তাহলে সোয়াবিন তেল গেল কোথায়?
বর্তমানে দেশে সোয়াবিন তেলের বাজারে এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে দেশে ভোজ্যতেলের কোনো সংকট নেই এবং গত বছরের তুলনায় এই বছর এক লাখ টন বেশি আমদানি হয়েছে, তবুও বাজারে সোয়াবিন তেলের বড় সঙ্কট দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি রাজশাহীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বোতলজাত সোয়াবিন তেল মিলছে না। পাঁচটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কোনো বাজারেই এক লিটারের বোতলজাত তেল পাওয়া যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে পাড়া-মহল্লার মুদি দোকানও খালি, যা ভোক্তাদের মধ্যে শঙ্কা সৃষ্টি করেছে, বিশেষ করে রমজান মাসের আগে এই সংকট আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিসি) প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে বছরে ভোজ্যতেলের চাহিদা ২৩ থেকে ২৪ লাখ টন। এর মধ্যে রমজান মাসে চাহিদা হয় প্রায় ৩ লাখ টন। তবে গত বছরের ১ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৮ লাখ ৫৭ হাজার ৫৪৮ টন ভোজ্যতেল আমদানি হয়েছে। পাশাপাশি দেশে ২ লাখ ৫০ হাজার টন তেল উৎপাদিত হয়, এবং পাইপলাইনে এখনো ৮ লাখ টন তেল রয়েছে যা শিগগিরই দেশে আসার অপেক্ষায়। তেলের আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যও নিম্নমুখী হলেও, বাজারে এই সংকটের পেছনে কি কারণ?
রাজশাহীর বালিয়াপুকুর বৌ বাজার, শিরোইল কাচা বাজার, তালাইমারী বাজার ঘুরে জানা গেছে, দোকানদাররা বলছেন, “সোয়াবিন তেল কোম্পানি সরবরাহ দিচ্ছে না। এস, আর (সরবরাহ) আসছে না।” ডিলারদের কাছেও সোয়াবিন তেল নেই। তারা জানাচ্ছেন, কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে তেল সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এমনকি স্থানীয় ডিলাররা পর্যন্ত স্বীকার করছেন যে, তারা তেল পেতে খুবই সমস্যায় পড়ছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিছু বড় তেল কোম্পানি সরবরাহ কমিয়ে দিয়ে বাজারে সংকট সৃষ্টি করেছে। কিছু কোম্পানি দাম বাড়ানোর উদ্দেশ্যে বাজারে তেলের সরবরাহ সংকুচিত করেছে, যার ফলে সাধারণ ভোক্তা বিপাকে পড়েছেন। সরকারের কাছে এ বিষয়ে প্রমাণ থাকলেও, অদৃশ্য শক্তির কাছে তারা বারবার মাথা নত করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই অবস্থায় ভোক্তারা বড় ধরনের সমস্যার মুখে পড়তে যাচ্ছেন, বিশেষ করে পবিত্র রমজান মাসে যখন তেলের চাহিদা বাড়বে।
তবে প্রশ্ন উঠছে, সরকারের নজরদারি এবং বাজারের নিয়ন্ত্রণে কেন এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না? বিভিন্ন বাজার ঘুরে ভোক্তাদের অসহায়ত্বের চিত্র স্পষ্ট। সরকার যদি দ্রব্যমূল্য এবং সরবরাহ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারে, তাহলে রমজান মাসে খাদ্যসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি এবং সংকট আরও তীব্র হতে পারে।
এখনো আশার দিক হলো, আমদানির পরিমাণ বেশি থাকার কারণে সামনে পরিস্থিতি সামাল দেয়া সম্ভব হতে পারে, তবে সরকারের আরো কার্যকরী পদক্ষেপ এবং বাজার মনিটরিং নিশ্চিত করতে হবে, যাতে সাধারণ মানুষ অপ্রত্যাশিতভাবে উচ্চমূল্যে বা সরবরাহ সংকটের শিকার না হয়।