ঢাকা ০৬:২৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৪ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঘটনাবহুল মুড়াপাড়া শাহী মসজিদ

শহীদুল ইসলাম শরীফ, স্টাফ রিপোর্টার::

মুড়াপাড়া শাহী মসজিদ

নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার মুড়াপাড়া এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে অবস্থিত ঐতিহাসিক শাহী মসজিদ মোগল স্থাপত্যশৈলীর অন্যতম নিদর্শন। কারুকার্য ও নির্মাণশৈলীর অনন্য বৈশিষ্ট্য নিয়ে মসজিদটি ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।

ইতিহাস সূত্রে জানা যায়, ১৪৬৫ খ্রিস্টাব্দে গৌড়ের ইলিয়াস শাহি বংশের উত্তরাধিকার নাসির উদ্দিন মাহমুদ শাহের পুত্র রুকনউদ্দিন বরবক শাহ শীতলক্ষ্যার তীরবর্তী মুড়াপাড়া পরগনায় আসেন। তার অনুপ্রেরণায় মসজিদটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে ১৪৭৭ খ্রিস্টাব্দে বরবক শাহের পুত্র সামসুদ্দিন আবু মুজাফফর ইউসুফ শাহ মসজিদের অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করেন। মসজিদটির গঠনশৈলীতে মোগল ভাবধারার ছাপ স্পষ্ট।

বর্গাকার মসজিদটির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ ৪০ ফুট, এবং চারপাশের দেয়াল ছয় ফুট আট ইঞ্চি চওড়া। প্রাচীন ইট দিয়ে নির্মিত এই মসজিদের গম্বুজ খাঁজকাটা এবং নকশাগুলো লতাপাতার কারুকাজে সজ্জিত। মূলত সিরামিকের (স্থানীয় ভাষায় চিনামাটি) টুকরা দিয়ে গম্বুজ ও দেয়ালে দৃষ্টিনন্দন নকশা করা হয়েছে।

১৮৮৬ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে স্থানীয় জমিদার জগদীশচন্দ্র বসু মসজিদটি মাটি দিয়ে ঢেকে দেন। পরবর্তীতে এটি জঙ্গলাবৃত হয়ে যায় এবং প্রায় হারিয়ে যায়। ১৯২৫ সালে শীতলক্ষ্যার পাড়ে শমসের মিয়া নামে এক ব্যক্তি মসজিদটি পুনরাবিষ্কার করেন। এরপর মসজিদটি নিয়ে মুসলমান ও জমিদারদের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি হয়, যা একপর্যায়ে শমসের মিয়ার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে শেষ হয়।

মসজিদের ছাদে তিনটি গম্বুজ এবং বারান্দাসহ নামাজের জন্য পাঁচটি কাতারের ব্যবস্থা রয়েছে। প্রাচীন মসজিদে ৩০০ জনের নামাজ পড়ার ব্যবস্থা থাকলেও পরবর্তীতে টিনশেড বারান্দা সংযুক্ত করে স্থান সংকুলান বাড়ানো হয়। মসজিদের চারপাশে ১২টি মিনার রয়েছে। মূল ফটকটি বর্তমানে তালাবদ্ধ এবং মসজিদের উত্তর-পূর্ব কোণে শমসের মিয়া ও অন্যান্য ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বদের কবর রয়েছে।

২০১৭ সালে শমসের মিয়ার নামে একটি পাঠাগার প্রতিষ্ঠিত হয়, যা এলাকাবাসীর জন্য জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র হিসেবে কাজ করছে।

মুড়াপাড়া শাহী মসজিদ ইতিহাসের গভীর থেকে উঠে আসা একটি নিদর্শন। এটি শুধু স্থাপত্য নয়, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহাসিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ।

ট্যাগস :

নিউজটি টাইম লাইনে শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

চেকপোস্ট

Checkpost is one of the most popular Bengali news portal and print newspaper in Bangladesh. The print and online news portal started its operations with a commitment to fearless, investigative, informative and unbiased journalism.
আপডেট সময় ১২:১৮:৫৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ জানুয়ারী ২০২৫
৫৫০ বার পড়া হয়েছে

ঘটনাবহুল মুড়াপাড়া শাহী মসজিদ

আপডেট সময় ১২:১৮:৫৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ জানুয়ারী ২০২৫

নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার মুড়াপাড়া এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে অবস্থিত ঐতিহাসিক শাহী মসজিদ মোগল স্থাপত্যশৈলীর অন্যতম নিদর্শন। কারুকার্য ও নির্মাণশৈলীর অনন্য বৈশিষ্ট্য নিয়ে মসজিদটি ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।

ইতিহাস সূত্রে জানা যায়, ১৪৬৫ খ্রিস্টাব্দে গৌড়ের ইলিয়াস শাহি বংশের উত্তরাধিকার নাসির উদ্দিন মাহমুদ শাহের পুত্র রুকনউদ্দিন বরবক শাহ শীতলক্ষ্যার তীরবর্তী মুড়াপাড়া পরগনায় আসেন। তার অনুপ্রেরণায় মসজিদটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে ১৪৭৭ খ্রিস্টাব্দে বরবক শাহের পুত্র সামসুদ্দিন আবু মুজাফফর ইউসুফ শাহ মসজিদের অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করেন। মসজিদটির গঠনশৈলীতে মোগল ভাবধারার ছাপ স্পষ্ট।

বর্গাকার মসজিদটির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ ৪০ ফুট, এবং চারপাশের দেয়াল ছয় ফুট আট ইঞ্চি চওড়া। প্রাচীন ইট দিয়ে নির্মিত এই মসজিদের গম্বুজ খাঁজকাটা এবং নকশাগুলো লতাপাতার কারুকাজে সজ্জিত। মূলত সিরামিকের (স্থানীয় ভাষায় চিনামাটি) টুকরা দিয়ে গম্বুজ ও দেয়ালে দৃষ্টিনন্দন নকশা করা হয়েছে।

১৮৮৬ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে স্থানীয় জমিদার জগদীশচন্দ্র বসু মসজিদটি মাটি দিয়ে ঢেকে দেন। পরবর্তীতে এটি জঙ্গলাবৃত হয়ে যায় এবং প্রায় হারিয়ে যায়। ১৯২৫ সালে শীতলক্ষ্যার পাড়ে শমসের মিয়া নামে এক ব্যক্তি মসজিদটি পুনরাবিষ্কার করেন। এরপর মসজিদটি নিয়ে মুসলমান ও জমিদারদের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি হয়, যা একপর্যায়ে শমসের মিয়ার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে শেষ হয়।

মসজিদের ছাদে তিনটি গম্বুজ এবং বারান্দাসহ নামাজের জন্য পাঁচটি কাতারের ব্যবস্থা রয়েছে। প্রাচীন মসজিদে ৩০০ জনের নামাজ পড়ার ব্যবস্থা থাকলেও পরবর্তীতে টিনশেড বারান্দা সংযুক্ত করে স্থান সংকুলান বাড়ানো হয়। মসজিদের চারপাশে ১২টি মিনার রয়েছে। মূল ফটকটি বর্তমানে তালাবদ্ধ এবং মসজিদের উত্তর-পূর্ব কোণে শমসের মিয়া ও অন্যান্য ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বদের কবর রয়েছে।

২০১৭ সালে শমসের মিয়ার নামে একটি পাঠাগার প্রতিষ্ঠিত হয়, যা এলাকাবাসীর জন্য জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র হিসেবে কাজ করছে।

মুড়াপাড়া শাহী মসজিদ ইতিহাসের গভীর থেকে উঠে আসা একটি নিদর্শন। এটি শুধু স্থাপত্য নয়, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহাসিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ।


Notice: ob_end_flush(): failed to send buffer of zlib output compression (0) in /home2/checkpostcom/public_html/wp-includes/functions.php on line 5464