নানা রঙে রঙিন জলচর ‘সুন্দরী হাঁস’
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে অনন্য ও চোখ জুড়ানো এক হাঁসের নাম ‘সুন্দরী হাঁস’। যদিও এটি মূলত পুরুষ প্রজাতির ম্যান্ডারিন হাঁসের নাম, তবে রঙিন পালকের কারণে বাংলায় একে ‘সুন্দরী হাঁস’ বলা হয়। ইংরেজি নাম Mandarin Duck এবং বৈজ্ঞানিক নাম Aix galericulata।
এই বাহারি রঙের ছোট ডুবুরি হাঁসটি সাধারণত মিঠাপানির জলাশয়, পুকুর, প্লাবিত ধানক্ষেত, বনের ধারে জলধারা এবং ঘন বনঘেরা হ্রদে বিচরণ করে। এরা অন্য হাঁসের মতো ডানায় ডুব দিতে না পারলেও উড়তে এবং ডাঙায় চলাচলে দক্ষ। এমনকি গাছের ডালেও বসতে পারে।
পুরুষ ম্যান্ডারিন হাঁস চার-পাঁচ রঙের সমন্বয়ে অত্যন্ত সুন্দর। মাথার উপর সাদা দাগ, গলা ও ঘাড়ে কমলা ঝালর, নীল ও বাদামি পালকে সজ্জিত ডানা, লালচে ঠোঁট ও কমলা পা-সব মিলিয়ে চোখধাঁধানো সৌন্দর্যের প্রতিচ্ছবি। স্ত্রী হাঁস তুলনামূলক সাদামাটা, পিঠ বাদামি, বুকে সাদা দাগ ও চোখে ‘সাদা চশমা’ সদৃশ রেখা।
প্রজনন মৌসুম মে থেকে আগস্ট। এ সময় পুরুষ হাঁস সঙ্গীকে আকৃষ্ট করতে ঘাড় লম্বা করে মাথা নাড়ায়, মৃদু শব্দ করে এবং স্ত্রী হাঁসের পেছনে ঘুরতে থাকে। সাধারণত গাছের গর্তে বা কোটরে বাসা করে, যেখানে মা হাঁস ডিম পাড়ে এবং তা দেয়।
ডিম ফোটার পর মা হাঁস মাটি থেকে ছানাদের ডাকে, আর তারা গর্ত থেকে নিচে ঝাঁপ দেয়—অসাধারণ দক্ষতায় আঘাত ছাড়াই মাটিতে নামে এবং মায়ের পিছু পিছু জলাশয়ে পৌঁছে যায়। প্রায় ৪০-৪৫ দিনে তারা উড়তে শেখে এবং নতুন ঝাঁকে যোগ দেয়।
সুন্দরী হাঁস শুধু এক নজরে নয়, এর জীবনযাত্রা, আচরণ ও প্রজনন ধরণ প্রকৃতির এক অপূর্ব বিস্ময়।