১২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম শিক্ষার্থীদের
দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় উত্তাল সুনামগঞ্জ
সুনামগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থীসহ তিনজন নিহতের ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠেছে শিক্ষাঙ্গন। নিরাপদ সড়ক, দায়ীদের শাস্তি ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) সকাল থেকে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও সুনামগঞ্জ টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা।
সকাল ১০টা থেকে শিক্ষার্থীরা শান্তিগঞ্জ পয়েন্টে অবস্থান নেন এবং বেলা ১১টার দিকে সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভে অংশ নেন। এসময় তারা বিভিন্ন যানবাহনের ফিটনেস ও চালকের লাইসেন্স যাচাই শুরু করেন।
বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করেন, দুর্ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও এখনো ঘাতক বাসচালককে আটক করা হয়নি। পুলিশ প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে বলেও অভিযোগ তাদের।
এক শিক্ষার্থী বলেন, “আমাদের সহপাঠী আজ কবরে, অথচ প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আমরা ১২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিচ্ছি-দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা আসবে।”
আরেক শিক্ষার্থী তাকবিল হোসেন বলেন, “পুলিশ প্রশাসনকে অনুরোধ করেছিলাম ফিটনেসবিহীন যানবাহন আটকাতে। কিন্তু তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। বাধ্য হয়ে আমরা নিজেরাই বাসগুলোর কাগজপত্র যাচাই করি। দেখা গেছে, ১০টি বাসের কারোরই কাগজ ঠিক নেই। এগুলোর বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।”
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বক্তব্য দেন তাকবিল হোসেন, জাকারিয়া নাইম, রাহাত আহমেদ, আশরাফ হোসেনসহ আরও অনেকে। টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন হুমায়ুন আহমেদ, শান্ত রায়, আমিন উদ্দিন, মো. লিটন, আপন আহমেদ, তামিম আহমেদ, পূর্বা তালুকদার, তুলি সরকার, সুমাইয়া আক্তার, তাহমিদা জাহান রেবিন ও বুশরা আক্তার।
বুধবার দুপুরে সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও সুনামগঞ্জ টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট থেকে পাঁচজন শিক্ষার্থী ও একজন সাধারণ যাত্রী সিএনজিযোগে শহরের দিকে যাচ্ছিলেন। সদর উপজেলার বাহাদুরপুর এলাকায় বিপরীত দিক থেকে আসা একটি বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে ঘটনাস্থলেই নিহত হন শফিকুল ইসলাম (৫০) ও আফসানা খুশী (১৭)। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান আরও একজন শিক্ষার্থী স্নেহা চক্রবর্তী (১৮)।
নিহত আফসানা খুশী শহরের আরপিনগর এলাকার দেলোয়ার হোসেনের মেয়ে এবং টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। স্নেহা চক্রবর্তী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, বাড়ি শান্তিগঞ্জ উপজেলার জয়কলস গ্রামে। আরেক নিহত ব্যক্তি শহরের আলীপাড়ার বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম।
আহত বাকি দুইজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুকান্ত সাহা বলেন, “নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে, আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের যৌক্তিক দাবি বাস্তবায়নে কাজ করছি। ইতোমধ্যে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ফিটনেসবিহীন গাড়ি, লাইসেন্সবিহীন চালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
তিনি আরও জানান, মোবাইল কোর্টে এ পর্যন্ত তিনটি বাস, চারটি সিএনজি ও একটি মোটরসাইকেল আটক করে জরিমানা করা হয়েছে এবং এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।