ঢাকা ০৯:৫১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ৯ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

খুলনার বদলে আগে যাবে ঢাকায় ভোলার গ্যাস

মোঃ রবিউল হোসেন খান, খুলনা::

ছবি: চেকপোস্ট

খুলনার পরিবর্তে আগে ঢাকায় যাবে ভোলার গ্যাস। ভোলা-বরিশাল-খুলনা গ্যাস পাইপলাইনের রুট পরিবর্তন করে ভোলা-বরিশাল-ঢাকা পাইপলাইন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পেট্রোবাংলা। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান রেজানুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বরিশাল-খুলনা পাইপলাইনও নির্মাণ করা হবে, তবে প্রথম ধাপে ভোলা-বরিশাল-ঢাকা পাইপলাইন নির্মাণের পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়েছে।

ভোলা-বরিশাল পাইপলাইনের সম্ভাব্যতা যাচাই শেষ হয়েছে এবং বরিশাল-ঢাকা পাইপলাইনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য গত ৫ মার্চ ফাইল অনুমোদন করা হয়েছে। সিলেট অঞ্চলের পর দ্বীপ জেলা ভোলায় গ্যাসের বিশাল মজুদ রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এখন পর্যন্ত যতগুলো কূপ খনন করা হয়েছে, তার প্রতিটিতেই গ্যাসের উপস্থিতি নিশ্চিত হয়েছে। ভোলা ইস্ট থেকে ভোলা নর্থ পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার এলাকায় গ্যাস পাওয়া গেছে। এছাড়া হাতিয়া ট্রাপ, মুলাদি, বেগমগঞ্জ, সুন্দলপুর, ভোলা ও সাঙ্গু অঞ্চলেও গ্যাসের মজুদ রয়েছে। বিবিয়ানার পর এটি দেশের অন্যতম বৃহৎ গ্যাস রিজার্ভ হতে যাচ্ছে।

ভোলায় ইতোমধ্যে দুটি গ্যাসফিল্ড আবিষ্কৃত হয়েছে, যেখানে প্রায় ৮ টিসিএফ (ট্রিলিয়ন ঘনফুট) গ্যাসের মজুদ আছে বলে আশা করা হচ্ছে। দুটি গ্যাসফিল্ডে ৯টি কূপ খনন করা হয়েছে, যার মধ্যে ৫টি কূপ থেকে দৈনিক ১৩৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ সম্ভব। বাকি ৪টির মধ্যে ১টির পাইপলাইন প্রস্তুত এবং ৩টি প্রসেস প্লান্ট নির্মাণাধীন রয়েছে। ভোলা এলাকায় গ্যাসের চাহিদা কম থাকায় বর্তমানে দৈনিক মাত্র ৮০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে, তবে পাইপলাইন না থাকায় জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা যাচ্ছে না।

বিগত সরকার সিএনজি আকারে ৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পরিবহনের জন্য একটি কোম্পানিকে অনুমোদন দেয়, যা গাজীপুরের কিছু কারখানায় গ্যাস সরবরাহ করেছে। বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এলএনজি আকারে দৈনিক ৮০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পরিবহনের উদ্যোগ নিয়েছে, যা ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে সরবরাহ শুরু হবে বলে নিশ্চিত করেছেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। তবে অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটি কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

ভোলা থেকে খুলনায় গ্যাস সরবরাহ করতে ১৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইন নির্মাণ করতে হবে, যার জন্য প্রায় ৭ থেকে ৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে। ২০০৪ সালে এই প্রকল্পের জন্য এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) অর্থায়নের নিশ্চয়তা চেয়েছিল, যা না পাওয়ায় প্রকল্পটি স্থগিত হয়ে যায়। অন্যদিকে, বর্তমানে ১ কার্গো এলএনজি আমদানিতে ৬৪৯ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে, যা দেশের এক দিনের চাহিদার সমান (৩,০০০ মিলিয়ন ঘনফুট)।

বর্তমানে দেশের গ্যাস উৎপাদন কমে এসেছে। একসময় দৈনিক ২,৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন করা হলেও এখন তা কমে ১,৯০০ মিলিয়ন ঘনফুটে নেমে এসেছে। সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হলো, দেশের বৃহত্তম গ্যাসক্ষেত্র বিবিয়ানার মজুদ দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। একসময় বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রে দৈনিক ১,৩৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন হতো, কিন্তু ৪ মার্চ তা কমে মাত্র ৯৪৫ মিলিয়ন ঘনফুট হয়েছে। অনুমান করা হচ্ছে, ২০২৬ সালের মধ্যে বিবিয়ানার মজুদ শেষ হয়ে যেতে পারে, যা রাজধানীসহ শিল্পাঞ্চলে মারাত্মক সংকট সৃষ্টি করবে।

ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, টঙ্গীসহ আশপাশের শিল্পাঞ্চলে বর্তমানে গ্যাস সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। বিবিয়ানার উৎপাদন কমে গেলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠবে। তাই শিল্পকারখানায় গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে পরিকল্পনা পরিবর্তন করে বরিশাল-ঢাকাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।

গ্যাস সংকটের অন্যতম কারণ অনুসন্ধান কার্যক্রমের স্থবিরতা। গত ১১৩ বছরে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে মাত্র ৯৯টি অনুসন্ধান কূপ খনন করা হয়েছে, যার মধ্যে ২৯টি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। তুলনামূলকভাবে, যুক্তরাষ্ট্র প্রতি ১৪ বর্গকিলোমিটারে একটি এবং ভারত প্রতি ১৮.৬ বর্গকিলোমিটারে একটি অনুসন্ধান কূপ খনন করে। বাংলাদেশে গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম আরও সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

ট্যাগস :

নিউজটি টাইম লাইনে শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

চেকপোস্ট

Checkpost is one of the most popular Bengali news portal and print newspaper in Bangladesh. The print and online news portal started its operations with a commitment to fearless, investigative, informative and unbiased journalism.
আপডেট সময় ০৮:৫৫:৫২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ মার্চ ২০২৫
৫৩০ বার পড়া হয়েছে

খুলনার বদলে আগে যাবে ঢাকায় ভোলার গ্যাস

আপডেট সময় ০৮:৫৫:৫২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ মার্চ ২০২৫

খুলনার পরিবর্তে আগে ঢাকায় যাবে ভোলার গ্যাস। ভোলা-বরিশাল-খুলনা গ্যাস পাইপলাইনের রুট পরিবর্তন করে ভোলা-বরিশাল-ঢাকা পাইপলাইন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পেট্রোবাংলা। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান রেজানুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বরিশাল-খুলনা পাইপলাইনও নির্মাণ করা হবে, তবে প্রথম ধাপে ভোলা-বরিশাল-ঢাকা পাইপলাইন নির্মাণের পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়েছে।

ভোলা-বরিশাল পাইপলাইনের সম্ভাব্যতা যাচাই শেষ হয়েছে এবং বরিশাল-ঢাকা পাইপলাইনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য গত ৫ মার্চ ফাইল অনুমোদন করা হয়েছে। সিলেট অঞ্চলের পর দ্বীপ জেলা ভোলায় গ্যাসের বিশাল মজুদ রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এখন পর্যন্ত যতগুলো কূপ খনন করা হয়েছে, তার প্রতিটিতেই গ্যাসের উপস্থিতি নিশ্চিত হয়েছে। ভোলা ইস্ট থেকে ভোলা নর্থ পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার এলাকায় গ্যাস পাওয়া গেছে। এছাড়া হাতিয়া ট্রাপ, মুলাদি, বেগমগঞ্জ, সুন্দলপুর, ভোলা ও সাঙ্গু অঞ্চলেও গ্যাসের মজুদ রয়েছে। বিবিয়ানার পর এটি দেশের অন্যতম বৃহৎ গ্যাস রিজার্ভ হতে যাচ্ছে।

ভোলায় ইতোমধ্যে দুটি গ্যাসফিল্ড আবিষ্কৃত হয়েছে, যেখানে প্রায় ৮ টিসিএফ (ট্রিলিয়ন ঘনফুট) গ্যাসের মজুদ আছে বলে আশা করা হচ্ছে। দুটি গ্যাসফিল্ডে ৯টি কূপ খনন করা হয়েছে, যার মধ্যে ৫টি কূপ থেকে দৈনিক ১৩৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ সম্ভব। বাকি ৪টির মধ্যে ১টির পাইপলাইন প্রস্তুত এবং ৩টি প্রসেস প্লান্ট নির্মাণাধীন রয়েছে। ভোলা এলাকায় গ্যাসের চাহিদা কম থাকায় বর্তমানে দৈনিক মাত্র ৮০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে, তবে পাইপলাইন না থাকায় জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা যাচ্ছে না।

বিগত সরকার সিএনজি আকারে ৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পরিবহনের জন্য একটি কোম্পানিকে অনুমোদন দেয়, যা গাজীপুরের কিছু কারখানায় গ্যাস সরবরাহ করেছে। বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এলএনজি আকারে দৈনিক ৮০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পরিবহনের উদ্যোগ নিয়েছে, যা ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে সরবরাহ শুরু হবে বলে নিশ্চিত করেছেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। তবে অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটি কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

ভোলা থেকে খুলনায় গ্যাস সরবরাহ করতে ১৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইন নির্মাণ করতে হবে, যার জন্য প্রায় ৭ থেকে ৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে। ২০০৪ সালে এই প্রকল্পের জন্য এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) অর্থায়নের নিশ্চয়তা চেয়েছিল, যা না পাওয়ায় প্রকল্পটি স্থগিত হয়ে যায়। অন্যদিকে, বর্তমানে ১ কার্গো এলএনজি আমদানিতে ৬৪৯ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে, যা দেশের এক দিনের চাহিদার সমান (৩,০০০ মিলিয়ন ঘনফুট)।

বর্তমানে দেশের গ্যাস উৎপাদন কমে এসেছে। একসময় দৈনিক ২,৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন করা হলেও এখন তা কমে ১,৯০০ মিলিয়ন ঘনফুটে নেমে এসেছে। সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হলো, দেশের বৃহত্তম গ্যাসক্ষেত্র বিবিয়ানার মজুদ দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। একসময় বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রে দৈনিক ১,৩৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন হতো, কিন্তু ৪ মার্চ তা কমে মাত্র ৯৪৫ মিলিয়ন ঘনফুট হয়েছে। অনুমান করা হচ্ছে, ২০২৬ সালের মধ্যে বিবিয়ানার মজুদ শেষ হয়ে যেতে পারে, যা রাজধানীসহ শিল্পাঞ্চলে মারাত্মক সংকট সৃষ্টি করবে।

ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, টঙ্গীসহ আশপাশের শিল্পাঞ্চলে বর্তমানে গ্যাস সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। বিবিয়ানার উৎপাদন কমে গেলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠবে। তাই শিল্পকারখানায় গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে পরিকল্পনা পরিবর্তন করে বরিশাল-ঢাকাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।

গ্যাস সংকটের অন্যতম কারণ অনুসন্ধান কার্যক্রমের স্থবিরতা। গত ১১৩ বছরে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে মাত্র ৯৯টি অনুসন্ধান কূপ খনন করা হয়েছে, যার মধ্যে ২৯টি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। তুলনামূলকভাবে, যুক্তরাষ্ট্র প্রতি ১৪ বর্গকিলোমিটারে একটি এবং ভারত প্রতি ১৮.৬ বর্গকিলোমিটারে একটি অনুসন্ধান কূপ খনন করে। বাংলাদেশে গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম আরও সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।