ঢাকা ০১:৫৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৮ মে ২০২৫, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ট্রাম্পের অভ্যর্থনায় নারীদের খোলা চুলের নৃত্যে বিতর্ক তুঙ্গে

নিজস্ব সংবাদ :

মধ্যপ্রাচ্য সফরের সময় সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দেওয়া এক রাজকীয় অভ্যর্থনা নিয়ে নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে স্থানীয় নারীদের খোলা চুলের নাচের মাধ্যমে ট্রাম্পকে স্বাগত জানানোর দৃশ্য সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

সফরটি শুরু হয় সৌদি আরব দিয়ে, যেখানে বেগুনি গালিচা ও সাদা আরব ঘোড়ার মাধ্যমে ট্রাম্পকে সম্মান জানানো হয়। কাতারে যুক্ত হয় উট, এবং গাড়িবহরে থাকে সাইবার ট্রাক, যা আধুনিক প্রযুক্তির প্রতীক হিসেবে তুলে ধরা হয়।

তবে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আয়োজন। সেখানে ঐতিহ্যবাহী সাদা পোশাকে সজ্জিত নারীরা ‘আন নিশআ’ নামক একটি লোকজ নৃত্যের মাধ্যমে ট্রাম্পকে স্বাগত জানান। খোলা চুল দুলিয়ে করা এই নাচের সময় ট্রাম্প সেই সারির মাঝ দিয়ে হেঁটে যান-এই দৃশ্যের ছবি ও ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

‘আন নিশআ’ মূলত উপসাগরীয় আরব নারীদের একটি ঐতিহ্যবাহী নৃত্য, যেখানে লম্বা চুল এক দিক থেকে আরেক দিক দুলিয়ে সুর ও ছন্দে শরীরী ভাষায় সম্মান ও সৌন্দর্য প্রকাশ করা হয়। এটিকে অনেক সময় ‘খালিজি ডান্স’-ও বলা হয়। এর শিকড় রয়েছে বেদুইন সংস্কৃতিতে, যেখানে এটি নারীদের পক্ষ থেকে পুরুষের প্রদত্ত সুরক্ষা ও নেতৃত্বের প্রতি আস্থার প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

এই নাচের আয়োজনকে ঘিরে সামাজিক মাধ্যমে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ এটিকে ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক উপস্থাপনা হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ একে ইসলামি মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মন্তব্য করছেন।

একজন লিখেছেন, “পশ্চিমা নারী নেত্রীরা এলে তাদের মাথা ঢেকে চলতে হয়, অথচ ট্রাম্প এলে খোলা মাথায় নৃত্য!”
আরেকজন মন্তব্য করেন, “এটা লজ্জাজনক যে একটি ইসলামি দেশে জনসমক্ষে এমন পারফরম্যান্স দেখানো হলো।”

এর বিপরীতে অন্য একজন লিখেছেন, “আপনারা যা দেখেছেন তা আরব ঐতিহ্য, এটি শতাব্দীপ্রাচীন সংস্কৃতি-ইসলামকে বাদ না দিয়েই টিকে আছে।”
আরেকজন বলেন, “আরবরা সবসময় শক্তিশালী নেতাদের সম্মান করে। ট্রাম্প সেই শক্তির প্রতীক বলেই এই অভ্যর্থনা।”

অনেকে এটিকে সাংস্কৃতিক আত্মপ্রকাশ হিসেবে দেখলেও, সমালোচকেরা বলছেন-এই আয়োজন আসলে একটি রাজনৈতিক চাটুকারিতা।


বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি, পশ্চিমা নেতৃত্বের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি এবং সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিত্বের জটিল আন্তঃসম্পর্ককে সামনে এনেছে।

এক কথায়, খোলা চুলের ঐতিহ্যবাহী সেই নাচ এখন হয়ে উঠেছে ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফরের সবচেয়ে আলোচিত এবং বিতর্কিত মুহূর্ত-যেখানে রাজনীতি, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় মূল্যবোধের টানাপড়েন স্পষ্ট।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

ট্যাগস :

নিউজটি টাইম লাইনে শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

চেকপোস্ট

Checkpost is one of the most popular Bengali news portal and print newspaper in Bangladesh. The print and online news portal started its operations with a commitment to fearless, investigative, informative and unbiased journalism.
আপডেট সময় ১০:৪০:১৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫
৫২৭ বার পড়া হয়েছে

ট্রাম্পের অভ্যর্থনায় নারীদের খোলা চুলের নৃত্যে বিতর্ক তুঙ্গে

আপডেট সময় ১০:৪০:১৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫

মধ্যপ্রাচ্য সফরের সময় সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দেওয়া এক রাজকীয় অভ্যর্থনা নিয়ে নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে স্থানীয় নারীদের খোলা চুলের নাচের মাধ্যমে ট্রাম্পকে স্বাগত জানানোর দৃশ্য সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

সফরটি শুরু হয় সৌদি আরব দিয়ে, যেখানে বেগুনি গালিচা ও সাদা আরব ঘোড়ার মাধ্যমে ট্রাম্পকে সম্মান জানানো হয়। কাতারে যুক্ত হয় উট, এবং গাড়িবহরে থাকে সাইবার ট্রাক, যা আধুনিক প্রযুক্তির প্রতীক হিসেবে তুলে ধরা হয়।

তবে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আয়োজন। সেখানে ঐতিহ্যবাহী সাদা পোশাকে সজ্জিত নারীরা ‘আন নিশআ’ নামক একটি লোকজ নৃত্যের মাধ্যমে ট্রাম্পকে স্বাগত জানান। খোলা চুল দুলিয়ে করা এই নাচের সময় ট্রাম্প সেই সারির মাঝ দিয়ে হেঁটে যান-এই দৃশ্যের ছবি ও ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

‘আন নিশআ’ মূলত উপসাগরীয় আরব নারীদের একটি ঐতিহ্যবাহী নৃত্য, যেখানে লম্বা চুল এক দিক থেকে আরেক দিক দুলিয়ে সুর ও ছন্দে শরীরী ভাষায় সম্মান ও সৌন্দর্য প্রকাশ করা হয়। এটিকে অনেক সময় ‘খালিজি ডান্স’-ও বলা হয়। এর শিকড় রয়েছে বেদুইন সংস্কৃতিতে, যেখানে এটি নারীদের পক্ষ থেকে পুরুষের প্রদত্ত সুরক্ষা ও নেতৃত্বের প্রতি আস্থার প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

এই নাচের আয়োজনকে ঘিরে সামাজিক মাধ্যমে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ এটিকে ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক উপস্থাপনা হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ একে ইসলামি মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মন্তব্য করছেন।

একজন লিখেছেন, “পশ্চিমা নারী নেত্রীরা এলে তাদের মাথা ঢেকে চলতে হয়, অথচ ট্রাম্প এলে খোলা মাথায় নৃত্য!”
আরেকজন মন্তব্য করেন, “এটা লজ্জাজনক যে একটি ইসলামি দেশে জনসমক্ষে এমন পারফরম্যান্স দেখানো হলো।”

এর বিপরীতে অন্য একজন লিখেছেন, “আপনারা যা দেখেছেন তা আরব ঐতিহ্য, এটি শতাব্দীপ্রাচীন সংস্কৃতি-ইসলামকে বাদ না দিয়েই টিকে আছে।”
আরেকজন বলেন, “আরবরা সবসময় শক্তিশালী নেতাদের সম্মান করে। ট্রাম্প সেই শক্তির প্রতীক বলেই এই অভ্যর্থনা।”

অনেকে এটিকে সাংস্কৃতিক আত্মপ্রকাশ হিসেবে দেখলেও, সমালোচকেরা বলছেন-এই আয়োজন আসলে একটি রাজনৈতিক চাটুকারিতা।


বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি, পশ্চিমা নেতৃত্বের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি এবং সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিত্বের জটিল আন্তঃসম্পর্ককে সামনে এনেছে।

এক কথায়, খোলা চুলের ঐতিহ্যবাহী সেই নাচ এখন হয়ে উঠেছে ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফরের সবচেয়ে আলোচিত এবং বিতর্কিত মুহূর্ত-যেখানে রাজনীতি, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় মূল্যবোধের টানাপড়েন স্পষ্ট।

সূত্র: বিবিসি বাংলা