ঢাকা ০৭:১১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ৮ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

খুলনায় একসাথে ২৪ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান পলাতক, সেবা পেতে ভোগান্তিতে লাখো মানুষ

মোঃ রবিউল হোসেন খান, খুলনা::

ছবি: চেকপোস্ট

আওয়ালীগ সরকারের পতনের পর থেকে খুলনার ৯ উপজেলার অন্তত ২৪ ইউপি চেয়ারম্যান চলে গেছেন আত্মাগোপনে। কারাগারে রয়েছেন ৪ জন।এসব ইউনিয়নের কোথাও সরকারী কর্মকর্তা আবার কোথাও প্যানেল চেয়ারম্যানকে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে তারা ঠিক মতো সময় দিতে পারছেন না।ফলে বিভিন্ন সেবা পেতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে কয়েক লাখ মানুষকে।

গত ৫ আগষ্টের পর থেকে লুকিয়ে আছেন ডুমুরিয়ার রুদাঘরা ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের দরপ্ত সম্পাদক গাজী তৌহিদুল ইসলাম। তার বিরুদ্ধে ধর্ষনে সহযোগীতা ও অপহরণ মামলা রয়েছে। এই ইউনিয়ন পরিষদের একাধিক সদস্য জানান, চেয়ারম্যান তৌহিদ ইউনিয়ন পরিষদে আসেন না। আত্মগোপনে থেকে পরিষদের থেকে পরিষদের বিভিন্ন কাগজপত্রে সই করেন।উপজেলা সমন্বয় কমিটির সভায়ও যান না তিনি।

স্থানীয় বাসিন্দারা পরিষদে সপ্তাহের পর সপ্তাহ ঘুরেও কাংখিত সেবা পাচ্ছেন না। বিশেষ করে জন্ম নিবন্ধন সহ অন্যান্য সনদ নিতে না পেরে ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা। লুকিয়ে আছেন উপজেলার ভান্ডার পাড়া ইউপি চেয়ারম্যান স্থানীয় আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গোপাল চন্দ্র দে। তার বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগে মামলা রয়েছে। প্যানেল চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন কবিরাজ কোনো রকম পরিষদের কার্যক্রম চালিয়ে নিচ্ছেন।

এ ব্যাপারে মোবাইল ফোনে চেয়ারম্যান গোপাল চন্দ্র দে জানান, স্থানীয় বিএনপি লোকজনের হুমকি ধামকির কারনে তিনি ইউনিয়ন পরিষদে যেতে পারছেন না। ডুমুরিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মাদ আল আমিন বলেন, দুজন চেয়ারম্যান অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ পরিচালকে জানানো হয়েছে। দাকোপ উপজেলার কৈলাশগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মিহির রঞ্জন মন্ডল আত্মগোপনে রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে হত্যা সহ ৫ টি মামলা,রয়েছে। শুরুতে সহকারী কমিশনার ( ভুমি) মো: জাহাঙ্গীর জুবায়েরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

পরে গত ২৯ জানুয়ারি দায়িত্ব দেওয়া হয় প্রানী সম্পদ কর্মকর্তা ডা: বংকিম হালদারকে। কয়রার দক্ষিন বেদকাশী ইউপি চেয়ারম্যান আছের আলী মোড়ল পলাতক থাকায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সেবাগ্রহীতাদের। প্রায় ২৯ হাজার মানুষের বাস এ ইউনিয়নটিতে। ইউপি সচিব সঞ্জয় মন্ডল জানান, চেয়ারম্যান পলাতক থাকায় সহকারী কমিশনার ( ভুমি) প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়।পরে তিনি বদলি হওয়ায় দায়িত্ব পান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। তবে তিনি উপজেলার প্রশাসনিক কাজে ব্যাস্ত থাকায় নিয়মিত ইউনিয়ন পরিষদে সময় দিতে পারছেন না। ফলে সব কাজে স্থবীরতা দেখা দিয়েছে।

ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের কোহিনূর আলম বলেন, জন্ম নিবন্ধন, প্রত্যয়ন পত্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ সেবা,দিতে না পারায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে মানুষকে। এছাড়া গ্রাম আদালতের কার্যক্রম না চলায় আইন শৃংখলা পরিস্থিতিও দিন দিন খারাপের যাচ্ছে।কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুলী বিশ্বাস বলেন, বিভিন্ন সরকারী কাজে ব্যাস্ত থাকায় নিয়মিত ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্ব পালন করা কঠিন। বিকপ্ল হিসেবে উপজেলা প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া যায় কিনা সেবিষয়ে ভাবা হচ্ছে।

এছাড়া বটিয়াঘাটার জলমা ইউপি চেয়ারম্যান বিধান রায়, সুর খালির জাকির হোসেন লিটু, ভান্ডারপাড়ার ওবায়দুল হক, আমিরপুরের জিএম মিলন ও বালিয়াডাঙার আসাফুর রহমান আত্মগোপনে রয়েছেন।রুপসার ৫ চেয়ারম্যান সকলেই আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত।

৫ আগষ্টের পর থেকে তারা পলাতক।আইচগাতি ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুজ্জামান বাবুলের জায়গায় ইউপি সদস্য মাসুম বিল্লাহ, শ্রীফলা ইউপি চেয়ারম্যান ইসহাক সরদারের জায়গায় ইউপি সদস্য জিয়াউল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া দিয়েছে প্রশাসন।

নৈহাটি ইউপি চেয়ারম্যান কামাল হোসেন বুলবুলের জায়গায় ইউপি সদস্য ইলিয়াছ শেখ, টিএসবি ইউনিয়ন পরিষদের মো: জাহাঙ্গীর শেখের বদলে ইউপি সদস্য আসাফুর রহমান, ঘাটভোগ ইউপি চেয়ারম্যান মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামান মিজানের জায়গায় ইউপি সদস্য আজিজুল ইসলাম নন্দুকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তেরখাদা উপজেলার আজগড়া ইউপি চেয়ারম্যান কৃঞ্চ মেনন রায়, বারাসাতের কেএম আলমগীর হোসেন, ছাগলদাহের দীন ইসলাম, ছাচিয়াদাহের বুলবুল আহমেদ ও মধুপুরের শেখ মো: মহসীন পলাতক রয়েছেন।কারাগারে রয়েছেন তেরখাদা সদর ইউপি চেয়ারম্যান এফ এম ওয়াহিদুজ্জামান।

দিঘলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান জিয়া গাজী, গাজীর হাটের ঠান্ডা মোল্লা, বারাকপুরের পাভেল গাজী, যোগীপোলের সাজ্জাদুর রহমান লিংকন পলাতক রয়েছেন।ফুলতলার আটরা গিলাতলার চেয়ারম্যান শেখ মনিরুল ইসলাম আত্মগোপনে রয়েছেন।পাইকগাছার গদাইপুরের চেয়ারম্যান শেখ জিয়াদুল ইসলাম, কপিলমুনির চেয়ারম্যান কওসার আলী জোয়াদ্দার ও লতার কাজল কান্তি বিশ্বাস কারাগারে রয়েছেন। সোলাদানার চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান গাজী, চাদখালির শাহাজাদা মো: আবু ইলিয়াস ও লস্করের কে এম আরিফুজ্জামান তুহিন আত্মগোপনে রয়েছেন।

ট্যাগস :

নিউজটি টাইম লাইনে শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

চেকপোস্ট

Checkpost is one of the most popular Bengali news portal and print newspaper in Bangladesh. The print and online news portal started its operations with a commitment to fearless, investigative, informative and unbiased journalism.
আপডেট সময় ১০:১১:৪৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
৫৪৫ বার পড়া হয়েছে

খুলনায় একসাথে ২৪ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান পলাতক, সেবা পেতে ভোগান্তিতে লাখো মানুষ

আপডেট সময় ১০:১১:৪৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

আওয়ালীগ সরকারের পতনের পর থেকে খুলনার ৯ উপজেলার অন্তত ২৪ ইউপি চেয়ারম্যান চলে গেছেন আত্মাগোপনে। কারাগারে রয়েছেন ৪ জন।এসব ইউনিয়নের কোথাও সরকারী কর্মকর্তা আবার কোথাও প্যানেল চেয়ারম্যানকে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে তারা ঠিক মতো সময় দিতে পারছেন না।ফলে বিভিন্ন সেবা পেতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে কয়েক লাখ মানুষকে।

গত ৫ আগষ্টের পর থেকে লুকিয়ে আছেন ডুমুরিয়ার রুদাঘরা ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের দরপ্ত সম্পাদক গাজী তৌহিদুল ইসলাম। তার বিরুদ্ধে ধর্ষনে সহযোগীতা ও অপহরণ মামলা রয়েছে। এই ইউনিয়ন পরিষদের একাধিক সদস্য জানান, চেয়ারম্যান তৌহিদ ইউনিয়ন পরিষদে আসেন না। আত্মগোপনে থেকে পরিষদের থেকে পরিষদের বিভিন্ন কাগজপত্রে সই করেন।উপজেলা সমন্বয় কমিটির সভায়ও যান না তিনি।

স্থানীয় বাসিন্দারা পরিষদে সপ্তাহের পর সপ্তাহ ঘুরেও কাংখিত সেবা পাচ্ছেন না। বিশেষ করে জন্ম নিবন্ধন সহ অন্যান্য সনদ নিতে না পেরে ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা। লুকিয়ে আছেন উপজেলার ভান্ডার পাড়া ইউপি চেয়ারম্যান স্থানীয় আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গোপাল চন্দ্র দে। তার বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগে মামলা রয়েছে। প্যানেল চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন কবিরাজ কোনো রকম পরিষদের কার্যক্রম চালিয়ে নিচ্ছেন।

এ ব্যাপারে মোবাইল ফোনে চেয়ারম্যান গোপাল চন্দ্র দে জানান, স্থানীয় বিএনপি লোকজনের হুমকি ধামকির কারনে তিনি ইউনিয়ন পরিষদে যেতে পারছেন না। ডুমুরিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মাদ আল আমিন বলেন, দুজন চেয়ারম্যান অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ পরিচালকে জানানো হয়েছে। দাকোপ উপজেলার কৈলাশগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মিহির রঞ্জন মন্ডল আত্মগোপনে রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে হত্যা সহ ৫ টি মামলা,রয়েছে। শুরুতে সহকারী কমিশনার ( ভুমি) মো: জাহাঙ্গীর জুবায়েরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

পরে গত ২৯ জানুয়ারি দায়িত্ব দেওয়া হয় প্রানী সম্পদ কর্মকর্তা ডা: বংকিম হালদারকে। কয়রার দক্ষিন বেদকাশী ইউপি চেয়ারম্যান আছের আলী মোড়ল পলাতক থাকায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সেবাগ্রহীতাদের। প্রায় ২৯ হাজার মানুষের বাস এ ইউনিয়নটিতে। ইউপি সচিব সঞ্জয় মন্ডল জানান, চেয়ারম্যান পলাতক থাকায় সহকারী কমিশনার ( ভুমি) প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়।পরে তিনি বদলি হওয়ায় দায়িত্ব পান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। তবে তিনি উপজেলার প্রশাসনিক কাজে ব্যাস্ত থাকায় নিয়মিত ইউনিয়ন পরিষদে সময় দিতে পারছেন না। ফলে সব কাজে স্থবীরতা দেখা দিয়েছে।

ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের কোহিনূর আলম বলেন, জন্ম নিবন্ধন, প্রত্যয়ন পত্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ সেবা,দিতে না পারায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে মানুষকে। এছাড়া গ্রাম আদালতের কার্যক্রম না চলায় আইন শৃংখলা পরিস্থিতিও দিন দিন খারাপের যাচ্ছে।কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুলী বিশ্বাস বলেন, বিভিন্ন সরকারী কাজে ব্যাস্ত থাকায় নিয়মিত ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্ব পালন করা কঠিন। বিকপ্ল হিসেবে উপজেলা প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া যায় কিনা সেবিষয়ে ভাবা হচ্ছে।

এছাড়া বটিয়াঘাটার জলমা ইউপি চেয়ারম্যান বিধান রায়, সুর খালির জাকির হোসেন লিটু, ভান্ডারপাড়ার ওবায়দুল হক, আমিরপুরের জিএম মিলন ও বালিয়াডাঙার আসাফুর রহমান আত্মগোপনে রয়েছেন।রুপসার ৫ চেয়ারম্যান সকলেই আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত।

৫ আগষ্টের পর থেকে তারা পলাতক।আইচগাতি ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুজ্জামান বাবুলের জায়গায় ইউপি সদস্য মাসুম বিল্লাহ, শ্রীফলা ইউপি চেয়ারম্যান ইসহাক সরদারের জায়গায় ইউপি সদস্য জিয়াউল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া দিয়েছে প্রশাসন।

নৈহাটি ইউপি চেয়ারম্যান কামাল হোসেন বুলবুলের জায়গায় ইউপি সদস্য ইলিয়াছ শেখ, টিএসবি ইউনিয়ন পরিষদের মো: জাহাঙ্গীর শেখের বদলে ইউপি সদস্য আসাফুর রহমান, ঘাটভোগ ইউপি চেয়ারম্যান মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামান মিজানের জায়গায় ইউপি সদস্য আজিজুল ইসলাম নন্দুকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তেরখাদা উপজেলার আজগড়া ইউপি চেয়ারম্যান কৃঞ্চ মেনন রায়, বারাসাতের কেএম আলমগীর হোসেন, ছাগলদাহের দীন ইসলাম, ছাচিয়াদাহের বুলবুল আহমেদ ও মধুপুরের শেখ মো: মহসীন পলাতক রয়েছেন।কারাগারে রয়েছেন তেরখাদা সদর ইউপি চেয়ারম্যান এফ এম ওয়াহিদুজ্জামান।

দিঘলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান জিয়া গাজী, গাজীর হাটের ঠান্ডা মোল্লা, বারাকপুরের পাভেল গাজী, যোগীপোলের সাজ্জাদুর রহমান লিংকন পলাতক রয়েছেন।ফুলতলার আটরা গিলাতলার চেয়ারম্যান শেখ মনিরুল ইসলাম আত্মগোপনে রয়েছেন।পাইকগাছার গদাইপুরের চেয়ারম্যান শেখ জিয়াদুল ইসলাম, কপিলমুনির চেয়ারম্যান কওসার আলী জোয়াদ্দার ও লতার কাজল কান্তি বিশ্বাস কারাগারে রয়েছেন। সোলাদানার চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান গাজী, চাদখালির শাহাজাদা মো: আবু ইলিয়াস ও লস্করের কে এম আরিফুজ্জামান তুহিন আত্মগোপনে রয়েছেন।