খুলনায় ৪৮ ঘণ্টায় ৩ খুন, ১ জন গুলিবিদ্ধ: আতঙ্কে নগরবাসী
খুলনায় মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় ঘটে গেছে তিনটি খুন এবং এক ব্যক্তিকে গুলিবিদ্ধ করার ঘটনা। প্রতিটি ঘটনায় মোটিভ স্পষ্ট হলেও হত্যাকারীরা এখনো ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। এতে করে নগরজুড়ে নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে, নাগরিকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে নিরাপত্তাহীনতা।
গত ১ আগস্ট রাত ১১টার দিকে সোনাডাঙ্গা থানার সবুজবাগ এলাকায় নিজ বাড়িতে ছুরিকাঘাতে খুন হন মনোয়ার হোসেন টগর (৩২)। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঘটনার দিন রাতে তিনটি মোটরসাইকেলে করে আসা সাতজন সন্ত্রাসী টগরের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলার পর তাকে বুকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। টগরের বাবা জামাল হাওলাদার বাদী হয়ে সাতজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ৪-৫ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন।
সোনাডাঙ্গা থানার ওসি শফিকুল ইসলাম জানান, টগর একসময় শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রেনেড বাবুর ‘বি কোম্পানি’র সদস্য ছিলেন এবং পরে পলাশ-কালা লাভলুর গ্রুপে যোগ দেন। মাদক ব্যবসার পাওনা টাকা পরিশোধ না করায় এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে পুলিশের ধারণা।
একই রাতে খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার বারাকপুর গ্রামে খুন হন ভ্যানচালক আলামিন সিকদার (২৮)। ওসি এইচ এম শাহীন জানান, নিহত আলামিন তার স্ত্রীর (রিপা বেগম) দ্বিতীয় স্বামী ছিলেন। রিপার প্রথম স্বামী আসাদুলের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে আলামিনকে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়। আসাদুল ঘটনার পর থেকে পলাতক। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে।
রোববার (৩ আগস্ট) রাত পৌনে ৮টার দিকে নগরীর ২ নম্বর কাস্টমঘাট এলাকায় সেলুনের সামনে গুলি করা হয় যুবক সোহেলকে। চারটি মোটরসাইকেলে করে আসা মুখোশধারী সন্ত্রাসীরা গুলি ছোড়ে। একটি গুলি সোহেলের পেটে বিদ্ধ হয়। আহত অবস্থায় তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
কেএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মো. আবু তারেক জানান, এ ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি। সন্ত্রাসীদের শনাক্তে অভিযান চলছে।
রোববার রাতেই দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশা উত্তর বনিকপাড়া এলাকায় মোটরসাইকেলে চলন্ত অবস্থায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলা কেটে হত্যা করা হয় ঘের ব্যবসায়ী আলামিন হোসেনকে। নিহতের ভাই আওলাদ হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে থানায় মামলা করেছেন।
ওসি মীর আতাহার আলী বলেন, ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ক্যামেরা অকার্যকর থাকায় হত্যাকারীদের শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। নিহত আলামিন আগে ইজিবাইক চালাতেন, সম্প্রতি একটি মাছের ঘের নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিলেন।
টানা কয়েকটি খুন ও হামলার ঘটনায় খুলনার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন নগরবাসী। খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর অনেক চিহ্নিত সন্ত্রাসী জেল থেকে বের হয়ে পুনরায় অপরাধে জড়িয়েছে। পুলিশের মনোবল ও কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়েছে, যা তাদের দায়িত্ব পালনে বাধা সৃষ্টি করছে।
অপরদিকে কেএমপির সহকারী পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) খন্দকার মোশতাক হোসেন আহমেদ বলেন, “এসব হত্যাকাণ্ড টার্গেট কিলিং। এসব নিয়ন্ত্রণে পুলিশের একার পক্ষে সব সময় সম্ভব নয়। আদালতের নমনীয়তার কারণে সন্ত্রাসীরা জামিনে বেরিয়ে আবার অপরাধে জড়াচ্ছে। বিচারব্যবস্থা কঠোর হলে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ সহজ হতো।”