হবিগঞ্জে পরকীয়া হত্যা
পাগল ভান করে ২ বছর পলাতক আসামি গ্রেফতার
হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার ৩নং দক্ষিণ পূর্ব ইউনিয়নের বানেশ্বর বিশ্বাসের পাড়ার গিয়াসউদ্দিন (৫০) নামের এক শ্রমিক দীর্ঘ দুই বছর ছয় মাস পলাতক থাকার পর অবশেষে পিবিআই’র সিলেট জেলা গোয়েন্দা শাখার হাতে গ্রেফতার হয়েছেন।
গ্রেফতারকৃত গিয়াসউদ্দিন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন, যেখানে তিনি দাবি করেন যে, বানিয়াচংয়ের ঠিকাদার সুজাত মিয়ার সাথে পরকীয়া সম্পর্ক নিয়ে সৃষ্টি হওয়া বিরোধের জেরে তিনি পরিকল্পিতভাবে ওই ঠিকাদারকে হত্যা করেছেন।
ঘটনার সূত্রপাত ২০২৩ সালের ১৩ জানুয়ারী রাতে সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার জাহিদপুরে। সুজাত মিয়া, যিনি ঠিকাদার হিসেবে কাজ করতেন, গিয়াসউদ্দিনের স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্ক করছিলেন বলে অভিযোগ। সে রাতে ধারালো দা দিয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় তাকে কোপানোর পর গুরুতর আহত অবস্থায় এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৫ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ১৯ জানুয়ারী রাতে সুজাত মিয়া মৃত্যুবরণ করেন।
মৃত্যুর পর নিহতের স্ত্রী নার্গিস বেগম ছাতক থানায় গিয়াসউদ্দিনসহ চারজনের বিরুদ্ধে হত্যা ও জখমের মামলা দায়ের করেন। তদন্ত শেষে গিয়াসউদ্দিন পলাতক থাকার কারণে চার্জশীট ফাইনাল করা হলেও তিনি বেশিদিন আত্মগোপনে ছিলেন। পুলিশের তদন্তে জানা যায়, গিয়াসউদ্দিন পাগলের ভান করে দেশের বিভিন্ন মাজার ও সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থান করছিলেন এবং মোবাইল ফোনও ব্যবহার করতেন না।
বৃহস্পতিবার, ৯ আগস্ট সিলেটের গোয়াইনঘাট থানার মনরতল সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে পিবিআই তার অস্তিত্ব খুঁজে বের করে গ্রেফতার করে। তার চুল, দাড়ি ও পোষাক সবই এলোমেলো, যা পাগলের মতো ভাব প্রকাশ করলেও জিজ্ঞাসাবাদে তার শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত হয়। পরে সে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি প্রদান করে বিস্তারিত ঘটনা বর্ণনা করে।
জবানবন্দিতে গিয়াসউদ্দিন উল্লেখ করেন, ঠিকাদার সুজাত তার স্ত্রী সুফিয়া বেগমের সঙ্গে অনুপস্থিতিতে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন এবং ছবিও তুলে রেখেছিলেন। এক পর্যায়ে সুজাত ওই ছবি দেখিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি করেন এবং পরে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করেন, এমনকি ৮ দিন আটকে রাখেন। এ অবস্থা সহ্য করতে না পেরে গিয়াসউদ্দিন শেষ পর্যন্ত পরিকল্পিতভাবে সুজাতকে হত্যা করেন।
পিবিআই’র গোপন তথ্য ও অভিযান সফলতায় ঘটনার নেপথ্যের সব তথ্য আদালতে উপস্থাপন করা হবে বলে জানানো হয়েছে।