কুয়েটে ছাত্রদলের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, আহত ৩০
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার দুপুরে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়। সংঘর্ষে অন্তত ৩০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। আহতদের কুয়েট মেডিকেল সেন্টারসহ আশপাশের বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে কুয়েটের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকে অবস্থান নিয়েছেন, আর ছাত্রদল ও বিএনপি নেতাকর্মীরা সংলগ্ন সড়কে অবস্থান করছেন। পুরো এলাকা ঘিরে রেখেছে সেনা, নৌবাহিনী, র্যাব ও পুলিশ সদস্যরা।
গত কয়েকদিন ধরে কুয়েটের বিভিন্ন ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে ছাত্রদলের কমিটি গঠন নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। সোমবার ক্যাম্পাসে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা লিফলেট বিতরণ করলে উত্তেজনা আরও বাড়ে। মঙ্গলবার সকালে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। বেলা ১২টার দিকে তারা উপাচার্যের কার্যালয় ঘেরাও করলে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। এক পর্যায়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা একত্র হয়ে “ছাত্র রাজনীতি মুক্ত ক্যাম্পাস চাই” স্লোগান দিতে থাকে।
মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্র হল প্রদক্ষিণ শেষে কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সামনে এলে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা “ভুয়া ভুয়া” স্লোগান দিলে উত্তেজনা চরমে পৌঁছে যায়। একপর্যায়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়, যা ক্যাম্পাসের বাইরে পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। দুপুর ২টার দিকে কুয়েট পকেট গেটের বাইরে বিএনপি সমর্থিত বহিরাগতরা এক শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে ক্যাম্পাসের ভেতরে ফেলে দেয়। এর ফলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা একত্র হয়ে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের ধাওয়া দেয়। সংঘর্ষ বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলে।
সংঘর্ষে অন্তত ৩০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। কুয়েটের অ্যাম্বুলেন্সে আহতদের একের পর এক হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেখা গেছে। শিক্ষার্থী রাহাতুল ইসলাম বলেন, “আমরা ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবি নিয়ে উপাচার্যের কাছে গেলে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা আমাদের হুমকি দেয়। সিনিয়রদের লাঞ্ছিত করে। পরে তারা আমাদের ওপর হামলা চালায়।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন খুলনা জেলা কমিটির মুখপাত্র মিরাজুল ইসলাম ইমন বলেন, “ছাত্রদল কর্মীরা বিনা উসকানিতে আমাদের ভাইদের রামদা দিয়ে কুপিয়েছে, ইট দিয়ে পা থেঁতলে দিয়েছে। আমাদের অসংখ্য সদস্য আহত হয়েছেন।”
অন্যদিকে খুলনা মহানগর ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক ইসতিয়াক আহমেদ ইশতি দাবি করেন, “ছাত্র শিবির সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালালে ছাত্রদল বাধা দেয়। পরে উভয়পক্ষ ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় জড়িয়ে পড়ে।”
তবে মহানগর ছাত্রশিবিরের সভাপতি আরাফাত হোসাইন মিলন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “কুয়েটের ঘটনার সঙ্গে ছাত্র শিবিরের কোনো সম্পর্ক নেই। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রদল ও বিএনপি নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়েছে বলে শুনেছি। আমরা এর নিন্দা জানাই এবং জড়িতদের বিচার দাবি করছি।”
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার নাজমুল হাসান রাজিব বলেন, “সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, পুলিশ, র্যাব একযোগে কাজ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে।” খানজাহানআলী থানার ওসি মো. কবির হোসেন জানান, “ঘটনাস্থল থেকে ৫ জনকে আটক করা হয়েছে।”
বর্তমানে কুয়েট ক্যাম্পাসে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তার দাবি জানাচ্ছেন এবং ছাত্র রাজনীতি বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। কুয়েট প্রশাসন এখনো এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেনি। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ক্যাম্পাস ও সংলগ্ন এলাকায় টহল দিচ্ছে।