ঢাকা ০২:৪৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ৩ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ধুঁকছে খুলনার সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল

মোঃ রবিউল হোসেন খান, খুলনা::

ছবি: সংগৃহীত

স্বাধীনতার আগেই প্রতিষ্ঠিত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একমাত্র সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালটি এখন নিজেই সংক্রামণে আক্রান্ত। অবকাঠামোগত জরাজীর্ণ অবস্থা, জনবল সংকট, নিরাপত্তাহীনতা ও চিকিৎসা সরঞ্জামের ঘাটতিতে হাসপাতালটির সেবা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

১৯৬৮ সালে খুলনার খানজাহান আলী থানার মীরেরডাঙ্গায় ভেরব নদীর পাড়ে ৪ একরের বেশি জায়গায় স্থাপিত হয় ২০ শয্যার এই হাসপাতাল। ডায়রিয়া, টিটেনাস, হাম, জলাতঙ্কসহ নানা সংক্রামক রোগের চিকিৎসার জন্য দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার কোটি মানুষের একমাত্র ভরসাস্থল এটি। কিন্তু দীর্ঘ ৫৬ বছরে হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা বা সুযোগ-সুবিধার তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি।

হাসপাতাল ভবনটি এখন ঝুঁকিপূর্ণ ও জরাজীর্ণ। ছাদ ও দেয়ালের প্লাস্টার খসে পড়ছে, সামান্য বৃষ্টিতেই ছাদ দিয়ে পানি পড়ে। স্টোররুমের স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে ওষুধে উইপোকা ধরে যাচ্ছে। আবাসিক ভবনগুলো বসবাসের অনুপযোগী, তবুও কর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরিবারসহ বসবাস করছেন।

সীমানা প্রাচীর না থাকায় হাসপাতালটি পুরোপুরি অরক্ষিত। নেই কোনো নিরাপত্তা প্রহরী, ফলে গরু-ছাগল ও বহিরাগতদের অবাধ বিচরণ ঘটে। ফলে রাতে চিকিৎসক ও নার্সরা আতঙ্কে দায়িত্ব পালন করেন।

এক নার্স বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে কোনো ওয়ার্ড বয় নেই। রাতে রোগী এলে গেট খুলতে হয় নিজের ঝুঁকিতে। নৈশ প্রহরী না থাকায় ভয় নিয়ে কাজ করতে হয়।”

হাসপাতালটিতে ২৩ পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ১০ জন। আয়া, বাবুর্চি, সহকারী নার্স, মেডিকেল অফিসার, ওয়ার্ড বয়, নিরাপত্তা ও নৈশ প্রহরীসহ ১৩টি পদ কয়েক দশক ধরে শূন্য।

এ ছাড়া হাসপাতালে নেই কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। পুরুষ, নারী ও শিশু রোগীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ডের ব্যবস্থাও নেই। টয়লেটগুলোর অবস্থা অত্যন্ত নাজুক।

আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োজিত ৬ জন কর্মীও ১৬ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না। একজন বেতন না পেয়ে কাজ বন্ধ করেছেন, বাকিরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

বর্তমানে মাত্র ২ জন মেডিকেল অফিসারের ওপর চিকিৎসা কার্যক্রম নির্ভর করছে। আরও ২ জন চিকিৎসক ডেপুটেশনে অস্থায়ীভাবে দায়িত্ব পালন করছেন।

হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. হিমেল ঘোষ বলেন, “সংকট সমাধানে বারবার কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। জরাজীর্ণ ভবন ও আবাসিক ভবন মেরামতের অনুরোধ জানানো হয়েছে স্বাস্থ্য প্রকৌশল ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে।”

তিনি আরও বলেন, “নিরাপত্তাহীনতার কারণে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আনা ও সংরক্ষণ সম্ভব হয় না। নৈশ প্রহরী না থাকায় চুরির ঘটনাও ঘটে। স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে ওষুধ ঠিকভাবে রাখা যায় না।”

প্রতিদিন গড়ে ৩৫-৪০ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। এপ্রিল থেকে রোগীর সংখ্যা আরও বেড়ে যায়। গত এপ্রিল মাসে সর্বোচ্চ ৫২২ জন রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। কিন্তু শয্যা ও স্যালাইন সংকটের কারণে রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয়।

নিউজটি টাইম লাইনে শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

চেকপোস্ট

Checkpost is one of the most popular Bengali news portal and print newspaper in Bangladesh. The print and online news portal started its operations with a commitment to fearless, investigative, informative and unbiased journalism.
আপডেট সময় ০৮:১৮:৩৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৫
৫২৬ বার পড়া হয়েছে

ধুঁকছে খুলনার সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল

আপডেট সময় ০৮:১৮:৩৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৫

স্বাধীনতার আগেই প্রতিষ্ঠিত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একমাত্র সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালটি এখন নিজেই সংক্রামণে আক্রান্ত। অবকাঠামোগত জরাজীর্ণ অবস্থা, জনবল সংকট, নিরাপত্তাহীনতা ও চিকিৎসা সরঞ্জামের ঘাটতিতে হাসপাতালটির সেবা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

১৯৬৮ সালে খুলনার খানজাহান আলী থানার মীরেরডাঙ্গায় ভেরব নদীর পাড়ে ৪ একরের বেশি জায়গায় স্থাপিত হয় ২০ শয্যার এই হাসপাতাল। ডায়রিয়া, টিটেনাস, হাম, জলাতঙ্কসহ নানা সংক্রামক রোগের চিকিৎসার জন্য দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার কোটি মানুষের একমাত্র ভরসাস্থল এটি। কিন্তু দীর্ঘ ৫৬ বছরে হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা বা সুযোগ-সুবিধার তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি।

হাসপাতাল ভবনটি এখন ঝুঁকিপূর্ণ ও জরাজীর্ণ। ছাদ ও দেয়ালের প্লাস্টার খসে পড়ছে, সামান্য বৃষ্টিতেই ছাদ দিয়ে পানি পড়ে। স্টোররুমের স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে ওষুধে উইপোকা ধরে যাচ্ছে। আবাসিক ভবনগুলো বসবাসের অনুপযোগী, তবুও কর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরিবারসহ বসবাস করছেন।

সীমানা প্রাচীর না থাকায় হাসপাতালটি পুরোপুরি অরক্ষিত। নেই কোনো নিরাপত্তা প্রহরী, ফলে গরু-ছাগল ও বহিরাগতদের অবাধ বিচরণ ঘটে। ফলে রাতে চিকিৎসক ও নার্সরা আতঙ্কে দায়িত্ব পালন করেন।

এক নার্স বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে কোনো ওয়ার্ড বয় নেই। রাতে রোগী এলে গেট খুলতে হয় নিজের ঝুঁকিতে। নৈশ প্রহরী না থাকায় ভয় নিয়ে কাজ করতে হয়।”

হাসপাতালটিতে ২৩ পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ১০ জন। আয়া, বাবুর্চি, সহকারী নার্স, মেডিকেল অফিসার, ওয়ার্ড বয়, নিরাপত্তা ও নৈশ প্রহরীসহ ১৩টি পদ কয়েক দশক ধরে শূন্য।

এ ছাড়া হাসপাতালে নেই কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। পুরুষ, নারী ও শিশু রোগীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ডের ব্যবস্থাও নেই। টয়লেটগুলোর অবস্থা অত্যন্ত নাজুক।

আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োজিত ৬ জন কর্মীও ১৬ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না। একজন বেতন না পেয়ে কাজ বন্ধ করেছেন, বাকিরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

বর্তমানে মাত্র ২ জন মেডিকেল অফিসারের ওপর চিকিৎসা কার্যক্রম নির্ভর করছে। আরও ২ জন চিকিৎসক ডেপুটেশনে অস্থায়ীভাবে দায়িত্ব পালন করছেন।

হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. হিমেল ঘোষ বলেন, “সংকট সমাধানে বারবার কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। জরাজীর্ণ ভবন ও আবাসিক ভবন মেরামতের অনুরোধ জানানো হয়েছে স্বাস্থ্য প্রকৌশল ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে।”

তিনি আরও বলেন, “নিরাপত্তাহীনতার কারণে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আনা ও সংরক্ষণ সম্ভব হয় না। নৈশ প্রহরী না থাকায় চুরির ঘটনাও ঘটে। স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে ওষুধ ঠিকভাবে রাখা যায় না।”

প্রতিদিন গড়ে ৩৫-৪০ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। এপ্রিল থেকে রোগীর সংখ্যা আরও বেড়ে যায়। গত এপ্রিল মাসে সর্বোচ্চ ৫২২ জন রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। কিন্তু শয্যা ও স্যালাইন সংকটের কারণে রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয়।