ঢাকা ০৩:১১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আমার পিয়নও ৪০০ কোটি টাকার মালিক, চড়ে হেলিকপ্টারে

প্রধানমন্ত্রীর কে এই পিয়ন?

চেকপোস্ট ডেস্ক::

আজ গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমার পিয়নও ৪০০ কোটি টাকার মালিক। হেলিকপ্টার ছাড়া এলাকায় যেত না। জানতে পারার পর আমি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রীর ওই পিয়নের নাম বলেননি। অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, ওই পিয়নের নাম জাহাঙ্গীর। দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত কর্মচারী হিসেবে কাজ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর ব্যাগ বহন করতেন, প্রধানমন্ত্রীর খাবার সামনে এগিয়ে দিতেন এবং অন্যান্য ফাই-ফরমাশ খাটতেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি যখন বিরোধী দলে তখন থেকেই জাহাঙ্গীর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী ঢাকার বাইরে যখন বিভিন্ন রাজনৈতিক সভায় যেতেন সেখানেও জাহাঙ্গীরকে দেখা যেত। আস্তে আস্তে জাহাঙ্গীরের একটি রাজনৈতিক বলয় তৈরি হয়ে যায়।

নোয়াখলী জেলার চাটখিল উপজেলায় জাহাঙ্গীরের বাড়ি। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গঠন করলে জাহাঙ্গীর গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মচারী হন। সেখানে তিনি প্রধানমন্ত্রীর ফাই-ফরমাশ খাটা শুরু করেন। গণভবনে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের আনাগোনা শুরু হলে সকলের সঙ্গে সখ্যতা তৈরি করেন। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মচারী এই সুবিধা নিয়ে তিনি অনেক গোপন নথির সন্ধান পেতেন। অনেকের তদবির করে দেওয়া শুরু করেন। আস্তে আস্তে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে একজন প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুরো বিষয়গুলো জানতে পারেন। এটি জানার পর জাহাঙ্গীরকে গণভবন থেকে বের করে দেওয়া হয়। কিন্তু গণভবনে থাকার সময় তিনি আওয়ামী লীগ নেতাদের চেয়ে ক্ষমতাবান হয়ে উঠেছিলেন। আওয়ামী লীগের কিছু কিছু ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ, গণভবনে থাকেন, তাকে বলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করা যায় ইত্যাদি ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী হয়ে জাহাঙ্গীরের প্রতি আলাদা ‘শ্রদ্ধাবোধ’ দেখাতে শুরু করেন। তাদের কেউ কেউ জাহাঙ্গীরকে ‘স্যার’ ডেকেছেন বলেও শোনা যায়। এমনকী, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও জাহাঙ্গীরের কাছে তদবির করতেন। এই জাহাঙ্গীর গণভবনে থেকে বিভিন্ন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাকে প্রধানমন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন তদবির করতেন। এভাবে আস্তে আস্তে বিত্তশালী হয়ে ওঠেন এই কাজের লোক। পরবর্তীতে অবশ্য গণভবন থেকে রেবিয়ে যাওয়ার পর এখন তাকে রাজনীতিতে দেখা যায় না।

গণভবন থেকে বহিষ্কৃত হবার পরও জাহাঙ্গীর তার অবৈধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যান। এর প্রেক্ষিতে গত বছরের ৬ ডিসেম্বর জাহাঙ্গীরের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পক্ষ থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সেই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী বিশেষ সহকারী পরিচয় ব্যবহার করে বিভিন্ন অবৈধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন জাহাঙ্গীর। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকার জন্য আহ্বান জানানো হয়।

আজ প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সন্মেলনে বক্তব্যের পর দুর্নীতি দমন কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন যে, বিষয়টি সম্পর্কে তারা অবহিত এবং জাহাঙ্গীরের ব্যাপারে ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে। খুব শিগগির তার সম্পদ জব্দের প্রক্রিয়া শুরু হবে।

তবে জাহাঙ্গীর এখন দেশের বাইরে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।

ট্যাগস :

নিউজটি টাইম লাইনে শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

চেকপোস্ট

Checkpost is one of the most popular Bengali news portal and print newspaper in Bangladesh. The print and online news portal started its operations with a commitment to fearless, investigative, informative and unbiased journalism.
আপডেট সময় ০১:২৭:০৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৫ জুলাই ২০২৪
৫১২ বার পড়া হয়েছে

আমার পিয়নও ৪০০ কোটি টাকার মালিক, চড়ে হেলিকপ্টারে

প্রধানমন্ত্রীর কে এই পিয়ন?

আপডেট সময় ০১:২৭:০৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৫ জুলাই ২০২৪

আজ গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমার পিয়নও ৪০০ কোটি টাকার মালিক। হেলিকপ্টার ছাড়া এলাকায় যেত না। জানতে পারার পর আমি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রীর ওই পিয়নের নাম বলেননি। অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, ওই পিয়নের নাম জাহাঙ্গীর। দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত কর্মচারী হিসেবে কাজ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর ব্যাগ বহন করতেন, প্রধানমন্ত্রীর খাবার সামনে এগিয়ে দিতেন এবং অন্যান্য ফাই-ফরমাশ খাটতেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি যখন বিরোধী দলে তখন থেকেই জাহাঙ্গীর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী ঢাকার বাইরে যখন বিভিন্ন রাজনৈতিক সভায় যেতেন সেখানেও জাহাঙ্গীরকে দেখা যেত। আস্তে আস্তে জাহাঙ্গীরের একটি রাজনৈতিক বলয় তৈরি হয়ে যায়।

নোয়াখলী জেলার চাটখিল উপজেলায় জাহাঙ্গীরের বাড়ি। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গঠন করলে জাহাঙ্গীর গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মচারী হন। সেখানে তিনি প্রধানমন্ত্রীর ফাই-ফরমাশ খাটা শুরু করেন। গণভবনে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের আনাগোনা শুরু হলে সকলের সঙ্গে সখ্যতা তৈরি করেন। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মচারী এই সুবিধা নিয়ে তিনি অনেক গোপন নথির সন্ধান পেতেন। অনেকের তদবির করে দেওয়া শুরু করেন। আস্তে আস্তে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে একজন প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুরো বিষয়গুলো জানতে পারেন। এটি জানার পর জাহাঙ্গীরকে গণভবন থেকে বের করে দেওয়া হয়। কিন্তু গণভবনে থাকার সময় তিনি আওয়ামী লীগ নেতাদের চেয়ে ক্ষমতাবান হয়ে উঠেছিলেন। আওয়ামী লীগের কিছু কিছু ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ, গণভবনে থাকেন, তাকে বলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করা যায় ইত্যাদি ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী হয়ে জাহাঙ্গীরের প্রতি আলাদা ‘শ্রদ্ধাবোধ’ দেখাতে শুরু করেন। তাদের কেউ কেউ জাহাঙ্গীরকে ‘স্যার’ ডেকেছেন বলেও শোনা যায়। এমনকী, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও জাহাঙ্গীরের কাছে তদবির করতেন। এই জাহাঙ্গীর গণভবনে থেকে বিভিন্ন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাকে প্রধানমন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন তদবির করতেন। এভাবে আস্তে আস্তে বিত্তশালী হয়ে ওঠেন এই কাজের লোক। পরবর্তীতে অবশ্য গণভবন থেকে রেবিয়ে যাওয়ার পর এখন তাকে রাজনীতিতে দেখা যায় না।

গণভবন থেকে বহিষ্কৃত হবার পরও জাহাঙ্গীর তার অবৈধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যান। এর প্রেক্ষিতে গত বছরের ৬ ডিসেম্বর জাহাঙ্গীরের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পক্ষ থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সেই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী বিশেষ সহকারী পরিচয় ব্যবহার করে বিভিন্ন অবৈধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন জাহাঙ্গীর। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকার জন্য আহ্বান জানানো হয়।

আজ প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সন্মেলনে বক্তব্যের পর দুর্নীতি দমন কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন যে, বিষয়টি সম্পর্কে তারা অবহিত এবং জাহাঙ্গীরের ব্যাপারে ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে। খুব শিগগির তার সম্পদ জব্দের প্রক্রিয়া শুরু হবে।

তবে জাহাঙ্গীর এখন দেশের বাইরে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।