ঢাকা ০৯:৫২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাগেরহাটে তীব্র শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত, বেড়েছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা

হারুন শেখ, বাগেরহাট প্রতিনিধি::

ছবি: চেকপোস্ট

বাগেরহাটে তীব্র শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি ভুগছেন। শীতের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে শীতজনিত রোগের আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্থানীয় আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত শনিবার (৪ জানুয়ারি) সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা এই মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।

শীতের কারণে ভোর থেকে চারদিকে ঘন কুয়াশা এবং ঠান্ডা বাতাসে খেটে খাওয়া মানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। গত দুইদিন ধরে সূর্যের দেখা মেলেনি, এবং ঠান্ডার প্রকোপ বেড়েছে। এর ফলে শ্বাসকষ্টসহ নানা শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বাগেরহাট সদর হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, গত দুই দিনে শতাধিক রোগী শ্বাসকষ্টের সমস্যাসহ বিভিন্ন শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন।

অথচ, বাগেরহাট সদর হাসপাতালে ডাক্তার সংকটের কারণে রোগীরা বেশ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। অনেকেই বাধ্য হয়ে বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর মধ্যে, মোংলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হারুন অর-রশিদ জানিয়েছেন যে, তীব্র কুয়াশার কারণে শীতের তীব্রতা আরও বাড়ছে।

শীতের প্রকোপের কারণে দিনমজুর ও ছিন্নমূল মানুষের আয় কমে গেছে। তারা শীত নিবারণের জন্য খড়কুটা জ্বালিয়ে পাশে বসে শীত পোহানোর চেষ্টা করছেন। বিশেষত, শিশু ও বৃদ্ধরা শ্বাসকষ্ট, সর্দি, কাশি, জ্বর এবং অন্যান্য শীতজনিত রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন।

বাগেরহাট জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. অসীম কুমার সমদ্দার জানান, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে প্রায় ২৫ শতাংশ শীতজনিত রোগে আক্রান্ত। বোরো ধানের বীজতলা রক্ষার জন্য কৃষকদেরকে সন্ধ্যায় পানি ঢেলে, সকালে তা বের করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে, এখন পর্যন্ত বীজতলার বড় ধরনের ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।

একটি ক্লিনিকে আসা রিনা বেগম নামক এক অসুস্থ শিশুর মা জানান, “আমার সন্তান শ্বাস নিতে কষ্ট পাচ্ছিল, তাই আমি তাকে ক্লিনিকে নিয়ে এসেছি। রোগীর চাপ থাকায় আমার বাচ্চাকে বারান্দায় রাখতে বাধ্য হয়েছি।”

এদিকে, বাগেরহাট সদর হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট (শিশু) ডাঃ খান শিহান মাহমুদ বলেন, “শীতজনিত রোগে শিশুরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বর্তমানে শিশুরা ঠান্ডার কারণে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছে, এবং আমি আমার সাধ্যমত সেবা প্রদান করছি।” তিনি আরও বলেন, “শিশুদের জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাহিরে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।”

এ পরিস্থিতিতে, তীব্র শীতে স্থানীয় বাসিন্দারা দুশ্চিন্তা ও অসুবিধার মধ্যে রয়েছেন। শীতজনিত রোগ থেকে রক্ষা পেতে এবং ক্ষতির পরিমাণ কমানোর জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে।

ট্যাগস :

নিউজটি টাইম লাইনে শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

চেকপোস্ট

Checkpost is one of the most popular Bengali news portal and print newspaper in Bangladesh. The print and online news portal started its operations with a commitment to fearless, investigative, informative and unbiased journalism.
আপডেট সময় ০৮:৩১:২১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ জানুয়ারী ২০২৫
৫৮৪ বার পড়া হয়েছে

বাগেরহাটে তীব্র শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত, বেড়েছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা

আপডেট সময় ০৮:৩১:২১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ জানুয়ারী ২০২৫

বাগেরহাটে তীব্র শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি ভুগছেন। শীতের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে শীতজনিত রোগের আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্থানীয় আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত শনিবার (৪ জানুয়ারি) সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা এই মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।

শীতের কারণে ভোর থেকে চারদিকে ঘন কুয়াশা এবং ঠান্ডা বাতাসে খেটে খাওয়া মানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। গত দুইদিন ধরে সূর্যের দেখা মেলেনি, এবং ঠান্ডার প্রকোপ বেড়েছে। এর ফলে শ্বাসকষ্টসহ নানা শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বাগেরহাট সদর হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, গত দুই দিনে শতাধিক রোগী শ্বাসকষ্টের সমস্যাসহ বিভিন্ন শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন।

অথচ, বাগেরহাট সদর হাসপাতালে ডাক্তার সংকটের কারণে রোগীরা বেশ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। অনেকেই বাধ্য হয়ে বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর মধ্যে, মোংলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হারুন অর-রশিদ জানিয়েছেন যে, তীব্র কুয়াশার কারণে শীতের তীব্রতা আরও বাড়ছে।

শীতের প্রকোপের কারণে দিনমজুর ও ছিন্নমূল মানুষের আয় কমে গেছে। তারা শীত নিবারণের জন্য খড়কুটা জ্বালিয়ে পাশে বসে শীত পোহানোর চেষ্টা করছেন। বিশেষত, শিশু ও বৃদ্ধরা শ্বাসকষ্ট, সর্দি, কাশি, জ্বর এবং অন্যান্য শীতজনিত রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন।

বাগেরহাট জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. অসীম কুমার সমদ্দার জানান, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে প্রায় ২৫ শতাংশ শীতজনিত রোগে আক্রান্ত। বোরো ধানের বীজতলা রক্ষার জন্য কৃষকদেরকে সন্ধ্যায় পানি ঢেলে, সকালে তা বের করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে, এখন পর্যন্ত বীজতলার বড় ধরনের ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।

একটি ক্লিনিকে আসা রিনা বেগম নামক এক অসুস্থ শিশুর মা জানান, “আমার সন্তান শ্বাস নিতে কষ্ট পাচ্ছিল, তাই আমি তাকে ক্লিনিকে নিয়ে এসেছি। রোগীর চাপ থাকায় আমার বাচ্চাকে বারান্দায় রাখতে বাধ্য হয়েছি।”

এদিকে, বাগেরহাট সদর হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট (শিশু) ডাঃ খান শিহান মাহমুদ বলেন, “শীতজনিত রোগে শিশুরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বর্তমানে শিশুরা ঠান্ডার কারণে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছে, এবং আমি আমার সাধ্যমত সেবা প্রদান করছি।” তিনি আরও বলেন, “শিশুদের জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাহিরে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।”

এ পরিস্থিতিতে, তীব্র শীতে স্থানীয় বাসিন্দারা দুশ্চিন্তা ও অসুবিধার মধ্যে রয়েছেন। শীতজনিত রোগ থেকে রক্ষা পেতে এবং ক্ষতির পরিমাণ কমানোর জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে।