন্দোলনকারীর গণধোলাইয়ে পুলিশসহ ২জন নিহত নিয়ে মোট ৯জনের প্রানহানীর ঘটে। পরদিন সিলেটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গুলিবিদ্ধ আনাছ (২০)নামের একজন মৃত্যু বরণ করে।

এদিকে সংঘর্ষ চলাকালে তৎকালীন পুলিশের গুলিতে মারা যাওয়ার বিষয়টি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে আশপাশের কয়েকটি মহল্লার মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে থানার সামনে একত্রিত হন। কয়েক হাজার মানুষ বানিয়াচং থানা ঘেরাও করে। শুরু হয় ইটপাটকেল নিক্ষেপ। একপর্যায়ে থানা ভবনে আগুন ধরিয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা। এ সময় থানার ভেতরে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)সহ পুলিশের ১৫ থেকে ১৬ সদস্য আটকা পড়েন। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের ১০ থেকে ১৫ জন নেতা-কর্মী আটকা পড়েন। তারা বিক্ষোভকারীদের ধাওয়ায় থানায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। এসময় উত্তেজিত জনতা বানিয়াচং থানায় আগুন ধরিয়ে দিলে ভেতরে থাকা বেশ কিছু গাড়ি ভস্মীভূত হয়।

এদিকে থানা ঘেরাওয়ের খবর পেয়ে বেলা তিনটার দিকে জেলা সদর থেকে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। কিন্তু কোনোভাবেই সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। এভাবে সময় গড়িয়ে রাত ১টা পর্যন্ত উত্তেজিত জনতা থানা ঘেরাও করে রাখেন। এরপর মধ্যরাতে বিএনপির সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জি কে গউছসহ দলটির বেশ কিছু নেতা ঘটনাস্থলে গিয়ে লোকজনকে বোঝানোর চেষ্টা করেন কিন্তু লোকজন তাতেও মানতে রাজি না হলে তারা ব্যর্থ হয়ে ফিরে যান। পরে উত্তেজিত জনতা রাত ১টার দিকে সেনাবাহিনীকে প্রস্তাব দেন, আওয়ামী লীগ নেতা ও বানিয়াচং উপজেলা সদরের ২নং উত্তর-পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হায়দারুজ্জামান খান ধন মিয়া ও থানার এসআই সন্তোষ দাশ চৌধুরীকে তাদের হাতে তোলে দিতে। কিন্তু সেনাবাহিনী তাদের কথায় রাজি হয়নি। পরে সেনাবাহিনী জানায়,থানার ভেতরে ওই নেতাসহ আওয়ামী লীগের কোন নেতাকর্মী নেই।

সেনাবাহিনীর এমন কথায় উত্তেজিত আন্দোলনকারীগন তাদের ২জনকে ভিতরে নিয়ে দেখানোর কথা জানান। পরে তাদের কথা অনুযায়ী ২জনকে নিয়ে ভেতরে দেখানো হয়। এসময় ২জন থানার ভিতরে আ’লীগ এর কোন নেতৃবৃন্দ নেই জানালে তারা শান্ত হন। তারপর রাত দেড়টার দিকে থানার দ্বিতীয় তলা থেকে অবরুদ্ধ সকল পুলিশ ও তাদের কিছু অস্ত্র উদ্ধার করেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সেনাবাহিনীর উদ্ধার কার্যক্রম চলাকালে এবং অন্যান্য পুলিশ সদস্যদের গাড়িতে উঠানোর এক ফাঁকে পুলিশ সদস্য (এসআই) সন্তোষ দাশ চৌধুরীকে উপস্থিত হাজারো লোকজন তাকে দেখা মাত্র ঐ সবাই ভিতর গিয়ে ধরে ফেলে এবং গণধোলাইয়ে সবার সামনে(পিটিয়ে) হত্যা করা হয়।

রাতেই দারোগা সন্তুশ চৌধুরীর মৃত্যুর খবরটি জানাজানি হয়ে পড়লে আশপাশের তার আক্রোশের শিকার লোকজন থানায় এসে তার মৃত দেহের উপর আরও ২দফা হামলা চালিয়ে লাশটি ভেতর থেকে থানার সামনে বানিয়াচং হবিগঞ্জ এর আঞ্চলিক সড়কের তিন রাস্তার মোড়ে ফেলে রেখে রাত ৩টার দিকে থানা ত্যাগ করেন উত্তেজিত জনতা। এসব তথ্য উপাত্ত ঘটনাস্থলে থাকা নিজস্ব সূত্রে জানাযায়। পর দিন ভোর থেকে থানার সামনে লোকজন এক নজর দেখার জন্য আসেন। এসময় আরও ২দফা তার নিথর দেহের উপর হামলা নিয়ে মোট ৫বার হামলা চালানোর খবর পাওয়া যায়। এমনকি আনুমানিক সকাল ১০টার দিকে উত্তেজিত জনতা এসআই সন্তোষ দাশ চৌধুরীর লাশটি থানার সামনে একটি গাছে ঝুঁলিয়ে রাখেন এবং কেউ কেউ এই বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেন।

এভাবেই দিনভর হাজার হাজার মানুষ লাশ দেখতে থানা প্রাঙ্গণে ভিড় করেন। এদিকে গাছে লাশ ঝুঁলানোর খবরটি দেশ বিদেশে ছড়িয়ে পড়লে এবং সেনাবাহিনীর নজরে এলে ৬ আগস্ট বেলা ২টার দিকে সেনাবাহিনীর একটি টিম ঘটনাস্থলে এসে লাশটি উদ্ধার করেন। এবং তারা লাশটি হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে ময়না তদন্তের জন্য হস্তান্তর করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নিকট। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ লাশের ময়না তদন্তের কাজ সম্পন্ন করে সন্তুশ চৌধুরীর লাশটি পরিবারের নিকট হস্তান্তর করেন বলেও জানাযায়।

এদিকে ৯জন হত্যার ঘটনায় নিহত শিশু হাসান(১২)পিতার ছানু মিয়ার এজাহারে আসামি করা হয় সাবেক দুই এমপি এডভোকেট আব্দুল মজিদ খান,এডভোকেট ময়েজউদ্দিন শরীফ রুয়েল,সাবেক দুই উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কাশেম চৌধুরী ও ইকবাল হুসেন খান,৭জন ইউপি চেয়ারম্যান,আ’লীগ নেতৃবৃন্দ,সংবাদকর্মী ও প্রবাসীদেরকে আসামি করা হয়। এই বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানাজানি হয়ে পড়লে দেশ বিদেশে সমালোচনার ঝড় উঠে। এছাড়াও বানিয়াচং সদরের ভিতরের হাট বাজারে মামলার বিষয়টি নিয়ে সর্বত্র আলোচনা সমালোচনা করার খবর পাওয়া যায়। মামলায় নিহত হওয়া পরিবারের আত্মীয় স্বজনদেরকেও আসামি করা হয়। উল্লেখ্য, গত ৫ আগষ্ট সরকার পতনের শেষ দিন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা দাবিতে থানা ঘেরাও করে আগুন জ্বালিয়ে থানার ভিতরে থাকা সকল গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। লুটপাট করা হয় অস্ত্র গুলাবারুদসহ সরকারি সকল মালামাল।

এমনকি থানার কোয়ার্টার ও ডাকবাংলো ভাংচুর করে লুটপাট করা হয়। পরদিন ৬আগষ্ট এই লুটপাট অব্যাহত থাকে। লুটপাটকারীদের হাত থেকে রেখাই মেলেনি থানার মসজিদটি। সর্বশেষ দেশে সেনা বাহিনীর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর হওয়ায় বানিয়াচং উপজেলায় সেনাবাহিনী অবস্থান নেয়। উপজেলা পরিষদ মাঠে তাদের ঘাঁটি করে সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ চালিয়ে যান। এবং থানার অস্ত্র গুলাবারুদ ও সরকারি লুটপাটকৃত মালামাল ফেরত দিতে ৩দফা মাইকিং করে প্রচারনা চালিয়ে যান তারা।

আজ২৫আগষ্ট (রবিবার)এসব মালামাল জমা দেওয়ার শেষ দিন। যদিও লুন্ঠনকৃত অস্ত্র গুলাবারুদসহ সরকারি সকল মালামাল উপজেলা পরিষদে সেনাবাহিনীর নিকট জমা হয়নি বলে প্রশাসন সূত্রে জানাযায়। এসব উদ্ধারে আগামী ২৬ আগষ্ট(সোমবার) থেকে সেনাবাহিনীর চিরুনি অভিযান চলবে এবং লুন্ঠনকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যগন নিশ্চিত করেন।।