ঢাকা ০৮:৫৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ৩ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ট্রাম্পের শুল্ক যুদ্ধ ও বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া: বাংলাদেশের জন্য কী বার্তা রয়েছে?

চেকপোস্ট প্রতিবেদক::

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অপ্রত্যাশিত ও অসংলগ্ন শুল্কনীতি শুধু মার্কিন অর্থনীতিতেই অস্থিরতা তৈরি করেনি, বরং তার প্রভাব পড়েছে বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থায়। তার ঘোষিত অতিরিক্ত শুল্ক, বিশেষ করে চীনের উপর, বিশ্ব বাজারে গভীর অর্থনৈতিক ক্ষতি ও অনিশ্চয়তার জন্ম দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের এমন নীতি দীর্ঘমেয়াদে আমেরিকাসহ বাকি বিশ্বের অর্থনীতির জন্য স্থায়ী ক্ষতির কারণ হতে পারে।

বিশ্বের দুটি বৃহৎ অর্থনীতি-যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে এই বাণিজ্যযুদ্ধ শুধু পণ্য বিনিময়ের পথেই বাধা সৃষ্টি করেনি, বরং পরাশক্তিগুলোর মধ্যকার উত্তেজনাকেও বাড়িয়ে তুলেছে। বিশেষ করে যখন ট্রাম্প একের পর এক বাণিজ্যিক চুক্তি বাতিল বা উপেক্ষা করেছেন, তখন বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনাস্থা জন্ম নিয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের মতো উদীয়মান অর্থনীতির জন্য ঝুঁকি যেমন আছে, তেমনি সুযোগও রয়েছে। বাংলাদেশের রপ্তানি এখনও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের শুল্কমুক্ত সুবিধার উপর নির্ভরশীল। তবে মার্কিন বাজারে শুল্ক দিয়েও বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, যা প্রমাণ করে যে—প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা অর্জন করছে দেশটি।

সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, শুধু বাণিজ্য নীতি দিয়ে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের কাঠামোগত সীমাবদ্ধতা-যেমন রপ্তানি পণ্যের সীমিত সমাহার ও বাজার বৈচিত্র্যের অভাব—এখন আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এই সংকটকে তাই একটি জাগরণের সুযোগ হিসেবে দেখতে হবে।

তিনি আরও বলেন, “শুধু শুল্ক হ্রাস বা বৃদ্ধির উপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত নিলে হবে না। আমাদের উচিত উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, পণ্যের বৈচিত্র্য এবং প্রযুক্তি ব্যবহার বাড়ানো। একই সঙ্গে মার্কিন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যদি কোনও প্রতিবন্ধকতা থাকে, তা দূর করতে হবে।”

বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট, ব্যাংক খাতের দুর্বলতা এবং উচ্চ সুদের হার-এই সমস্ত অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলো এখন আরও প্রকট হয়ে উঠছে। ফলে শুল্ক বৃদ্ধির চাপ শুধু বাইরের ঝুঁকি নয়, বরং দেশের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতাকেও সামনে এনে দিয়েছে।

এই অবস্থায় একটি সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ও কৌশল গ্রহণ না করলে সাময়িক আলোচনায় লাভ হবে না। শুল্ক যুদ্ধের মধ্যেই ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি নিতে না পারলে, বাংলাদেশ বড় ধরনের চাপের মুখে পড়তে পারে।

ট্যাগস :

নিউজটি টাইম লাইনে শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

চেকপোস্ট

Checkpost is one of the most popular Bengali news portal and print newspaper in Bangladesh. The print and online news portal started its operations with a commitment to fearless, investigative, informative and unbiased journalism.
আপডেট সময় ০৪:২৬:৫৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫
৫২২ বার পড়া হয়েছে

ট্রাম্পের শুল্ক যুদ্ধ ও বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া: বাংলাদেশের জন্য কী বার্তা রয়েছে?

আপডেট সময় ০৪:২৬:৫৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অপ্রত্যাশিত ও অসংলগ্ন শুল্কনীতি শুধু মার্কিন অর্থনীতিতেই অস্থিরতা তৈরি করেনি, বরং তার প্রভাব পড়েছে বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থায়। তার ঘোষিত অতিরিক্ত শুল্ক, বিশেষ করে চীনের উপর, বিশ্ব বাজারে গভীর অর্থনৈতিক ক্ষতি ও অনিশ্চয়তার জন্ম দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের এমন নীতি দীর্ঘমেয়াদে আমেরিকাসহ বাকি বিশ্বের অর্থনীতির জন্য স্থায়ী ক্ষতির কারণ হতে পারে।

বিশ্বের দুটি বৃহৎ অর্থনীতি-যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে এই বাণিজ্যযুদ্ধ শুধু পণ্য বিনিময়ের পথেই বাধা সৃষ্টি করেনি, বরং পরাশক্তিগুলোর মধ্যকার উত্তেজনাকেও বাড়িয়ে তুলেছে। বিশেষ করে যখন ট্রাম্প একের পর এক বাণিজ্যিক চুক্তি বাতিল বা উপেক্ষা করেছেন, তখন বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনাস্থা জন্ম নিয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের মতো উদীয়মান অর্থনীতির জন্য ঝুঁকি যেমন আছে, তেমনি সুযোগও রয়েছে। বাংলাদেশের রপ্তানি এখনও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের শুল্কমুক্ত সুবিধার উপর নির্ভরশীল। তবে মার্কিন বাজারে শুল্ক দিয়েও বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, যা প্রমাণ করে যে—প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা অর্জন করছে দেশটি।

সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, শুধু বাণিজ্য নীতি দিয়ে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের কাঠামোগত সীমাবদ্ধতা-যেমন রপ্তানি পণ্যের সীমিত সমাহার ও বাজার বৈচিত্র্যের অভাব—এখন আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এই সংকটকে তাই একটি জাগরণের সুযোগ হিসেবে দেখতে হবে।

তিনি আরও বলেন, “শুধু শুল্ক হ্রাস বা বৃদ্ধির উপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত নিলে হবে না। আমাদের উচিত উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, পণ্যের বৈচিত্র্য এবং প্রযুক্তি ব্যবহার বাড়ানো। একই সঙ্গে মার্কিন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যদি কোনও প্রতিবন্ধকতা থাকে, তা দূর করতে হবে।”

বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট, ব্যাংক খাতের দুর্বলতা এবং উচ্চ সুদের হার-এই সমস্ত অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলো এখন আরও প্রকট হয়ে উঠছে। ফলে শুল্ক বৃদ্ধির চাপ শুধু বাইরের ঝুঁকি নয়, বরং দেশের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতাকেও সামনে এনে দিয়েছে।

এই অবস্থায় একটি সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ও কৌশল গ্রহণ না করলে সাময়িক আলোচনায় লাভ হবে না। শুল্ক যুদ্ধের মধ্যেই ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি নিতে না পারলে, বাংলাদেশ বড় ধরনের চাপের মুখে পড়তে পারে।


Notice: ob_end_flush(): failed to send buffer of zlib output compression (0) in /home2/checkpostcom/public_html/wp-includes/functions.php on line 5464