বরিশালে ১৬ রুটে বাস চলাচল বন্ধ: চেকপোস্ট হামলার জেরে ধর্মঘট
থ্রি-হুইলার চালকদের দ্বারা চেকপোস্টে বাধা দেওয়ার প্রতিবাদে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বাস-মিনিবাস মালিক সমিতি। এতে দক্ষিণাঞ্চলের ১৬টি রুটে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
সিএনজি শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতিকে গ্রেপ্তারের দাবি এবং মহাসড়কে চেকপোস্ট বসানোর দাবিতে এই কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। ৮ মার্চ দুপুরে বাস ও শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে ধর্মঘটের ঘোষণা দেওয়া হয়।
রুপাতলী বাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম চৌধুরী বলেন, খয়রাবাদ সেতুর ঢালে বাস মালিক সমিতি চেকপোস্ট পরিচালনা করে। সকালে সিএনজি-থ্রি-হুইলার ইউনিয়নের সভাপতি মেহেদী হাসান খোকার নেতৃত্বে ওই চেকপোস্টে হামলা চালানো হয়। তারা বাসে উঠে শ্রমিক ও যাত্রীদের মারধর করে। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও মেহেদী হাসান খোকার গ্রেপ্তার দাবি করেন তিনি। সন্ধ্যার মধ্যে গ্রেপ্তার না করা হলে দক্ষিণাঞ্চলে বাস চলাচল বন্ধ থাকবে বলে তিনি হুঁশিয়ারি দেন।
তিনি আরও বলেন, ধর্মঘটে বিভাগের ১১টি বাস মালিক সমিতি ও ১১টি শ্রমিক ইউনিয়ন সংহতি জানিয়েছে। ফলে ১৬টি রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ বিষয়ে সিএনজি-থ্রি-হুইলার শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতির সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে এক সিএনজি চালক আনিসুর রহমান অভিযোগ করেন, বাস মালিক ও শ্রমিকদের কারণে তারা সড়কে যাত্রী পরিবহন করতে পারেন না। বরিশাল থেকে যাত্রী নিয়ে রওনা হলে বাস শ্রমিকরা সিএনজি ও মাহিন্দ্রা থেকে যাত্রী নামিয়ে দেয়। খয়রাবাদ ব্রিজের ঢাল ও ঝালকাঠি রুটে ষাটপাকিয়া এলাকায় চেকপোস্ট বসানো হয়।
সিএনজি চালক ইব্রাহিম খলিল বলেন, “আজকে সিএনজি যাত্রী নামিয়ে বাসে নিতে চাইছিল, বাধা দেওয়ায় আমাদের ওপর হামলা করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও বাস শ্রমিকদের পক্ষে একটি অবৈধ কাজের সমর্থন দিচ্ছে। সড়কে বাস মালিক সমিতির চেকপোস্ট বসানোর কোনো নিয়ম নেই। চেকপোস্ট বসাতে পারে প্রশাসন।”
এদিকে সকালে খয়রাবাদ সেতুর ঢালে বাস ও সিএনজি শ্রমিকদের মারামারি থামাতে গেলে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) তিন শিক্ষার্থীকে মারধর করা হয়। এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা দুই ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করেন। পরে সমঝোতা বৈঠকের মাধ্যমে পরিস্থিতি শান্ত করা হয় বলে জানান মেট্রোপলিটন বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. সোনিয়া খান সানি বলেন, “পুরানো ঘটনার জের ধরে দুই সমিতির মধ্যে সংঘর্ষ হয়। থামানোর চেষ্টা করলে আমাদের শিক্ষার্থীরা মার খেয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তারা রাস্তা অবরোধ করে। পুলিশ, সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে এবং শিক্ষার্থীরা রাস্তা ছেড়ে দিয়েছে।”
সমঝোতার মাধ্যমে আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার জন্য ২৫ হাজার টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছে। শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো: ১. সংঘর্ষে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে গ্রেপ্তার ও আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। ২. বাস মালিক সমিতি ও সিএনজি সমিতির কোনো চেকপোস্ট বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় রাখা যাবে না। ৩. শিক্ষার্থীদের জন্য হাফভাড়া সপ্তাহে ৭ দিন কার্যকর করতে হবে। ৪. ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুলিশ ক্যাম্পে পুলিশ মোতায়েন করতে হবে। ৫. ২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্থায়ী ডিভাইডার ও ল্যাম্পপোস্ট স্থাপন করতে হবে।
শিক্ষার্থীরা যে সিদ্ধান্ত নেবেন, প্রশাসন তাদের পাশে থাকবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।