ঢাকা ১০:২৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ৩১ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

টানা দাবদাহে খুলনার কৃষি অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব

মোঃ রবিউল হোসেন খান, খুলনা::

খুলনায় এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া টানা দাবদাহের কারণে কৃষি অর্থনীতি হুমকির মুখে পড়েছে। চলতি মে মাসেও বৃষ্টিপাত না হওয়ায় ৪ হাজার ৯১৫ হেক্টর জমির গ্রীষ্মকালীন শাকসবজির আবাদ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবারের মৌসুমে খুলনার ৯ উপজেলায় ৬ হাজার ৩৩০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও তীব্র খরায় অনেক জমিতে এখনো মাদা তৈরি করা সম্ভব হয়নি। মিষ্টি কুমড়া, লাউ, পটল, কাকরোল, ঢেঁড়সসহ গুরুত্বপূর্ণ সবজির চারা রোপণে সমস্যা দেখা দিয়েছে।

ডুমুরিয়ার বরাতিয়া এলাকার কৃষক মো. হাফিজ সরদার জানান, “দু’বার দুর থেকে পানি এনে মাদা তৈরির চেষ্টা করেছি। কিন্তু মাটি এতটাই শুকনো যে কিছুতেই মাদা টিকছে না। এখন শুধু বৃষ্টির অপেক্ষায় আছি।”

জানা গেছে, ৬ এপ্রিল থেকে ১২ মে পর্যন্ত খুলনায় উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত হয়নি। ২৯ এপ্রিল ২৩ মিমি ও ২ মে ১১.৮২ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়, যা চাষের জন্য মোটেও পর্যাপ্ত নয়। ১৩ মে খুলনার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে ৪১ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠানামা করছে।

দাবদাহের ফলে ঢেঁড়স, পটল, কাকরোল, বেগুনে এখনো ফুল আসেনি। বীজ অঙ্কুরোদগমও ব্যাহত হচ্ছে, অনেকে বীজতলা তৈরি করতে পারছেন না। কৃষিবিদ মহাদেব চন্দ্র বলেন, “এখন বৃষ্টি না হলে কাঙ্ক্ষিত ফলন আশা করা যাচ্ছে না। আউশ ধানের বীজতলা ও অন্যান্য সবজির জন্য মাটিতে জো না আসায় সমস্যায় পড়েছেন কৃষকরা।”

অন্যদিকে, শীতকালীন সবজির দাম না পেয়ে কৃষকরা আগেই লোকসানে পড়েছেন। টমেটো, ফুলকপি ও শিমের দাম ছিল উৎপাদন খরচের নিচে। ডুমুরিয়া, চুকনগর ও বরাতিয়ার কৃষকরা অনেকেই টমেটো বাজারজাত করতে রাজি হননি। এক মণ টমেটোর দাম দিয়েও কৃষি শ্রমিকের দৈনিক ৬০০ টাকার মজুরি ওঠেনি।

খুলনার প্রধান পাইকারি বাজার ট্রাক টার্মিনালে বর্তমানে সবজির সরবরাহ কম, যার প্রভাব পড়ছে বাজারদরে।

টানা খরায় খুলনার কৃষি উৎপাদন যেমন হুমকির মুখে, তেমনি কৃষকরা পড়েছেন চরম সংকটে। বৃষ্টি না হলে গ্রীষ্মকালীন সবজি উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি কৃষকদের আয়-রোজগারে বড় ধরনের ধস নামবে।

ট্যাগস :

নিউজটি টাইম লাইনে শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

চেকপোস্ট

Checkpost is one of the most popular Bengali news portal and print newspaper in Bangladesh. The print and online news portal started its operations with a commitment to fearless, investigative, informative and unbiased journalism.
আপডেট সময় ০৬:৪৮:৩২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫
৫৩১ বার পড়া হয়েছে

টানা দাবদাহে খুলনার কৃষি অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব

আপডেট সময় ০৬:৪৮:৩২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫

খুলনায় এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া টানা দাবদাহের কারণে কৃষি অর্থনীতি হুমকির মুখে পড়েছে। চলতি মে মাসেও বৃষ্টিপাত না হওয়ায় ৪ হাজার ৯১৫ হেক্টর জমির গ্রীষ্মকালীন শাকসবজির আবাদ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবারের মৌসুমে খুলনার ৯ উপজেলায় ৬ হাজার ৩৩০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও তীব্র খরায় অনেক জমিতে এখনো মাদা তৈরি করা সম্ভব হয়নি। মিষ্টি কুমড়া, লাউ, পটল, কাকরোল, ঢেঁড়সসহ গুরুত্বপূর্ণ সবজির চারা রোপণে সমস্যা দেখা দিয়েছে।

ডুমুরিয়ার বরাতিয়া এলাকার কৃষক মো. হাফিজ সরদার জানান, “দু’বার দুর থেকে পানি এনে মাদা তৈরির চেষ্টা করেছি। কিন্তু মাটি এতটাই শুকনো যে কিছুতেই মাদা টিকছে না। এখন শুধু বৃষ্টির অপেক্ষায় আছি।”

জানা গেছে, ৬ এপ্রিল থেকে ১২ মে পর্যন্ত খুলনায় উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত হয়নি। ২৯ এপ্রিল ২৩ মিমি ও ২ মে ১১.৮২ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়, যা চাষের জন্য মোটেও পর্যাপ্ত নয়। ১৩ মে খুলনার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে ৪১ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠানামা করছে।

দাবদাহের ফলে ঢেঁড়স, পটল, কাকরোল, বেগুনে এখনো ফুল আসেনি। বীজ অঙ্কুরোদগমও ব্যাহত হচ্ছে, অনেকে বীজতলা তৈরি করতে পারছেন না। কৃষিবিদ মহাদেব চন্দ্র বলেন, “এখন বৃষ্টি না হলে কাঙ্ক্ষিত ফলন আশা করা যাচ্ছে না। আউশ ধানের বীজতলা ও অন্যান্য সবজির জন্য মাটিতে জো না আসায় সমস্যায় পড়েছেন কৃষকরা।”

অন্যদিকে, শীতকালীন সবজির দাম না পেয়ে কৃষকরা আগেই লোকসানে পড়েছেন। টমেটো, ফুলকপি ও শিমের দাম ছিল উৎপাদন খরচের নিচে। ডুমুরিয়া, চুকনগর ও বরাতিয়ার কৃষকরা অনেকেই টমেটো বাজারজাত করতে রাজি হননি। এক মণ টমেটোর দাম দিয়েও কৃষি শ্রমিকের দৈনিক ৬০০ টাকার মজুরি ওঠেনি।

খুলনার প্রধান পাইকারি বাজার ট্রাক টার্মিনালে বর্তমানে সবজির সরবরাহ কম, যার প্রভাব পড়ছে বাজারদরে।

টানা খরায় খুলনার কৃষি উৎপাদন যেমন হুমকির মুখে, তেমনি কৃষকরা পড়েছেন চরম সংকটে। বৃষ্টি না হলে গ্রীষ্মকালীন সবজি উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি কৃষকদের আয়-রোজগারে বড় ধরনের ধস নামবে।