ঢাকা ০৫:৪৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৪ মে ২০২৫, ২০ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বজ্রপাত থেকে নিরাপদ থাকতে যা করা উচিত

শহীদুল ইসলাম শরীফ, স্টাফ রিপোর্টার::

বলতে সাধারণত আকাশে মেঘে মেঘে সংঘর্ষের ফলে যে আলোর ঝলকানি সৃষ্টি হয় তাকে আমরা বজ্রপাত বলে থাকি।

উইকিপিডিয়াতে বর্ণিত বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা অনুযায়ী বায়ুমণ্ডলে বাতাসের চাপ কমে যাওয়ার ফলে কিছু কিছু সময় মেঘ নিচের দিক থেকে উপরের দিকে প্রবাহিত হতেৃ থাকে এবং ধীরে ধীরে পানির পরিমাণ যখন ৫ মিঃমিঃ অতিক্রম করে তখন পানির অণুগুলো পারস্পরিক বন্ধন টিকিয়ে রাখতে না পারার কারণে বিভক্ত হয়ে যায় এবং সেখান থেকে যেই বৈদ্যুতিক আলোড়ন এর সৃষ্টি হয়ে থাকে একেই বজ্রপাত বলে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে।

বিজ্ঞানীদের মতে এরকম অস্বাভাবিকভাবে বজ্রপাত বেড়ে যাওয়ার পেছনে মূল কারণ বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধি। আর জলবায়ু পরিবর্তনই এই বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য দায়ী। এর পেছনের কারণগুলো :

  • গাছপালা কেটে বনাঞ্চল উজাড় করা।
  • জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়া
  • শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রসহ আরও আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার বেড়ে যাওয়া।
  • মোবাইল ফোন টাওয়ারের সংখ্যাবৃদ্ধি।
  • গ্রিন হাউজ গ্যাস নির্গমনের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি ।
  • এছাড়াও বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানও এরকম অধিক বজ্রপাতের অন্যতম কারণ

 

যদিও বজ্রপাত একবার শুরু হয়ে গেলে তেমন কিছু করার থাকে না। তবুও বজ্রপাত হওয়ার আগে কিছু লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়। পরিস্থিতি আঁচ করে সতর্ক হওয়া এবং দ্রুত সেই স্থান ত্যাগ করা।

বিজ্ঞান ভিত্তিক গবেষণা থেকে জানা যায়, ২০১৫–২০২০ সালে বাংলাদেশে তিন ধরনের বজ্রপাত সংঘটিত হয়। এক মেঘ থেকে আরেকটি মেঘে বা আন্ত মেঘ, একই মেঘের এক স্থান থেকে আরেক স্থান বা আন্ত মেঘ এবং মেঘ থেকে ভূমিতে। বজ্রপাতে করণীয়:

) দ্রুত নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেয়া

আকাশে কালো মেঘ দেখলেই সাবধান হতে এবং নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেয়া। এ সময় অন্তত ৩০ মিনিটের মতো সময় পাওয়া যায় নিরাপদ স্থানে যেতে। আর বৃষ্টি বা ঝড় শুরু না হলে বজ্রপাত হয় না এই ভুল ধারণা করা যাবেনা। কারণ অনেক ক্ষেত্রে ঝড়-বৃষ্টি শুরু হওয়ার আগেই বজ্রপাত হয়ে অনেক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। ঝড়-বৃষ্টি শুরু হওয়ার আগেই দ্রুত নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে হবে।

) খোলা স্থান থেকে দূরে থাকা

খোলাস্থানে সবসময় বজ্রপাতের ঝুঁকি বেশি থাকে। বিগত বছরগুলোতে বজ্রপাতে মারা যাওয়া মানুষগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল কৃষক। কারণ তাদের চাষাবাদ করার জন্য খোলা মাঠে থাকতে হয়। আর সেখানেই আচমকা বজ্রপাতে মারা যান। তাই ঝড়-বৃষ্টির সময় অতিদ্রুত খোলা স্থান ত্যাগ করতে হবে।

) দ্রুত উঁচু স্থান ত্যাগ করা

বজ্রপাতের সময় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে যে কোনো উঁচু স্থান। যেমন বাড়ির ছাদ, পাহাড় বা টিলা, গাছের উপরে ইত্যাদি। কারণ যে স্থান যত উঁচু, সে স্থান মেঘের তত কাছে তাই বজ্রপাতের সম্ভাবনা তত বেশি। তাই কোনোভাবেই বজ্রপাতের সময় এসব উঁচু স্থানে থাকা যাবে না আর থাকলে দ্রুত সেই স্থান ত্যাগ করতে হবে এবং নিরাপদ স্থানে যেতে হবে।

) নীচু হয়ে বসে পরা

বজ্রপাতের সময় ফাঁকা বা উঁচু স্থানে থাকলে কানে আঙুল দিয়ে চোখ বন্ধ করে যতটা সম্ভব কম জায়গা নিয়ে গুটিসুটি মেরে বসে পরতে হবে। কিন্তু এইরকম সময়ে আমরা অনেকেই ভুল করি মাটিতে শুয়ে পড়ে। ভেজা মাটি বিদ্যুৎ পরিবাহী তাই বৃষ্টি এবং সাথে বজ্রপাতের সময় মাটিতে শুয়ে পড়লে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা আরও বেড়ে যাবে।

) উঁচু গাছপালা বৈদ্যুতিক লাইন থেকে দূরে থাকা

বজ্রপাতের সময় উঁচু গাছ, বিদ্যুতের খুঁটি, টাওয়ার বা অনেক উঁচু এমন কোন কিছুতে বজ্রপাত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। তাই কোন উঁচু কিছুর নিচে বা আশেপাশে আশ্রয় নেয়া যাবে না।

) টিনের ঘর জানালা থেকে দূরে থাকা

বজ্রপাতের সময় টিনের ঘরে না থাকাটাই শ্রেয়। কারণ টিনের ঘর খুব সহজেই বিদ্যুতায়িত হয়। এমন অবস্থায় টিনের ঘরে থাকলেও ধাতব বস্তু স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং ঘরের জানালা বন্ধ করে জানালা থেকে দূরে সরে থাকতে হবে।

) ধাতব বস্তু এবং বিদ্যুৎ পরিবাহী যেকোনো বস্তু স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকা

ঝড়-বৃষ্টির সময় ধাতব কোনো বস্তু বা বিদ্যুৎ পরিবাহী যেকোনো কিছু স্পর্শ করা যাবে না। তাই ওই সময়গুলোতে সিঁড়ি বা বারান্দার ধাতব রেলিং, পানির কল, পাইপ, বৈদ্যুতিক তার ইত্যাদি স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

) বিদ্যুৎচালিত যন্ত্রের ব্যবহার থেকে বিরত থাকা

ঝড়-বৃষ্টি শুরু হলে আমরা বড় একটি ভুল করি বৈদ্যুতিক সংযোগযুক্ত সব যন্ত্রপাতি চালিয়ে রেখে। বজ্রপাতের সময় টিভি, ফ্রিজ, কম্পিউটার ইত্যাদি বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখতে হবে। এমন কি এই সময় আপনার মোবাইল ফোনটিও চার্জ দেয়া যাবে না।

) যাত্রাপথে থাকলে গাড়ির ভেতরেই থাকা

যাত্রাপথে বজ্রপাত শুরু হলে গাড়ির ভেতরেই থাকা উচিত। কারণ গাড়ির উপরে বজ্রপাত হলে সেটা গাড়ির ভিতরে মানুষের ক্ষতি করতে পারে না। বিদ্যুৎ গাড়ির শরীর বেয়ে মাটিতে চলে যায়। তবে গাড়ির ভেতরে কোনো ধাতব বস্তুর সংস্পর্শে থাকা যাবে না।

১০) জলাশয় পানি থেকে দূরে থাকা

প্রতিবছর বজ্রপাতে মারা যাওয়া মানুষের মধ্যে বেশিরভাগই কৃষক আর এরপরেই রয়েছেন জেলেরা। এর কারণ নদী বা অন্যান্য জলাশয় একেতো খোলা স্থান তার উপরে পানি বিদ্যুৎ পরিবাহী। তাই বজ্রপাতের সময় পানি থেকে  দূরে থাকতে হবে। কারণ পানিতে বজ্রপাত হলে  বিদ্যুতায়িত হবে। তাই এসময় যেকোনো রকম জলাশয় যেমন নদী, খাল, বিল, দিঘী বা পুকুরে থাকলে দ্রুত পানি থেকে উঠে যেতে হবে।

১১) জনসমাগমে না থাকা এবং একে অপরের থেকে দূরে থাকা

বজ্রপাতের সময় জনসমাগমে থাকা যাবে না। এসময় একে অপরের থেকে ৫০ থেকে ১০০ ফুট দূরে সরে থাকতে হবে। এমনকি বাড়ির ভিতরে থাকলেও সবাই এক ঘরে না থেকে আলাদা আলাদা ঘরে থাকাটা বেশি নিরাপদ।

১২) ভেজা জুতা পরে বা খালি পায়ে না থাকা

ভেজা জুতা বিদ্যুৎ পরিবাহী তাই বজ্রপাতের সময় ভেজা জুতা পরে থাকা বিপজ্জনক আর খালি পায়ে থাকা তো আরও বেশি বিপজ্জনক। আশেপাশে কোথাও বজ্রপাত হলে তখন সেখানের মাটি ভেজা থাকলে তা সহজেই আশেপাশের সবকিছু বিদ্যুতায়িত করে ফেলে। তাই ঝড়-বৃষ্টির সময় ভেজা জুতা পরে বা খালি পায়ে থাকা যাবে না। রাবারের জুতা পরিধান করা যেতে পারে।

১৩) বাড়ি সুরক্ষিত করা

বজ্রপাত থেকে বাঁচতে আপনার বাড়িকেও নিরাপদ করতে হবে। সেক্ষেত্রে আপনার বাড়িতে বজ্র নিরোধক দণ্ড স্থাপন করতে হবে। সাথে বাড়িতে সকল আর্থিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

বজ্রপাতে আহত হলে করণীয়

কোনো ব্যক্তি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হলে একটুও সময় নষ্ট না করে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু এই সময় কিছু কিছু প্রাথমিক চিকিৎসা জরুরি। বজ্রপাত ও বৈদ্যুতিক শকে আহত ব্যক্তির চিকিৎসা একই। কিন্তু বিদ্যুৎস্পৃষ্ট কাউকে খালি হাতে স্পর্শ করা যাবে না তাতে স্পর্শ করা ব্যক্তিরও শক লাগতে পারে। তাই প্রথমেই বজ্রাঘাতে আহত ব্যক্তির শরীর থেকে দ্রুত বৈদ্যুতিক চার্জ অপসারণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, এবং শ্বাস-প্রশ্বাস ও হৃৎস্পন্দন ফিরিয়ে আনার জন্য অনবরত মালিশ করে যেতে হবে।

আমরা সবাই সবার নিজের জায়গা থেকে নিজেদের দায়িত্ব পালন করলে আমরা যেকোনো দুর্যোগই সহজেই প্রতিরোধ বা মোকাবেলা করতে পারব। তাই এক্ষেত্রেও আমাদের সবার সচেতন হতে হবে এবং আশেপাশের মানুষদেরকে সচেতন করতে হবে।

ট্যাগস :

নিউজটি টাইম লাইনে শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

চেকপোস্ট

Checkpost is one of the most popular Bengali news portal and print newspaper in Bangladesh. The print and online news portal started its operations with a commitment to fearless, investigative, informative and unbiased journalism.
আপডেট সময় ০২:০৭:২৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ মে ২০২৫
৫১৯ বার পড়া হয়েছে

বজ্রপাত থেকে নিরাপদ থাকতে যা করা উচিত

আপডেট সময় ০২:০৭:২৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ মে ২০২৫

বলতে সাধারণত আকাশে মেঘে মেঘে সংঘর্ষের ফলে যে আলোর ঝলকানি সৃষ্টি হয় তাকে আমরা বজ্রপাত বলে থাকি।

উইকিপিডিয়াতে বর্ণিত বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা অনুযায়ী বায়ুমণ্ডলে বাতাসের চাপ কমে যাওয়ার ফলে কিছু কিছু সময় মেঘ নিচের দিক থেকে উপরের দিকে প্রবাহিত হতেৃ থাকে এবং ধীরে ধীরে পানির পরিমাণ যখন ৫ মিঃমিঃ অতিক্রম করে তখন পানির অণুগুলো পারস্পরিক বন্ধন টিকিয়ে রাখতে না পারার কারণে বিভক্ত হয়ে যায় এবং সেখান থেকে যেই বৈদ্যুতিক আলোড়ন এর সৃষ্টি হয়ে থাকে একেই বজ্রপাত বলে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে।

বিজ্ঞানীদের মতে এরকম অস্বাভাবিকভাবে বজ্রপাত বেড়ে যাওয়ার পেছনে মূল কারণ বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধি। আর জলবায়ু পরিবর্তনই এই বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য দায়ী। এর পেছনের কারণগুলো :

  • গাছপালা কেটে বনাঞ্চল উজাড় করা।
  • জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়া
  • শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রসহ আরও আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার বেড়ে যাওয়া।
  • মোবাইল ফোন টাওয়ারের সংখ্যাবৃদ্ধি।
  • গ্রিন হাউজ গ্যাস নির্গমনের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি ।
  • এছাড়াও বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানও এরকম অধিক বজ্রপাতের অন্যতম কারণ

 

যদিও বজ্রপাত একবার শুরু হয়ে গেলে তেমন কিছু করার থাকে না। তবুও বজ্রপাত হওয়ার আগে কিছু লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়। পরিস্থিতি আঁচ করে সতর্ক হওয়া এবং দ্রুত সেই স্থান ত্যাগ করা।

বিজ্ঞান ভিত্তিক গবেষণা থেকে জানা যায়, ২০১৫–২০২০ সালে বাংলাদেশে তিন ধরনের বজ্রপাত সংঘটিত হয়। এক মেঘ থেকে আরেকটি মেঘে বা আন্ত মেঘ, একই মেঘের এক স্থান থেকে আরেক স্থান বা আন্ত মেঘ এবং মেঘ থেকে ভূমিতে। বজ্রপাতে করণীয়:

) দ্রুত নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেয়া

আকাশে কালো মেঘ দেখলেই সাবধান হতে এবং নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেয়া। এ সময় অন্তত ৩০ মিনিটের মতো সময় পাওয়া যায় নিরাপদ স্থানে যেতে। আর বৃষ্টি বা ঝড় শুরু না হলে বজ্রপাত হয় না এই ভুল ধারণা করা যাবেনা। কারণ অনেক ক্ষেত্রে ঝড়-বৃষ্টি শুরু হওয়ার আগেই বজ্রপাত হয়ে অনেক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। ঝড়-বৃষ্টি শুরু হওয়ার আগেই দ্রুত নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে হবে।

) খোলা স্থান থেকে দূরে থাকা

খোলাস্থানে সবসময় বজ্রপাতের ঝুঁকি বেশি থাকে। বিগত বছরগুলোতে বজ্রপাতে মারা যাওয়া মানুষগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল কৃষক। কারণ তাদের চাষাবাদ করার জন্য খোলা মাঠে থাকতে হয়। আর সেখানেই আচমকা বজ্রপাতে মারা যান। তাই ঝড়-বৃষ্টির সময় অতিদ্রুত খোলা স্থান ত্যাগ করতে হবে।

) দ্রুত উঁচু স্থান ত্যাগ করা

বজ্রপাতের সময় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে যে কোনো উঁচু স্থান। যেমন বাড়ির ছাদ, পাহাড় বা টিলা, গাছের উপরে ইত্যাদি। কারণ যে স্থান যত উঁচু, সে স্থান মেঘের তত কাছে তাই বজ্রপাতের সম্ভাবনা তত বেশি। তাই কোনোভাবেই বজ্রপাতের সময় এসব উঁচু স্থানে থাকা যাবে না আর থাকলে দ্রুত সেই স্থান ত্যাগ করতে হবে এবং নিরাপদ স্থানে যেতে হবে।

) নীচু হয়ে বসে পরা

বজ্রপাতের সময় ফাঁকা বা উঁচু স্থানে থাকলে কানে আঙুল দিয়ে চোখ বন্ধ করে যতটা সম্ভব কম জায়গা নিয়ে গুটিসুটি মেরে বসে পরতে হবে। কিন্তু এইরকম সময়ে আমরা অনেকেই ভুল করি মাটিতে শুয়ে পড়ে। ভেজা মাটি বিদ্যুৎ পরিবাহী তাই বৃষ্টি এবং সাথে বজ্রপাতের সময় মাটিতে শুয়ে পড়লে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা আরও বেড়ে যাবে।

) উঁচু গাছপালা বৈদ্যুতিক লাইন থেকে দূরে থাকা

বজ্রপাতের সময় উঁচু গাছ, বিদ্যুতের খুঁটি, টাওয়ার বা অনেক উঁচু এমন কোন কিছুতে বজ্রপাত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। তাই কোন উঁচু কিছুর নিচে বা আশেপাশে আশ্রয় নেয়া যাবে না।

) টিনের ঘর জানালা থেকে দূরে থাকা

বজ্রপাতের সময় টিনের ঘরে না থাকাটাই শ্রেয়। কারণ টিনের ঘর খুব সহজেই বিদ্যুতায়িত হয়। এমন অবস্থায় টিনের ঘরে থাকলেও ধাতব বস্তু স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং ঘরের জানালা বন্ধ করে জানালা থেকে দূরে সরে থাকতে হবে।

) ধাতব বস্তু এবং বিদ্যুৎ পরিবাহী যেকোনো বস্তু স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকা

ঝড়-বৃষ্টির সময় ধাতব কোনো বস্তু বা বিদ্যুৎ পরিবাহী যেকোনো কিছু স্পর্শ করা যাবে না। তাই ওই সময়গুলোতে সিঁড়ি বা বারান্দার ধাতব রেলিং, পানির কল, পাইপ, বৈদ্যুতিক তার ইত্যাদি স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

) বিদ্যুৎচালিত যন্ত্রের ব্যবহার থেকে বিরত থাকা

ঝড়-বৃষ্টি শুরু হলে আমরা বড় একটি ভুল করি বৈদ্যুতিক সংযোগযুক্ত সব যন্ত্রপাতি চালিয়ে রেখে। বজ্রপাতের সময় টিভি, ফ্রিজ, কম্পিউটার ইত্যাদি বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখতে হবে। এমন কি এই সময় আপনার মোবাইল ফোনটিও চার্জ দেয়া যাবে না।

) যাত্রাপথে থাকলে গাড়ির ভেতরেই থাকা

যাত্রাপথে বজ্রপাত শুরু হলে গাড়ির ভেতরেই থাকা উচিত। কারণ গাড়ির উপরে বজ্রপাত হলে সেটা গাড়ির ভিতরে মানুষের ক্ষতি করতে পারে না। বিদ্যুৎ গাড়ির শরীর বেয়ে মাটিতে চলে যায়। তবে গাড়ির ভেতরে কোনো ধাতব বস্তুর সংস্পর্শে থাকা যাবে না।

১০) জলাশয় পানি থেকে দূরে থাকা

প্রতিবছর বজ্রপাতে মারা যাওয়া মানুষের মধ্যে বেশিরভাগই কৃষক আর এরপরেই রয়েছেন জেলেরা। এর কারণ নদী বা অন্যান্য জলাশয় একেতো খোলা স্থান তার উপরে পানি বিদ্যুৎ পরিবাহী। তাই বজ্রপাতের সময় পানি থেকে  দূরে থাকতে হবে। কারণ পানিতে বজ্রপাত হলে  বিদ্যুতায়িত হবে। তাই এসময় যেকোনো রকম জলাশয় যেমন নদী, খাল, বিল, দিঘী বা পুকুরে থাকলে দ্রুত পানি থেকে উঠে যেতে হবে।

১১) জনসমাগমে না থাকা এবং একে অপরের থেকে দূরে থাকা

বজ্রপাতের সময় জনসমাগমে থাকা যাবে না। এসময় একে অপরের থেকে ৫০ থেকে ১০০ ফুট দূরে সরে থাকতে হবে। এমনকি বাড়ির ভিতরে থাকলেও সবাই এক ঘরে না থেকে আলাদা আলাদা ঘরে থাকাটা বেশি নিরাপদ।

১২) ভেজা জুতা পরে বা খালি পায়ে না থাকা

ভেজা জুতা বিদ্যুৎ পরিবাহী তাই বজ্রপাতের সময় ভেজা জুতা পরে থাকা বিপজ্জনক আর খালি পায়ে থাকা তো আরও বেশি বিপজ্জনক। আশেপাশে কোথাও বজ্রপাত হলে তখন সেখানের মাটি ভেজা থাকলে তা সহজেই আশেপাশের সবকিছু বিদ্যুতায়িত করে ফেলে। তাই ঝড়-বৃষ্টির সময় ভেজা জুতা পরে বা খালি পায়ে থাকা যাবে না। রাবারের জুতা পরিধান করা যেতে পারে।

১৩) বাড়ি সুরক্ষিত করা

বজ্রপাত থেকে বাঁচতে আপনার বাড়িকেও নিরাপদ করতে হবে। সেক্ষেত্রে আপনার বাড়িতে বজ্র নিরোধক দণ্ড স্থাপন করতে হবে। সাথে বাড়িতে সকল আর্থিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

বজ্রপাতে আহত হলে করণীয়

কোনো ব্যক্তি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হলে একটুও সময় নষ্ট না করে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু এই সময় কিছু কিছু প্রাথমিক চিকিৎসা জরুরি। বজ্রপাত ও বৈদ্যুতিক শকে আহত ব্যক্তির চিকিৎসা একই। কিন্তু বিদ্যুৎস্পৃষ্ট কাউকে খালি হাতে স্পর্শ করা যাবে না তাতে স্পর্শ করা ব্যক্তিরও শক লাগতে পারে। তাই প্রথমেই বজ্রাঘাতে আহত ব্যক্তির শরীর থেকে দ্রুত বৈদ্যুতিক চার্জ অপসারণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, এবং শ্বাস-প্রশ্বাস ও হৃৎস্পন্দন ফিরিয়ে আনার জন্য অনবরত মালিশ করে যেতে হবে।

আমরা সবাই সবার নিজের জায়গা থেকে নিজেদের দায়িত্ব পালন করলে আমরা যেকোনো দুর্যোগই সহজেই প্রতিরোধ বা মোকাবেলা করতে পারব। তাই এক্ষেত্রেও আমাদের সবার সচেতন হতে হবে এবং আশেপাশের মানুষদেরকে সচেতন করতে হবে।