ঢাকা ০৭:০৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১৩ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ধর্ষনের ভিডিও ধারন করে ব্লাকমেইল, লোকলজ্জায় স্কুল ছাত্রীর আত্মহত্যা

মোঃ রবিউল হোসেন খান, খুলনা::

মোংলা শহরের চাঞ্চল্যকর স্কুল ছাত্রী আত্মহত্যার ঘটনার ভিন্ন মোড় নিতে শুরু করেছে। প্রাথমিকভাবে পরিবারের সাথে অভিমান করে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে প্রচার পেলেও এখন জানাযাচ্ছে, বখাটে এক যুবক ৮ম শ্রেনী পড়ুয়া ঔই কিশোরীর সাথে বিশেষ সখ্যতা তৈরি করে সুন্দরবনের করমজল পিকনিক স্পটে নিয়ে নেশা জাতীয় দ্রব্য খাইয়ে ধর্ষন সহ তা ভিডিও করে রাখে। পরে ঔই ভিডিও ভয় দেখিয়ে কিশোরিটিকে ব্লাক মেইল করে একাধিকবার ধর্ষন করে। এতে কিশোরীটি মানসিকভাবে ভঙে পড়ায় ও লজ্জায় ও বাখাটেদের হাত থেকে রেহায় পেতে এক পর্যায়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়।

এ ঘটনার প্রায় ৪ মাস পর মৃতের পিতা আলী হোসেন বাচ্চু এক নারী সহ ৩ জনকে অভিযুক্ত করে বাগেরহাট আদালতে গত ৭ এপ্রিল ধর্ষন ও আত্মহত্যার প্ররোচনার দায়ে এজাহার দায়ের করেন। পরে আদালতের নির্দেশে গত ২১ এপ্রিল মোংলা থানা পুলিশ এজাহারটিকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে এফআইআর ( মামলা) রেকর্ড করেন। এদিকে পুলিশ এ মামলার প্রধান আসামী মো: আসহাবুল ইয়ামিন(২৪) কে বিশেষ অভিযান চালিয়ে বন্দর কতৃপক্ষের মাধবী কলোনী এলাকা থেকে গত ২২ এপ্রিল গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত যুবকের পিতা মো: সোহেল রানা মোংলা বন্দর কতৃপক্ষের একটি নৌযানে মাস্টার পদে কর্মরত রয়েছেন।

মামলা ও মৃতের পারিবারিক সুত্রে জানা্যায়, মোংলা শহরের সামসুর রহমান রোডের বাসিন্দা ও স্থানীয় একটি স্কুলের ৮ শ্রেনীর পড়ুয়া ছাত্রী পড়ালেখার পাশাপাশি ক্রিকেট খেলায় বেশ পারদর্শী ছিল। ক্রিকেট খেলার সুবাধে মোংলার বিভিন্ন জায়গায় যাতায়ত ছিল। বিভিন্ন জায়গায় খেলার সুত্র ধরে স্থানীয় বন্দরের মাধবী আবাসিক এলাকার বাসিন্দা ও মোংলা বন্দর কতৃপক্ষের একটি নৌযানের মাস্টার সোহেল রানার ছেলে মো: আসহাবুল ইয়ামিন ও তার কয়লকজন সহযোগীর সাথে ঔই স্কুল ছাত্রীর
পরিচয়ের একপর্যায়ে বিশেষ সখ্যতা গড়ে ওঠে। আর এই সখ্যতা কাল হলো ঔই ছাত্রীর জীবনে। গড়া ওঠা সখতার কিছুদিন পর আসহাবুল ও তার সহযোগীরা ঔই ছাত্রীকে ফুসলিয়ে ট্রলারে করে সুন্দরবন করমজল পিকনিক স্পটে বেড়াতে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে নেশা জাতীয় কিছু খাইয়ে আসহাবুল ধর্ষন করে। একপর্যায়ে দৃশ্য ও নগ্ন ছবি ভিডিও করে রাখে আসহাবুল ও তার সহযোগীরা। এর পরই শুরু হয় ঔই ছাত্রীর উপর আসহাবুল ও তার সহযোগীদের নানা মানসিক ও, শারিরীক অত্যাচার। ধর্ষনের ভিডিও ফেসবুকে ও অভিভাবকের কাছে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে ধারাবাহিকভাবে বেশ কয়েকবার আসহাবুল তার সহযোগীদের সহায়তায় বিভিন্ন স্থানে নিয়ে ধর্ষন সহ নানা অত্যাচার করে। এভাবে দিনকে দিন অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে যেতে থাকে।

এক পর্যায়ে গত ১৪ ডিসেম্বর ঔই ছাত্রীকে তার এক সহযোগীর মোটরসাইকেলে করে আসহাবুল কাইনমারি একটি কফি শফে ডেকে নেয়। সেখানে কথাবর্তার একপর্যায়ে স্কুল ছাত্রী বিয়ের প্রস্তাব দিলে আসাহাবুল তিরস্কার করে লজ্জাজনক ও অপমানমুলক নানা কথাবর্তা বলাসহ তাকে বিয়ে করতে অসীকৃতি জানায়। এতে ঔই ছাত্রী মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে পরের দিন রাতে আড়ার সাথে গলায় ফাস দিয়ে আত্মহত্যা করে।

এদিকে এ ঘটনায় প্রথমে মোংলা থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা রেকর্ড করা হয়। পরে মৃতের অভিভাবকেরা বিভিন্ন মাধ্যমে এসব ঘটনা জানতে পেরে আসহাবুল সহ তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে বাগেরহাট আদালতে গত ৭ এপ্রিল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষন সহ আত্মহত্যায় প্ররোচিত সংক্রান্ত ধারায় এজাহার দাখিল করেন। পরে আদালত এজাহারটিকে মোংলা থানার ওসিকে এফআইআর হিসেবে রেকর্ড করার জন্য আদেশ দেন। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী গত ২১ এপ্রিল মোংলা থানা পুলিশ এজাহারটিকে এফআইআর হিসেবে রেকর্ড করে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোংলা থানার ওসি (তদন্ত) মানিক চন্দ্র গাইন জানান, ইতিমধ্যে মামলার তদন্ত কাজ শুরু করা হয়েছে। ঘটনার অন্যতম হোতা আসহাবুল ইয়ামিনকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরন করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আসহাবুল বাহিনী পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সত্যতা ও তার নিজের সম্পৃক্ততা র কথা সীকার করেছে। এছাড়া তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে একাধিক নারীর ছবি ও ভিডিও রয়েছে। মামলার অন্য আসামীদের গ্রেফতারে জোর পুলিশি তৎপরতা চলছে বলে জানান।

ট্যাগস :

নিউজটি টাইম লাইনে শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

চেকপোস্ট

Checkpost is one of the most popular Bengali news portal and print newspaper in Bangladesh. The print and online news portal started its operations with a commitment to fearless, investigative, informative and unbiased journalism.
আপডেট সময় ০৯:০৮:৩৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫
৫২২ বার পড়া হয়েছে

ধর্ষনের ভিডিও ধারন করে ব্লাকমেইল, লোকলজ্জায় স্কুল ছাত্রীর আত্মহত্যা

আপডেট সময় ০৯:০৮:৩৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫

মোংলা শহরের চাঞ্চল্যকর স্কুল ছাত্রী আত্মহত্যার ঘটনার ভিন্ন মোড় নিতে শুরু করেছে। প্রাথমিকভাবে পরিবারের সাথে অভিমান করে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে প্রচার পেলেও এখন জানাযাচ্ছে, বখাটে এক যুবক ৮ম শ্রেনী পড়ুয়া ঔই কিশোরীর সাথে বিশেষ সখ্যতা তৈরি করে সুন্দরবনের করমজল পিকনিক স্পটে নিয়ে নেশা জাতীয় দ্রব্য খাইয়ে ধর্ষন সহ তা ভিডিও করে রাখে। পরে ঔই ভিডিও ভয় দেখিয়ে কিশোরিটিকে ব্লাক মেইল করে একাধিকবার ধর্ষন করে। এতে কিশোরীটি মানসিকভাবে ভঙে পড়ায় ও লজ্জায় ও বাখাটেদের হাত থেকে রেহায় পেতে এক পর্যায়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়।

এ ঘটনার প্রায় ৪ মাস পর মৃতের পিতা আলী হোসেন বাচ্চু এক নারী সহ ৩ জনকে অভিযুক্ত করে বাগেরহাট আদালতে গত ৭ এপ্রিল ধর্ষন ও আত্মহত্যার প্ররোচনার দায়ে এজাহার দায়ের করেন। পরে আদালতের নির্দেশে গত ২১ এপ্রিল মোংলা থানা পুলিশ এজাহারটিকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে এফআইআর ( মামলা) রেকর্ড করেন। এদিকে পুলিশ এ মামলার প্রধান আসামী মো: আসহাবুল ইয়ামিন(২৪) কে বিশেষ অভিযান চালিয়ে বন্দর কতৃপক্ষের মাধবী কলোনী এলাকা থেকে গত ২২ এপ্রিল গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত যুবকের পিতা মো: সোহেল রানা মোংলা বন্দর কতৃপক্ষের একটি নৌযানে মাস্টার পদে কর্মরত রয়েছেন।

মামলা ও মৃতের পারিবারিক সুত্রে জানা্যায়, মোংলা শহরের সামসুর রহমান রোডের বাসিন্দা ও স্থানীয় একটি স্কুলের ৮ শ্রেনীর পড়ুয়া ছাত্রী পড়ালেখার পাশাপাশি ক্রিকেট খেলায় বেশ পারদর্শী ছিল। ক্রিকেট খেলার সুবাধে মোংলার বিভিন্ন জায়গায় যাতায়ত ছিল। বিভিন্ন জায়গায় খেলার সুত্র ধরে স্থানীয় বন্দরের মাধবী আবাসিক এলাকার বাসিন্দা ও মোংলা বন্দর কতৃপক্ষের একটি নৌযানের মাস্টার সোহেল রানার ছেলে মো: আসহাবুল ইয়ামিন ও তার কয়লকজন সহযোগীর সাথে ঔই স্কুল ছাত্রীর
পরিচয়ের একপর্যায়ে বিশেষ সখ্যতা গড়ে ওঠে। আর এই সখ্যতা কাল হলো ঔই ছাত্রীর জীবনে। গড়া ওঠা সখতার কিছুদিন পর আসহাবুল ও তার সহযোগীরা ঔই ছাত্রীকে ফুসলিয়ে ট্রলারে করে সুন্দরবন করমজল পিকনিক স্পটে বেড়াতে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে নেশা জাতীয় কিছু খাইয়ে আসহাবুল ধর্ষন করে। একপর্যায়ে দৃশ্য ও নগ্ন ছবি ভিডিও করে রাখে আসহাবুল ও তার সহযোগীরা। এর পরই শুরু হয় ঔই ছাত্রীর উপর আসহাবুল ও তার সহযোগীদের নানা মানসিক ও, শারিরীক অত্যাচার। ধর্ষনের ভিডিও ফেসবুকে ও অভিভাবকের কাছে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে ধারাবাহিকভাবে বেশ কয়েকবার আসহাবুল তার সহযোগীদের সহায়তায় বিভিন্ন স্থানে নিয়ে ধর্ষন সহ নানা অত্যাচার করে। এভাবে দিনকে দিন অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে যেতে থাকে।

এক পর্যায়ে গত ১৪ ডিসেম্বর ঔই ছাত্রীকে তার এক সহযোগীর মোটরসাইকেলে করে আসহাবুল কাইনমারি একটি কফি শফে ডেকে নেয়। সেখানে কথাবর্তার একপর্যায়ে স্কুল ছাত্রী বিয়ের প্রস্তাব দিলে আসাহাবুল তিরস্কার করে লজ্জাজনক ও অপমানমুলক নানা কথাবর্তা বলাসহ তাকে বিয়ে করতে অসীকৃতি জানায়। এতে ঔই ছাত্রী মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে পরের দিন রাতে আড়ার সাথে গলায় ফাস দিয়ে আত্মহত্যা করে।

এদিকে এ ঘটনায় প্রথমে মোংলা থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা রেকর্ড করা হয়। পরে মৃতের অভিভাবকেরা বিভিন্ন মাধ্যমে এসব ঘটনা জানতে পেরে আসহাবুল সহ তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে বাগেরহাট আদালতে গত ৭ এপ্রিল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষন সহ আত্মহত্যায় প্ররোচিত সংক্রান্ত ধারায় এজাহার দাখিল করেন। পরে আদালত এজাহারটিকে মোংলা থানার ওসিকে এফআইআর হিসেবে রেকর্ড করার জন্য আদেশ দেন। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী গত ২১ এপ্রিল মোংলা থানা পুলিশ এজাহারটিকে এফআইআর হিসেবে রেকর্ড করে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোংলা থানার ওসি (তদন্ত) মানিক চন্দ্র গাইন জানান, ইতিমধ্যে মামলার তদন্ত কাজ শুরু করা হয়েছে। ঘটনার অন্যতম হোতা আসহাবুল ইয়ামিনকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরন করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আসহাবুল বাহিনী পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সত্যতা ও তার নিজের সম্পৃক্ততা র কথা সীকার করেছে। এছাড়া তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে একাধিক নারীর ছবি ও ভিডিও রয়েছে। মামলার অন্য আসামীদের গ্রেফতারে জোর পুলিশি তৎপরতা চলছে বলে জানান।